
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে হিন্দুধর্মকে অবমাননা ও অশ্লীলভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ উঠেছে৷ এতে ক্ষোভ জানিয়ে অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সনাতন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে এ অভিযোগপত্র জমা দেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নাম আব্দুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার নিজ জেলা চট্টগ্রাম। গতকাল ১৪ এপ্রিল দুপুর ৩টার দিকে শেয়ার করা পোস্টটির স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বেশ আলোচনা-সমালোচনার তৈরি হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আব্দুর রহমান নামক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লাগাতার সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) কটূক্তি করে যাচ্ছে। এরমধ্যে গতকালের (১৪ এপ্রিল) একটি পোস্টে সনাতন ধর্মকে মারাত্মক ভাবে ঘৃণিত ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। এই বক্তব্য শুধু কুরুচিপূর্ণ নয়, বরং এটি আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান এবং ঘৃণিত করে।
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীদের দাবি, উক্ত শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার পূর্বক দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণিত কাজ না করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল M A Hussain – এম এ হোসাইন নামক একটি পেইজে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে জীবন্ত ছাগলকে পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেটার ক্যাপশন অপশনে লিখা ছিল 'জনশ্রুতি আছে,_পৃথিবীর নিকৃষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। একটা নিরীহ জীবন্ত প্রাণীকে এভাবে আগুনে পুড়ে মারার অধিকার কি কোনো ধর্মে আছে?'
পেইজের সেই ভিডিও পোস্টটি একই দিন আবদুর রহমানও নিজের অ্যাকাউন্টে শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে লিখেন ('হিন্দুধর্ম। ইট'স রিকোয়াইর্স টু বি এগ্রেসিভলি রেপড, ফাকড ইন আ রুড ওয়ে। চোদলাম। আবার চোদলাম।')
পরবর্তীতে পোস্টটির স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে ক্যাপশনটি এডিট করেন এবং পরিবর্তিত ক্যাপশনে লিখেন যে, 'হিন্দুধর্ম। ইট'স রিকোয়াইর্স টু বি এগ্রেসিভলি,,,,,'।
পরবর্তীতে স্ক্রিনশটটি আরো ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারকৃত পোস্টটি ডিলিট করে ক্ষমা চেয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। বর্তমানে অভিযুক্ত আবদুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিএক্টিভেট করে রাখা হয়েছে।
এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাস বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী কীভাবে একটা ধর্মকে নিয়ে এমনভাবে গালি দিতে পারে?আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, বিগত বছরগুলোতে যেভাবে ধর্মকে অবমাননার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে, এবারও যেন তার ব্যতিক্রম না ঘটে। তার জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যেন পরবর্তীতে এমন ঘটনা না ঘটে।’
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুর রহমান বলেন, “আমি আমার বক্তব্য প্রক্টর অফিসে দিয়েছি।”
এ ব্যাপারে আইন বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক আইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আলী মোর্শেদ কাজেম বলেন, ‘আমি এই বিষয়ে অবগত নই। ঘটনা সম্পূর্ণ না জেনে আমি তো কোন বক্তব্য দিতে পারছি না।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যেহেতু আইন বিভাগের সেহেতু আমরা উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে অভিযুক্তের সাথে কথা বলে বিষয়টি শৃঙ্খলা কমিটির কাছে হস্তান্তর করবো।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ডেকে শোকজ করা হবে। তার লিখিত ব্যাখ্যা গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বিবার্তা/প্রসেনজিত/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]