ঢাকা কলেজে পুলিশ পরিচয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২:১৯
ঢাকা কলেজে পুলিশ পরিচয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে
ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা কলেজের ২০১৯-২০ সেশনের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ফাহিম শাহরিয়ার নামে এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে মারধর ও পুলিশ পরিচয় দিয়ে ১২ হাজার ৬ শত ৫০ টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা কলেজের হল শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তোফায়েল হোসেনের বিরুদ্ধে।


অভিযুক্ত মো. তোফায়েল হোসেন ঢাকা কলেজের ২০২০-২১ সেশনের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। সেইসঙ্গে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাসের সাংগঠনিক সম্পাদক। থাকেন উত্তর ছাত্রাবাসে।


জানা গেছে, বুধবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকা কলেজের মুক্তমঞ্চে পুলিশ পরিচয়ে তোফায়েল ও তার সঙ্গীরা শাহরিয়ারের বিকাশ একাউন্ট থেকে ২৬৫০ টাকা তুলে নেয় এবং তার পরিবারের কাছ থেকে বিকাশে ১০ হাজার টাকা নেয়। বর্তমানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।


এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ফাহিম শাহরিয়ার এই ঘটনার বিচার চেয়ে ডিপার্টমেন্টের গ্রুপে লিখেছেন বলেন, ‘আমি ফাহিম শাহরিয়ার, সেশন ১৯-২০। জিওগ্রাফি ডিপার্টমেন্ট। আমি বেলা ১:৩০ ঘটিকায় ক্যাম্পাসের মেইনগেইট থেকে ভিতরের দিকে ঢুকতে তোফায়েল নামে একটা ছেলে আমাকে ডেকে নিয়ে ক্যাম্পাসের বিজয় চত্বরে যায়। এরপর আমার কাছে থেকে ফোন ছিনিয়ে নেয়। তারপর আমাকে তার কিছু বন্ধু-বান্ধব দিয়ে পিটায়। আমার ফোন থেকে বিকাশ পিন জোরপূর্বক নিয়ে ২৬৫০ টাকা নেয়। এরপর বাসায় ফোন দিয়ে পুলিশ পরিচয়ে আমার বাবাকে বলে, অস্ত্রসহ আপনার ছেলেকে আটক করা হয়েছে। এবং ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে আমার বাবা ১০,০০০ টাকা দেয়।


তিনি আরও লিখেন, ‘আমাকে মারধর করে। পরে আমারে ফোন ফিরিয়ে দিয়ে জীবনাশের হুমকি দিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে না করে। আমার তার সাথে পূর্বের কোনো ঝামেলা ছিল না। আমার অপরাধ একটাই আমি দেড় বছর আগে হলে ছিলাম, হলে থাকলে ছাত্রলীগ করা বাধ্যতামূলক, আমি যদি সেই ছাত্রলীগই করতাম তাহলে দেড় বছর আগে হল ছেড়ে দিতাম না। আমি নিম্নবিত্ত পরিবারের একজন সাধারণ ছেলে। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’


এই ঘটনার ফোন রেকর্ড এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। সেখানে ফাহিম শাহরিয়ারের বাবাকে তোফায়েল হোসেন একটি বিকাশ নাম্বার দেন এবং ফাহিম শাহরিয়ারের বাবাকে টাকা পাঠাতে বলেন। এতে ফাহিম শাহরিয়ারের বাবা বলেন, তাড়াহুড়া করে আট হাজার টাকা জোগাড় করতে পেরেছি, এটা নেন। এসয়ম তোফায়েল বলেন, ওই মিয়া টাকা দিতে হবে না, আমার কী আর কাজ নেই। পরে ফাহিম শাহরিয়ার বাবা ১০ হাজার টাকা পাঠান এবং তা তোফায়েল বুঝে নেন।


অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা তোফায়েল হোসেন বিবার্তাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মিডিয়াতে আমি কোনো বক্তব্য দিতে চাচ্ছি না।’


ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীন বিবার্তাকে বলেন, ‘ওই ছেলে (ফাহিম শাহরিয়ার) যখন হলে ছিল এবং সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করতো, তখন মারছিল (তোফায়েলকে) এবং জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে আসছিল। নিষিদ্ধ সংগঠনের একজনকে মারতেই পারে, পুলিশে ধরাই দেইনি, এতো আলহামুলিল্লাহ। ওই সময় (২৩ অক্টোবর) নিষিদ্ধ ছিল না বলে পুলিশে ধরাইনি।’


তিনি আরও বলেন, ‘টাকা নেওয়ার কোনো সত্যতা নেই। বরং মেসে গিয়ে (তোফায়েলের কাছ থেকে) টাকা-পয়সা নিয়ে আসছিল এবং মোবাইল কেড়ে নিয়ে আসছিল বছর দুইয়েক আগে। তারপরও তোফায়েলকে মৌখিকভাবে শোকজ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এমন করলে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।’


তবে শাহীনুর রহমান শাহীনের বর্ণনা দেওয়া ঘটনার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীদের বর্ণনা অনুযায়ী, আগে ঢাকা কলেজের হলে যারা ছিলেন, তাঁদের ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। সে হিসেবে ফাহিম শাহরিয়ারও মিছিল-মিটিংয়ে যেতেন। তবে সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।


ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বিবার্তাকে বলেন, ‘ফাহিম শাহরিয়ার আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


নিউমার্কেট থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোহসীন উদ্দীন বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নিবো।’


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com