নোমান-রাকিব হত্যার এক বছর
প্রধান আসামি কাশেম জিহাদীর ধরা পড়েনি
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ২০:১৮
প্রধান আসামি কাশেম জিহাদীর ধরা পড়েনি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম হত্যার এক বছরেও প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। তিনি দেশে আছেন, নাকি বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, তাও অনিশ্চিত। এছাড়া বিভিন্ন সময় এলাকায় দেখা গেলেও মামলার আসামি মকবুলকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এ মামলার আসামি শরীফ ও কালু নামে আরও দুইজন পলাতক রয়েছে।


এদিকে জামিনে মুক্ত ও পলাতক আসামিদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নোমান-রাকিবের পরিবারের সদস্যরা। কোনোভাবেই তাদের ভয় কাটছে না। জামিনে মুক্ত আসামিরা প্রতিরাতেই এলাকায় সংঘবদ্ধ অবস্থান করছে। ঘটনার পরপর বশিকপুরে অভিযান চালিয়ে কিছু অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তবে এখন অস্ত্র উদ্ধার ও পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান নেই বললেই চলে। প্রথমদিকে কাশেম জিহাদীকে গ্রেফতারে এলাকাবাসী বিভিন্ন আন্দোলন করলেও এখন ভয়ে কথা বলছে না।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাদী সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মামলার পর থেকে বিভিন্ন সময় এজাহারনামীয় ১১ জন, তদন্তে প্রাপ্ত ও সন্দিহান আরও ১১ আসামিকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরমধ্যে মামলার ৩ নম্বর আসামি দেওয়ান ফয়সালসহ কয়েকজন স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয় আদালতে। গত বছর ৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হয় দেওয়ান ফয়সাল। তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা মোটরসাইকেল শোডাউন ও গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে তাকে বরণ করে নেয়। এভাবে এক একে গ্রেফতারকৃত আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দেওয়ান ফয়সালের ভাই দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু প্রার্থী হয়েছেন। এতে অনুসারীদের নিয়ে ভোটের মাঠে দেওয়াল ফয়সাল শক্তির মহড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহবায়ক দেওয়ান ফয়সাল, আসামি কদু আলমগীর ও লিটন ওরফে চান মিয়া বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় পৃথক পৃথক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এখন তারা জামিনে মুক্ত।


নিহত ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামের ভাই সাইফুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, ‘ঘটনার এক বছর পার হলেও এখনও প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। জিহাদী ও তাঁর বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করছে না স্থানীয়রা। কখন আবার কোন মায়ের বুক খালি হয়, তা নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে। দ্রুত এ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানাচ্ছি।


মামলার বাদী বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, কাশেম জিহাদীসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়নি। এখন তারা লুকায়িত থেকে এলাকায় বিভিন্ন মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করছেন। আসামিরা জামিনে বের হয়ে এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়েছে। এলাকায় আতঙ্ক বেড়ে গেছে। তাদের কারণে মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে ভয় হচ্ছে। ভয়-ডর নিয়েই পরিষদে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। কাশেম জিহাদীর ভাই লেদা, নিশান, কদু আলমগীরসহ সকল আসামি প্রতিরাতেই সংঘবদ্ধ অবস্থান নেয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় গ্রেফতার না হওয়া আসামি মকবুলকে এলাকায় দেখা গেছে।


তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাদের মধ্যে কয়েকজন আইনজীবী আছেন, যারা আসামিদের পক্ষে কাজ করেন। যতদিন দলীয় আইনজীবীরা আসামিদের পক্ষে থাকবে, ততদিন ন্যায়বিচার পাবো কি না সন্দেহ হচ্ছে।


ছাত্রলীগ নেতা এম সজীবের জানা যায় নোমান-রাকিব হত্যা মামলা নিয়ে বক্তব্যে লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, নোমান-রাকিব হত্যা মামলাটি যে অবস্থায় আছে, তাতে হত্যাকারীদের সাজা হবে বলে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই মামলা যে অবস্থাতে আছে তাতে অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মামলার পর থেকে এজহারনামীয় ১১ জন, তদন্তে প্রাপ্ত ও সন্দেহজনক ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা জামিনে রয়েছে। এরমধ্যে ৩ জন উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়। মামলার প্রধান আসামি কাশেম জিহাদীসহ এজাহারনামীয় ৪ জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি৷ কাশেম জিহাদীর অবস্থানও জানা যাচ্ছে না। কিছুদিন ভয়েস পাঠিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি ধমকি দিলেও এখন তা হচ্ছে না। মামলার তদন্ত এখনো চলমান। ঘটনার বিষয়ে অনেক তথ্য আমরা পেয়েছি। আরও তথ্য জানা যাবে। তথ্য উদঘাটন শেষ হলে মামলার তদন্ত সম্পন্ন করা হবে।


এমপি পিংকুর বক্তব্যের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিম ভূঁইয়া বলেন, এমপি কীভাবে কি বলেছেন তা তার ব্যক্তিগত কথা। আমাদের পক্ষ থেকে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি।


অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, মামলাটির শুরু থেকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হবে এমন কোনো তদন্ত এ মামলায় হবে না। আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন। বশিকপুরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে আমাদের ক্যাম্পে পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। বশিকপুরকে ঘিরে চন্দ্রগঞ্জ থানা ও আমাদের সিনিয়র অফিসাররা তৎপর রয়েছে।


প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দারবাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন রাতে নিহত নোমানের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনার ২২ দিন পর জিহাদীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জিহাদী বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান।


বিবার্তা/সুমন/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com