
গাড়িচাপায় এক নারীর প্রাণহানির ঘটনার পর থেকে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পাঁচ শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সক্রিয় অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
৪ ডিসেম্বর, রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সমাবেশে অংশ নেন। তারা রাজু ভাস্কর্য হয়ে প্রথমে ভিসি চত্বরে অবস্থান নেন। পরে মিছিল নিয়ে টিএসসি হয়ে কার্জন হল প্রদক্ষিণ করে রেজিস্ট্রার ভবনের দিকে যাত্রা করেন।
এসময় তারা নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ১১ দফা দাবি জানান তারা। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই দাবি মানা না হলে পরদিন থেকে কঠের আন্দোলন করতে বাধ্য হবেন বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ‘দাবি মোদের একটাই নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘অনিয়মের ঠাই নাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরে, প্রশাসন কী করে?’, ‘বিবেকরে প্রশ্ন করি, এবার যদি আমরা মরি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আল মেহেরাজ শাহরুয়ার মিথুন ১১ দফা দাবি লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরেন । সেগুলো হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ, শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা ও শান্তির বিধান নিশ্চিত করা।
২. রুবিনা আক্তার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সমর্থন ও সহযোগিতা আদায় করা।
৩. ক্যাম্পাসে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষে প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে দ্রুত চেকপোস্ট বসানো ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শুধুমাত্র নিবন্ধিত রিক্সা চলাচল এবং রিকশাচালকদের জন্য ইউনিফর্ম ও ভাড়ার চার্ট প্রস্তুত করা।
৫. ভ্রাম্যমান দোকানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ ও প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা এবং ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে নূন্যতম ৩০০ ডাস্টবিন স্থাপনের ব্যবস্থা করা।
৬. প্রথম বর্ষ থেকে সকল শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড প্রদান করা এবং ক্যাম্পাসের কিছু স্থানে সংরক্ষিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
৭. মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী উচ্ছেদ করা।
৮. সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করা।
৯. প্রক্টর অফিসে জমে থাকা সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করা।
১০. নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষে প্রক্টোরিয়াল অফিসের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
১১. নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিগুলো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা।
দাবি উপস্থাপনের পর মেহেরাজ বলেন, এই দাবি শিক্ষার্থী প্রাণের দাবি। আমরা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে ভিসি স্যার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করব। আগামী ১০ তারিখের মধ্যে এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য যদি তিনি কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নেন তাহলে ১১ তারিখ থেকে কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হব।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দেবরের বাইকে শাহবাগ হয়ে হাজারীবাগে ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন রুবিনা নামের এক নারী। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আজাহার জাফর শাহর প্রাইভেট কারের ধাক্কায় রুবিনা ছিটকে চলে যান ওই গাড়ির নিচে। পেছন ও আশপাশ থেকে অনেকে চিৎকার করলেও চালক গাড়ি থামাননি। এক কিলোমিটার ছেঁচড়ে যাওয়ার পর রুবিনাকে আর বাঁচানোর উপায় ছিল না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনার পর সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মশাল হাতে বিক্ষোভ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্র ইউনিয়ন।
বিবার্তা/সাইদুল/জামাল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]