শিরোনাম
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য ও বাস্তবতার মিল-অমিল
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২০, ২১:০৩
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য ও বাস্তবতার মিল-অমিল
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের যে বিশেষ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে, কেবলমাত্র সেই ওয়ার্ডেই গত চার দিনে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।


আর এ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর একদিকে যেমন অনেকের মধ্যে বেশ উদ্বেগ-আতঙ্ক তৈরি করেছে, তেমনি কিছু প্রশ্নকেও সামনে নিয়ে এসেছে।


এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন যে বুলেটিন প্রকাশ করছে, তার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যের বেশ গরমিল পাওয়া যাচ্ছে।


স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ২ মে থেকে ৫ই মে পর্যন্ত এই চার দিনে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রোগ কোভিড ১৯ -এ মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। অথচ এই চার দিনে কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের।


বাংলাদেশে সরকার যে কয়টি হাসপাতালকে বিশেষ কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করেছে, তাতে অন্যতম সংযোজন হলো ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই করোনা ইউনিট। এসব হাসপাতাল এবং এর বাইরেও করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে অনেকের মৃত্যু খবরও এখন পাওয়া যাচ্ছে।


সংবাদের ভিত্তিতে গবেষণা


বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের উপর ভিত্তি করে সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ৮ই মার্চ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ৩৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, গবেষক, ফ্রিল্যান্সার এবং কম্পিউটার ডেভেলপারদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল এই গবেষণা পরিচালনা করছে।


গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে প্রায় ২৫০ জনের মধ্যেই জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং সর্দি- এর চারটি লক্ষণের মধ্যে অন্তত দু'টি লক্ষণ ছিল। এছাড়া অন্যদের মধ্যে গলা-ব্যথা, ঠাণ্ডা, বুকে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ ছিল।


তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া হিসেব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে গত ৮ই মার্চ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত ১৬৮ জন মারা গেছেন।


ফলে এমন প্রশ্নও উঠেছে যে স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে চিত্র তুলে ধরছে, সেটির সঙ্গে বাস্তবতার আসলে ঠিক কতটা মিল রয়েছে।


জ্বর-কাশি মানেই করোনাভাইরাস না


স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তার ভিত্তিতেই তারা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করেন।


তিনি বলেন, শুধু লক্ষণ-উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেই আমরা বলতে পারি না যে সে ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। এমন দেখা গেছে যে মৃত্যুর পর কোভিড রোগী হিসেবে দাফন করা হয়েছে, কিন্তু পরবর্তীতে পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।


তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন গড়ে ২,০০০ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।এই রোগের লক্ষণও কোভিড-১৯ উপসর্গের মতো।


তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে কিংবা পরে পরীক্ষার মাধ্যমে যখন একজন ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যায়, তখনই সেই তথ্য বুলেটিনে আপডেট করা হয়।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, গত ২ মে থেকে শুরু করে চার দিনে করোনা বিশেষায়িত ওয়ার্ডে যে ২৮ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে চারজনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। তবে মৃতদের মধ্যে বাকি ২৪ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছিল কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


তিনি বলেন, চারজন পজিটিভ পাওয়া গেছে। বাকি যারা আছেন, তাদের মাল্টিপল কো-মরবিড কন্ডিশন (অন্যান্য রোগ) ছিল। ম্যাক্সিমাম (বেশীরভাগ রোগী) শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছে, জ্বরও ছিল।


ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, মৃতদের সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি-না, সেটি তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।


যেহেতু বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আছে, সেজন্য মৃত ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি কেন? - এমন প্রশ্নে জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা যদি এদের টেস্ট করাতে যাই, তাহলে তাদের ডেডবডিগুলো রাখতে হবে। দ্যাট ইজ অ্যানাদার ক্রাইসিস (সেটা আরেকটা সংকট)। সে জন্য যারা হাইলি সাসপেক্টেটেড, তাদের ডেডবডি রেখে স্যাম্পল নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।


কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সব মিলিয়ে ১২টি মৃতদেহ রাখার ব্যবস্থা আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছয়তলা বিশিষ্ট পুরনো বার্ন ইউনিট ভবনকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে।এখানে ২৫০ টি শয্যা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে এখানে ১৫০ জনের মতো রোগী ভর্তি রয়েছে।


হাসপাতালের পরিচালক জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজন- উভয় ধরণের রোগীদের এখানে রাখা হচ্ছে। যাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে তাদের জন্য ভবনটির ৫ম তলা এবং সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য ৩য় ও ৪র্থ তলা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।


জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, উভয় ধরণের রোগীদের এখানে রাখার কারণ হলো, অনেকের করোনার মতো উপসর্গ আছে। তারা অন্য কোন হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হৃদরোগ হলে শ্বাসকষ্ট হয়, কিডনি রোগী অ্যাডভান্সড স্টেজে থাকলেও শ্বাসকষ্ট হয়।এ ধরণের যত রোগী আছে - যাদের জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট আছে - আমরা সবাইকে নেয়ার চেষ্টা করছি। ঢাকা শহরের ক্রিটিকাল রোগীদের একটি বড় অংশ যখন এখানে এসে যাচ্ছে, আমরা তাদের টেস্ট করারও সুযোগ পাই নাই।


বাস্তবতা হলো, হাসপাতাল কিংবা হাসপাতালের বাইরে - করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের একটা বড় অংশেরই নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না।সূত্র: বিবিসি।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com