কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে উচ্চফলনশীল ‘বিনা ধান ২৬’
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:১৩
কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে উচ্চফলনশীল ‘বিনা ধান ২৬’
বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

স্বল্পমেয়াদি, উচ্চফলনশীল ও ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট প্রতিরোধী আমন ধানের জাত বিনা ধান ২৬ উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) একদল বিজ্ঞানী। এই জাতটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ঘাগড়া এলাকায় কয়েকজন কৃষকের জমিতে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষক সোহেল মিয়া ৩৩ শতাংশ জমিতে প্রাথমিকভাবে এই স্বল্পমেয়াদি বিনা ধান ২৬ রোপণ করেছেন।


রবিবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে বিনার একদল বিজ্ঞানী বিনা ধান ২৬-এর শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস আয়োজন উপলক্ষ্যে গফরগাঁওয়ের ওই এলাকায় যান। শস্য কর্তন শেষে মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন তারা।


এসময় কৃষক সোহেল মিয়া জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আমি বিনা ধান২৬ জমিতে রোপণ করেছিলাম, আশানুরূপ ফলন পেয়েছি। স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় আমরা আমন ধান তোলার পরপরই একই জমিতে বিনা সরিষা চাষ করতে পারছি।


স্থানীয় আরেক কৃষক মোশাররফও ৩৩ শতাংশ জমিতে এই জাতের ধান রোপণ করেছেন। ধান কর্তনের পর তিনি বলেন, এই জাতের ধানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর শীষ সহজে হেলে পড়ে না। হেক্টর প্রতি প্রায় ৬ টন বা তার অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।


এসময় উপস্থিত ছিলেন 'বিনা ধান ২৬'-এর উদ্ভাবক দলের প্রধান ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ড. শামছুন্নাহার বেগম এবং বিনার ফলিত গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান ও পিএসও ড. শামীমা বেগম।


প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু।


বিশেষ অতিথি হিসেবে ড. শামীমা বেগম এবং গফরগাঁওয়ের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্নীও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ‘বিনা ধান ২৬’-এর উদ্ভাবক দলের প্রধান ড. শামছুন্নাহার বেগম।


ড. সালমা লাইজু বলেন, দিন দিন আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। স্বল্পমেয়াদি ও উচ্চফলনশীল ধানের জাত আমাদের চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয়। একই জমিতে বছরে চারটি ফসল চাষের ব্যবস্থা করতে হবে। এই আমন ধানের জাতটি এর জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে সর্বোচ্চ ফলন পেতে হলে জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে যাতে করে জমির জৈব পদার্থের পরিমাণ ঠিক থাকে।


গফরগাঁও উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্নী বলেন, বিনা ধান২৬ কৃষকদের জন্য একটি বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এই ধানের জাতের মাধ্যমে আমাদের কৃষকরা স্বল্পসময়ে অধিক ফলন লাভ করতে পারবেন। এটি তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখবে।


বিনার ফলিত গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান ও পিএসও ড. শামীমা বেগম বলেন, বিনা ধান২৬ জাতটি আমাদের জন্য একটি বিশেষ অর্জন। এটি স্বল্পমেয়াদি হওয়ায় কৃষকরা আমন মৌসুম শেষে একই জমিতে সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করতে পারছেন, যা খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য হলো এই জাতটি সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে কৃষকরা এর সুফল ভোগ করতে পারেন এবং জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।


‘বিনা ধান ২৬’-এর উদ্ভাবক দলের প্রধান ড. শামছুন্নাহার বেগম জানান, বিনা ধান ২৬ জাতটি অ্যামাইলোজের পরিমাণে অন্য ধান থেকে বেশি—প্রায় ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ অ্যামাইলোজ ও ৯ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম প্রোটিন রয়েছে। এটি একটি উচ্চ ফলনশীল রোপা আমন, যা দেশের সব রোপা আমন অঞ্চলে চাষোপযোগী। এর চাষাবাদ পদ্ধতিও অন্যান্য উফশী রোপা আমন জাতের মতো সহজ ও সুবিধাজনক। সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী। ফলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়, যা কৃষকদের জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দেয়।


বিবার্তা/আমান উল্লাহ/জেএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com