বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অফিসার পরিচয়ে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের নয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি জানায়, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের আনসার সদস্যরা ও পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা। চক্রটি পুলিশ পরিচয়ে ট্রুকলারে নম্বর সেইভ করে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের তথ্য নিয়ে মোবাইলে ফোন দিয়ে টাকা প্রতারণা করে আসছিলেন।

৬ মে, সোমবার রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ের কম্পাউন্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে এবিষয়ে বিস্তারিত জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) হারুন আর রশীদ।

ডিবি প্রধান জানান, এই চক্রটির মূলহোতা বেলালের নেতৃত্বেই হতো প্রতারণা। প্রথমে পাসপোর্ট অফিসের পিয়ন ও আনসার সদস্যদের সহায়তায় সংগ্রহ করা হতো আবেদনকারীর তথ্য। এরপর পুলিশ পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো তারা।

তিনি বলেন, এই প্রতারক চক্র পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীর, পিয়ন ও আনসার সদস্যের যোগসাজশে পাসপোর্ট অফিস হতে তথ্য সংগ্রহ করে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের ডেলিভারি এবং আবেদন ফরমে দেয়া মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে উক্ত নাম্বার সমূহে ফোন করে প্রথমে আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (এনআইডি, বিদ্যুৎ বিলের কপি) হোয়াটসঅ্যাপে প্রেরণ করার জন্য বলে এবং পরে প্রতারণা করে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে।
ডিবি প্রধান বলেন, এবিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন শাখা সবুজবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ডিবি সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে গ্রেফতার করেছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কাজী মো. বেলাল হোসেন (৩৫), মো. জসিম উদ্দিন (৩৩), মো. আল-আমিন গাজী (২৭), হাসান আহম্মেদ (২৯), মো. সোহাগ আলম, মো. হোসাইন মোল্লা, নুরুজ্জামান মিয়া, মামুনুর রহমান ও মো. রাসেল ইসলাম।

হারুন আর রশীদ বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা পাসপোর্ট অফিসে অসাধু কর্মচারী, পিয়ন, আনসার সদস্য, কর্মকর্তার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। পরে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়। পুলিশের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ভেরিফিকেশনের কথা বলে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ করেন। পুলিশের ছবি ও নাম ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে প্রতারণার কাজে বিভিন্ন এ্যাপব্যবহার করে ভুয়া নামে রেজিষ্ট্রেশনকৃত মোবাইল সিম সংগ্রহ করে নিজেরা প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেন। অন্যের নামে বিকাশ/নগদ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট যুক্ত সিম সংগ্রহ করে প্রতারণার অর্থ লেনদেন করেন।

গ্রেফতারকৃত আসামি বেলাল হোসেনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামি মো. জসিম উদ্দিনের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে।

যেভাবে অপরাধ করেন চক্রটি:

গ্রেফতারকৃত আসামি বেলাল, জসিম, হাসান, আল-আমিন ভেরিফিকেশন এর নামে মিথ্যা পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা চক্রের সাথে সরাসরি জড়িত। গ্রেফতারকৃত আসামিরা বর্ণিত ঘটনা চক্রের মুল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই চক্রের সাথে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী, পিয়ন, আনসারসহ নানান লোকজন জড়িত। এই চক্রটি পাসপোর্ট আবেদনকারীদের নিকট থেকে কৌশলে তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তীতে পুলিশ পরিচয়ে ভেরিফিকেশন নামে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করে। তারা ভূয়া নামে সিম রেজিস্ট্রেশন কালে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কৌশলের সংগ্রহকারী অপর গ্রুপের নিকট থেকে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত এবং বিকাশ-নগদ একাউন্টকৃত সিম সংগ্রহ করে।

উক্ত নাম্বারগুলো হতে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের কল করে পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভেরিফিকেশন নামে তাদের নিকট থেকে অর্থ দাবি করে এবং দাবিকৃত অর্থ অন্যের নামের রেজিস্ট্রেশনকৃত বিকাশ-নগদ একাউন্ট এর মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়।অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত আনসার সদস্য, পিয়ন, অফিসের কর্মচারীসহ নানান লোকজন এই চক্রের সাথে জড়িত। চক্রটির মূল হোতা গ্রেফতারকৃত আসামি বেলাল, জসিম।

বিবার্তা/লিমন