বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল হোছাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে অনাস্থা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট পরিষদের ১২জন সদস্য চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে এ অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেন।
অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন, পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য মংমেগ্য মার্মা, ২নং ওয়ার্ড সদস্য কুতুব উদ্দিন মিয়া, ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মো. হোছাইন মামুন, ৪নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আবু ওমর, ৫নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দু রহিম, ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন, ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মো. জিয়াবুল, ৮নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ইসমাইল, ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আপ্রুসিং মার্মা, সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ড সদস্য জোসনা আক্তার লিলি, সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ড সদস্য শাহানা আক্তার এবং সংরক্ষিত ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আনাই মার্মা।
জানা গেছে, ২০২১ সনের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আবেদনকারীগণের নিজ নিজ এলাকার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন।
একই সাথে চেয়ারম্যান মো. নুরুল হোছাইন চৌধুরীও নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
গত ১৭ এপ্রিল বিকেলে দাখিলকৃত অভিযোগে বলা হয়, ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরুল হোছাইন চৌধুরী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সরকারি বরাদ্দের বিষয়ে কোন প্রকার তথ্য না দিয়ে সম্পূর্ণ গোপনীয়ভাবে ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে একক কর্তৃত্বে কোন প্রকার কাজ বাস্তবায়ন ব্যতিরেখে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ ও অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত হন।
চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি প্রকল্প সমূহ অর্থাৎ টিআর, কাবিটা, এল.জি.এস.পি-১, এল.জি.এস.পি-২, এল.জি.এস.পি-৩ প্রকল্প সমূহসহ ইউপি টোল-ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স, জাতীয়তা সনদপত্র হতে আয়, জন্ম নিবন্ধন, প্রত্যায়ন পত্র ও রোহিঙ্গা নয় মর্মে প্রদত্ত সনদসহ বিভিন্ন খাত হইতে আয়ের টাকা কোন প্রকার অবগত বা অবহিত না করে দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কোন কাজ না করে ইউপি সদস্যদের অজ্ঞাতে স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকল্প সমূহের লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন।
ইতিপূর্বে একাধিকবার সরকারি বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে এবং উপরোল্লিখিত বিভিন্ন খাত থেকে প্রাপ্ত আয় ও ব্যয়ের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনরূপ কর্ণপাত না করে বরং হুমকি ধমকি প্রদান করেন চেয়ারম্যান নুরুল হোছাইন চৌধুরী। ইতিপূর্বে চেয়ারম্যান ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশেষ প্রকল্প কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দকৃত ৮০ মে. টন চাউল, ২০ মে. টন গম (যাহার জিও নাম্বার- ২৯,০০,০০০০.২২৩, ০২,০০৫,২০২১-২২, তারিখ-২৩/০১/২০২২ইং) এর বিপরীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে প্রকল্প সমূহের যাবতীয় বরাদ্দ সম্পূর্ণরূপে আত্মসাৎ করেছেন। ইউনিয়নে বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত আরো আনুমানিক ১৫০ মে. টন বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। শুধু তায় নয়, মুজিব শতবর্ষের উপহারস্বরূপ গৃহহীন মানুষের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত প্রতি ঘরের বিপরীতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তির নিকট হতে ৩০ হতে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ ঘটনায় ইউনিয়নের সর্বসাধারণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় আমরা আবেদনকারীগণ একান্ত বাধ্য হয়ে সকলের মতামতের আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ এর ৩৯ ধারার বিধান মোতাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ পূর্বক যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যান পদ হতে অপসারণ পূর্বক অব্যাহতি প্রদানের জন্য আবেদন করেন সদস্যরা।
তবে অভিযুক্ত ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুল হোছাইন চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ভাগ করে দিতে রাজি না হওয়ায়, সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌং বলেন, ‘ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সব সদস্যরা চেয়ারম্যান মো. নুরুল হোছাইন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেছেন। বিষয়টি বান্দরবান জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বিবার্তা/আরমান/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]