অভিযানের ভয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে ডিম বিক্রি বন্ধ
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৫
অভিযানের ভয়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে ডিম বিক্রি বন্ধ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বেঁধে দেওয়া দাম অনুসারে, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে তা ১১ টাকা ৮৭ পয়সা হওয়ার কথা। সে হিসাবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হয় ১৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এখন ১৭০-১৮০ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে। ডিমের এমন উচ্চ দাম বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডিম উৎপাদক ও পাইকারি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেই তারা ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করেছিল।


সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আড়তে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ডিম বিক্রি করেননি। এতে ডজন প্রতি ডিমের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়ে গেছে।


ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করতে হলে তার চেয়ে কম দামে ডিম কিনতে হবে। কিন্তু আড়তদারদের তার চেয়ে বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। যে কারণে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। এই পরিস্থিতিতে ভোক্তা অধিদপ্তর বাজার মনিটরিংয়ে এসে ব্যবসায়ীদের বাড়তি দাম নেওয়ার জন্য জরিমানা করছে।


এদিকে ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা দুই-তিনদিন আগেও ছিল ১৬৫ টাকার মধ্যে।


তেজগাঁওয়ের আড়তগুলো থেকে মূলত ঢাকার একটি বড় অংশের ডিমের চাহিদা পূরণ হয়। দৈনিক ১৪-১৫ লাখ পিস ডিম আসে এসব আড়তে। যা ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।


এদিকে এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ডিম, আড়তদার, পাইকারি ব্যবসায়ী, খামারিদের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পোল্ট্রি খাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা ডেকেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।


সরকার নির্ধারিত এই দাম বাস্তবায়ন করতে ডিমের বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যৌক্তিক মূল্যে ডিম বিক্রি না করলে প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করছে। মূলত অভিযানের ভয়েই ডিম বিক্রি বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা।


তেজগাঁও থেকে নিয়মিত ডিম কেনেন এমন কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা জানান, তেজগাঁওয়ে ডিমের গাড়ি না ঢুকলে তা শহরেরই ভিন্ন এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়। আজ ভোরে এমন কিছু জায়গা থেকে খুচরা বিক্রেতারা ডিম কিনেছেন। তবে এ বিষয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


একই অবস্থা চট্টগ্রামে আড়তে। জানা যায়, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করতে না পারায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে ডিমের আড়তে বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রবিবার থেকেই ব্যবসায়ীরা আড়ত বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন পাহাড়তলী ডিম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কর লিটন।


তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রতিটি ফার্মের ডিমের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দিয়েছে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। অথচ ১৩-১৪ টাকার নিচে ডিম পাইকারি আড়তে মিলছে না। এ অবস্থায় প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদে ডিম বিক্রিই বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।


আবদুল শুক্কর লিটন অভিযোগ করেন, এ সমস্যার মূলে রয়েছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা ব্যাংক লেনদেনে সরকার নির্ধারিত টাকা আদায় করলেও নগদে আদায় করছেন বাড়তি দাম। এ অবস্থায় বাড়তি দামে ডিম কিনে তা সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। সরকারের উচিত করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রিতে বাধ্য করা।


এদিকে আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নগরের বহদ্দারহাট বাজারে বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৭০ টাকা আর সাদা ডিমের ডজন ১৬৫ টাকায়।


তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ জানান, সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিমের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনছেন তাঁরা। এ কারণে বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গতকাল রাতে তাঁরা পাইকারিতে ডিম বিক্রি করেছেন প্রতিটি ১২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। এই ডিম তাঁরা কিনেছেন ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ২০ পয়সা দরে।


আমানত উল্লাহ আরও জানান, তেজগাঁওয়ে দৈনিক ১৪-১৫ লাখ ডিম আসে। ঢাকায় ডিমের চাহিদা এক কোটি। তেজগাঁওয়ের বাইরে কিছু জায়গায় অনেকে ঠিকই উচ্চ দামে ডিম বিক্রি করছেন। কিন্তু বাড়তি দামে কেনাবেচার কারণে শুধু তাঁদের দায়ী করা হচ্ছে, অভিযান চালানো হচ্ছে। এ জন্য ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন তাঁরা।


ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আরও বলেন, ‘সরকারের নিয়ম না মানলে জরিমানা ও শাস্তি হতে পারে। তাই এখন বিক্রি বন্ধ রেখে কী করা যায়, সে উপায় খুঁজছি। আজকে (সোমবার) সকালে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে সভা থাকায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। বিকেলে আবার কথা বলতে যাব।


আমানত উল্লাহ জানান, তারা মঙ্গলবার ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করবেন।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com