ঝিনাইদহের মধুহাটিতে কামরুল লস্কার নামে এক কৃষকের ২ হাজার ড্রাগন গাছ কেটে ফেলার ঘটনার একমাস না পেরোতেই ১ হাজার ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সেই সাথে ভুক্তভোগী কামরুলের বাড়ির বাথরুমের ওয়ালে হাতে লেখা চিরকুটে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়েনের বেড়াশুলা গ্রামে মাঠে এই ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বেড়াশুলা গ্রামের মৃত তোয়াজ লস্কারের ছেলে।

চিরকুটটি হুবহু তুলে ধরা হলো, সাবধান কামরুল তোর জন্য অনেক বড় ভয়ংকার বিপদ আসতে যাচ্ছে। যদি তুই বা তোর বড় ছেলে বিদেশে আসিছ! তাহলে, তোর ছোট ছেলের মাথা থাকবে এক জাইগায় বডি থাকবে অন্য জায়গায়। ওই দিন তোর বড় ছেলেকে খুন করতে ছুরি মারার সময় অন্য দিকে সরে যাওয়ায় ছুরিটা গিয়ে পড়ে মুখের উপর। আর খুনটাও করতে পারলাম না। আর এই বার তুই বা তোর বড় ছেলে যদি বিদেশ আসিছ, তাহলে তোর ছোট ছেলেকে মাঠের মাঝে নিয়ে খুন করবো। আমাদের কাজে কেও বাঁধা দিতে আসবেনা। কে কোথা থেকে ছুরি মারবে কেও বুঝতে পারবেনা। তুই কোন ফল বাগন করতে পারবিনা, কামরুল গ্রাম ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবিনা। সাবধান কামরুল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এরিয়া জুড়ে দুই ভাইয়ের ড্রাগন বাগান। তার মধ্যে ৮০ শতক ড্রাগন বাগান কামরুল লস্কারের। ড্রাগন গাছগুলো দেখতে বেশ সতেজ। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে গাছ গুলো নিচ থেকে কাটা হয়েছে। ড্রাগন বাগানের ৪টি লাইনের অর্ধেক করে গাছের নিচ থেকে এক দেড় ফুট উচু করে কাটা হয়েছে। তবে কারা এই ড্রাগন বাগানের গাছ কেটেছে এখনো সনাক্ত করতে পারেনি। তবে গ্রামবাসীর ধারণা একই ব্যক্তি বারবার এ ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে।

এছাড়া এর আগে একই বাগানে ২ হাজার ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছিল। ওই ঘটনার একমাস না পেরোতেই তার ৮০ শতক জমির মধ্যে ২০ শতক জমির ১ হাজার ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে।

এ বিষয়ে কামরুল লস্কার বলেন, এর আগে কে বা কারা ২ হাজারের বেশি ড্রাগন গাছ কেটে ফেলেছে। আমার গরুর খাবার পাত্রে বিষ দেয়া হয়েছে দুইবার। পুইশাকসহ মালটা বাগান কেটে দেয়া হয়েছে দুইবার। মধ্যরাতে ১ হাজার ড্রাগন গাছ কেটে ফেলাসহ আমার বাথরুমের দেয়ালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চিরকুট লিখে লাগিয়ে রেখে গেছে। সেখানে আমিসহ আমার পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।

তিনি বলেন, ২০২২ সালে ৮০ শতক জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করি। বাগানে মোট ৮ হাজার গাছ ছিল। যে ড্রাগন গাছ কাটা হয়েছে তার পরিমাণ ২০ শতকের বেশি। বাগানের মাঝ থেকে ৪টি লাইনের অর্ধেক করে কেটে ফেলা হয়েছে। এই ড্রাগন বাগান করেতে এপর্যন্ত ১৫-১৬ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। প্রথম বছরেই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ড্রাগন বিক্রয় করা হয়েছিল। বাগান থেকে যে ড্রাগন গাছ কাটা হয়েছে সেখানে আনুমানিক ৩-৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে দাবি যারা এই ড্রাগন গাছ কেটেছে, এবং আমার পরিবারকে চিরকুটের মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হোক।

মধুহাটি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রহিম বাদশা বলেন, আমার বেড়াশুলা ব্লকের ড্রাগন চাষী কামরুলের ড্রাগন বাগানের ৪টি লাইনের অর্ধেক করে ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে করে কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। ড্রাগন গাছগুলো নিচ থেকে দেড় দুই ফুট উচ্চতা রেখে কাটা হয়েছে। এর আগেও একই জমিতে ২ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ কেটে দিয়েছিল। এতে করে তার অনেক ক্ষতি হয়েছে।

মধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন বলেন, কামরুল লস্কারের ড্রাগন বাগানে কে বা কারা ড্রাগন গাছ কেটে দিয়েছে। এবং বাড়ির বাথরুমের প্রাচিরে হাতে লেখা চিরকুটে প্রাণনাশের হুমকির বার্তা দিয়েছে। এ নিয়ে প্রায় তিন-চারবার এই ধরনের নেক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রশাসনের কাছে আবেদন এই কাজের সাথে যেই জড়িত থাকুক না কেন তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি (তদন্ত) আক্তারুজ্জামান লিটন বলেন, এ বিষয়ে কামরুল লস্কার নামে এক কৃষক লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিবার্তা/রায়হান/লিমন