যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে পর পর তিন দিনে ৩ বাংলাদেশী খুন হওয়ার ঘটনায় প্রবাসি বাংলাদেশীদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রথম খুনের ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে। কথা কাটাকাটির জের ধরে সহকর্মীর ছুরিকাঘাতে স্কটল্যান্ডের বাংলাদেশী মালিকাধীন একটি রেস্টুরেন্টের এক শেফ নিহত হন। নিহত শেফের নাম সেলিম। বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার ফতেহপুর গ্রামে। পিতার নাম মরহুম সাদই মিয়া। দীর্ঘ ২০ বছর যুক্তরাজ্যে বসবাসের পর মাত্র কয়েকদিন পূর্বে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পান সেলিম।
সেলিম স্কটল্যান্ডের ইনভারকেটিং হাই স্ট্রিটের বাংলাদেশী মালিকানাধীন গুলসান তান্দুরি রেস্টুরেন্টে শেফের কাজ করতেন। ওই রেস্টুরেন্টের মালিকও তার নিজ এলাকার। রেস্টুরেন্টে স্টাফ সংকট হলে সেলিম প্রায়ই স্টাফ সংগ্রহ করে আনেন। যার ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারালেন তাকে কিছুদিন আগে কাজে এনেছিলেন সেলিম।
স্কটল্যান্ডের পুলিশ জানায়, ১৭ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটের সময় ছুরিকাঘাতের সংবাদটি পায়। মারাত্মক জখম অবস্থায় সেলিমকে পুলিশ এডিনবারার রয়েল ইনফারমারিতে নিয়ে যায়। পরে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ওই সহকর্মীকে ছুরিসহ রক্তাক্ত অবস্থায় ইনভারকেটিং স্টেশন থেকে আটক করে।
একই রাতে রাজধানী লন্ডনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত স্কুল শিক্ষিকা সাবিনা নেছারের (২৮) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার দাওরাই গ্রামে। তার মৃত্যুতে লন্ডনের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে এই হত্যাকাণ্ড হয় বলে পুলিশ ধারণা করছে।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে সাউথ ইস্ট লন্ডনের কিডব্রুক এলাকার ক্যাটর পার্কে একটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশে সাবিনার মৃতদেহ পাওয়া যায়। তবে তার লাশ শনাক্ত হয় সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে। তিনি লুইশাম রাশিগ্রিন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। সাবিনার পরিবার বেডফোর্ডশায়ারের স্যান্ডি এলাকায় থাকে। সাবিনা গ্রীন উইচে একটি ফ্ল্যাটে স্কুলের আরো কয়েকজন সহকর্মীর সাথে থাকতেন।
নিহত সাবিনা নেছার বাবা আব্দুল রউফ মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় বাঁকরুদ্ধ! তিনি বলেন, কেনো এই ঘটনা হলো আমাদের কোন ধারণা নেই। ৪ মেয়ের মধ্যে সাবিনা নেছা লুটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে গ্রীন উইচে রাশিগ্রীন প্রাইমারী স্কুলের ইয়ার ওয়ানের শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি মেয়ের হত্যার বিচার চান। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, তিনি অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী ও একজন ভালো শিক্ষক ছিলেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত খুনি সন্দেহে ৪১ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রবিবারে (১৯ সেপ্টেম্বর) আরেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর এসেছে। ব্রিটেনের ব্রিস্টলে ২৭ বছরের বাংলাদেশী ছাত্র ফাহাদ হোসেনকে হত্যা করা হয়। ফাহাদ ব্রিস্টলে ব্যারিস্টারি পড়তে যান। পঞ্চগড়ের পুর্বাজালাসি এলাকার নাজমুল প্রামানিকের একমাত্র ছেলে ফাহাদ বাংলাদেশে ভূঁইয়া একাডেমিতে পড়াশুনা করেন ।
বিষয়টি নিয়ে বিস্টল পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রবিবার (সেপ্টেম্বর) উড স্ট্রিটে ঘরের মধ্যে থেকে দুই জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা না গেলেও পরবর্তীতে জানানো হয়, তাদের মধ্যে একজনের নাম ডেনজিল ম্যাকজেনজি, যার বয়স ৫৬ বছর। আর একজনের নাম ফাহাদ হোসেন প্রামানিক। প্রাইমানিকের বয়স ২৭ বছর।
এদিকে, তদন্তকারী পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় ২১ বছরের লোনাট ভ্যালেন্টাইন ও ৪৫ বছরের জ্যাকব নামের দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ১৩ অক্টোবর কোর্টে তোলা হবে। আর ঘটনার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, ব্রিস্টলের ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফাহাদ বিস্ট্রলে ব্যারিস্টারি পড়লেও থাকতেন লন্ডনে। কিন্তু অজানা কারণে রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) হত্যা করা হয় ফাহাদকে। ফাহাদের হত্যার বিচার চেয়েছে বিস্টলের ছাত্র সংগঠনগুলো।
বিবার্তা/জুয়েল/এনকে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]