
পাবনায় লিচুর ফলনে বিপর্যয়, তবে দামী খুশি চাষীরা। পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ও ঈশ্বরদীর সলিমপুর ও সাহাপুর থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল বর্ণের রসালো ফল লিচু। এসব গাছ থেকে কেউ লিচু তুলছে, কেউ বাছাই করছে, কেউবা ব্যস্ত আছে প্যাকেট করতে। শুধু বাগান নয়, হাটের অবস্থাও একই। চোখ যেদিকে যাবে সেই দিকেই রসালো ফল লিচুর ঝুড়ি। কারো মাথায় লিচুর ঝুড়ি, আবার কারো ভ্যানভর্তি লিচু। বেচাকেনাতেও লিচুর জমজমাট অবস্থা। লিচুর এই সরগরম পাবনার লিচুর হাট ও বাগানগুলোতে।
দেশের সব জায়গাতেই পাবনার লিচুর কদর রয়েছে। প্রথম দিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে লিচুর চাষ হলেও এটি এখন জেলাব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। লিচুর চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এটির চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনাজপুরসহ দেশের কয়েকটি জেলায় লিচুর উৎপাদন হলেও ভৌগলিক কারণে ঈশ্বরদীসহ পাবনা জেলার লিচুর বাজারজাত শুরু হয় একটু আগেই। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হয়েছে লিচুর কেনাবেচা। প্রথম দিকে মোজাফফর জাতের লিচু দিয়ে বেচাকেনা শুরু হয়, বর্তমানে বোম্বাই জাতে লিচু বেচাকেনা শুরু হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছেন, ৪ হাজার ৭শ ২১ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টর জমিতে ৮ মেট্রিক টনের অধিক লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেই হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পুরো জেলায়। এর মধ্যে শুধু লিচুর রাজধানী খ্যাত ঈশ্বরদী উপজেলাতেই ৩ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যা থেকে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লিচু। মূল্য হিসেবে পুরো জেলায় লিচুর বেচাকেনা হতে পারে ৭০০ কোটির টাকার বেশি।
এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন কিছুটা কম। লিচুর যখন মুকুল এসেছিল তখন অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে, ফলে মুকুল ঝরে গেছে। আবার যখন লিচু বৃদ্ধির সময় ছিল তখন বৃষ্টির অভাব ছিল, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ছিল। ফলে লিচু আকারে ছোট হয়েছে এবং ফলন অনেক কম হয়েছে। গত বছর যে গাছে ৫-১০ হাজার লিচু হয়েছে সেই বাগানে এবার ৩-৭ হাজার লিচু হয়েছে।
তবে ফলন বিপর্যয় হলেও দামে খুশি চাষীরা। লিচুর বেচাকেনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে লিচুর হাটগুলো। প্রথম দিকে মোজাফফর (স্থানীয় নাম আটি) জাতের লিচু বিক্রি হয়েছে হাজারে ১ হাজার থেকে ১৫শ টাকায়, সেই দুই সপ্তাহ পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে সেই মোজাফফর জাতের প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৫শ থেকে ২২শ-২৫শ টাকা । এ সপ্তাহের শুরুতে লিচু আরেক জাত বোম্বাই কেনাবেচা শুরু হয়েছে। বোম্বাই প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫শ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকার ওপরে।
পাবনার ঈশ্বদীর আওতাপাড়ার হাটের লিচু চাষী আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এবার লিচুর ফলন কম, কিন্তু দাম খুব সুন্দর। আমরা খুশি। আমি প্রতিদিন ৪-৫ হাজার লিচু নিয়ে আসি এই হাটে। এই দাম অব্যাহত থাকলে কৃষকরা কিছু লাভবান হবে। তবে হাটের তুলনায় বাগানেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কারণ- বাগান থেকে ব্যাপারীরা সরাসরি লিচু কিনে বাগান মালিকদের থেকে।’
সদর উপজেলার দাপুনিয়ার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যখন লিচু মুকুল এসেছিল, তখনই পাবনায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে লিচুর মুকুল ঝরে গেছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা না দেয়াতে লিচু অনেক নষ্ট হয়েছে। লিচু ফেটে গেছে, পচে গেছে ইত্যাদি সমস্যা দেখা গেছে। তারপরও দাম যেহেতু বেশি তাই আমরা চাষীরা খুশি।’
তবে কৃষকদের সঠিক পরিচর্যার নির্দেশনার দাবি করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জামাল উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই যে গাছে ৯০-৯৫ শতাংশ লিচু ধরে পরের বছরে সেই গাছে ৬০-৬৫ ভাগ গাছে মুকুল আসে। এ জন্য এবার ফলন কম। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। আমাদের কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় দমন বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়েছিলাম। বৈরী আবহওয়ার কারণে গাছে স্পে করারও পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং কৃষকরা সেটা করেছে।’
বিবার্তা/পলাশ/সউদ/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]