শিরোনাম
আদম ব্যাপারীর খপ্পরে ৪ বছর ধরে নিখোঁজ জাফিরুল
প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৪৫
আদম ব্যাপারীর খপ্পরে ৪ বছর ধরে নিখোঁজ জাফিরুল
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পড়ে পরিবার থেকে প্রায় ৪ বছর নিরুদ্দেশ জাফিরুল ইসলাম (৫০)। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর একটি পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে বাবা-মা-স্ত্রী-সন্তানের এখন অমানবিক অসহায় জীবনযাপন।


সুদান কিংবা লিবিয়াগামী নিখোঁজ স্বামী জাফিরুলকে উদ্ধারে স্ত্রী রোজিনা বেগম মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে পলাশবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছেন।


মামলার বিবরণে জানা যায়, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউপির সাকোয়া গ্রামের দুলা ব্যাপারির ছেলে দুই সন্তানের বাবা জাফিরুল ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি সংঘবদ্ধ আদম ব্যাপারী চক্রের প্রলোভনে সুদানে যান। বিদেশে পাড়ি দেয়ার আগে ভূক্তভোগী পরিবারটি প্রতারক চক্রের সহযোগী একই উপজেলার মহদীপুর ইউপির বড় গোবিন্দপুর গ্রামের আইজার সরকারের ছেলে আ. হালিমের মধ্যস্থতায় মুন্সিগঞ্জ জেলার চরডুমুরিয়া গ্রামের সাজ্জাদ হোসাইন ও আমিনুল ইসলাম নামের চক্রের কাছে ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথমত ২ লাখ ২০ হাজার দেয়। পরে সুদানে থাকাবস্থায় চক্রটি তাকে বিভিন্ন ভয়ভীতি এমনকি খুন করার হুমকি দিয়ে আরো মোটা অংকের টাকা দাবি করে।


২০১৬ সালের ১ এপ্রিলের পর থেকে ফোনে পরিবারের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারেননি জাফিরু। ২০১৬ সালের ১২ মে '০০২১৮৯২৭৪৬১৫৫৬' নম্বর থেকে সে স্ত্রীকে ফোন করে জানায়, আদম পাচারের ওই চক্রটি তাকে সুদান থেকে লিবিয়ায় নিয়ে বিনা বেতনে কাজ করাচ্ছে।


এক পর্যায়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটি স্ত্রীকে ফোন করে বলে, 'লিবিয়ায় তোমার স্বামী মোটা বেতনে চাকরি পাবে। তবে আরো সাড়ে ৪ লাখ দিতে হবে। যথাসময় টাকা প্রেরণ না করলে তোমার স্বামীকে মেরে ফেলব।' এ কথা শুনে পরিবারের সবাই হতাশ হয়ে পড়েন।


স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে নিরুপায় স্ত্রী ধার-দেনা করে ডাচ বাংলা ব্যাংক, গোবিন্দগঞ্জ শাখা থেকে ওই চক্রের একাউন্ট নম্বর '১৮৬১৫১৩৯৭৯০'-এ ২০১৬ সালের ১৩ জুন নগদ ২ লাখ টাকা দেয়। কিন্তু এরপরও থেমে নেই ওই চক্র।


২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একটি ফোন থেকে জাফিরুলের স্বামীর ফুপাতো ভাই আ. রহমানের মোবাইল ফোন ০১৭৭০৩৫৪৯৪১ নম্বরে ফোন করে বলে, জাফিরুলকে লিবিয়ায় আটক রাখা হয়েছে। বাকি টাকা প্রেরণ না করলে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন অব্যাহত রাখবে।'


প্রতারক চক্র দফায় দফায় টাকা গ্রহণ করলেও স্বামীর মুক্তিপণে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর '০১৫৩২২৭৪৪৭০' নম্বর থেকে ফোন করে আরো ৫ লাখ টাকা দাবি করে চক্রটি। না দিলে এবার আর জাফিরুলের রক্ষা নেই বলে হুঁশিয়ারি দেয় তারা।


এদিকে মামলা দায়েরের পর বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকার সিআইডি বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম (টিএইচবি) বিষয়টি তদন্তাধীন সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদন্তকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক খ ম আব্দুল হালিম আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফোন ট্রাকিং করে (০১৭৬৬৪৫৪৭৭৭) ডিএমপি দারুস সালাম থানাধীন গাবতলী এলাকা থেকে মানব পাচারকারী চক্রের এক সদস্য নুর হোসেনকে (৩২) আটক করে। সে মালিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার চর চারাভাংগা গ্রামের মৃত কালাচানের ছেলেভ


ক'দিন পর নুর হোসেন জামিনে মুক্তি পায়। পরে ওই মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরো। বিগত ৪ বছর ধরে স্বামী জাফিরুলের অবর্তমানে তার পরিবার দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে, অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে। পরিবারের একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে স্ত্রী রোজিনা তার পড়ুয়া ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার ব্যয়বহনসহ সংসারের অন্যান্য ভরণ-পোষণে বর্তমানে মানুষের দ্বারে দ্বারে সাহায্য সহযোগিতা নেয়ার মাধ্যমে অমানবিক জীবনযাপন করছেন।


তাদের ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে পরিবারটি।


বিবার্তা/তোফায়েল/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com