সিলেটে ঈদকে ঘিরে সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র; থানায় মামলার বদলে হয় জিডি!
প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:০৯
সিলেটে ঈদকে ঘিরে সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র; থানায় মামলার বদলে হয় জিডি!
সিলেট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সিলেট নগরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক ছিনতাইকারী চক্র। মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ে টার্গেটে রয়েছে বিভিন্ন স্পট। এসব স্পটে ছিনতাইয়ে জড়িত চক্রের শতাধিক সদস্য। ছিনতাইয়ের এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ এসব ঘটনা তেমন গুরুত্ব নিয়ে দেখে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ১০টি মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। কিন্তু থানায় গেলে পুলিশ চুরির মামলা না নিয়ে, হারানোর জিডি করতে পরামর্শ দেন।


জানা যায়, বিভিন্ন মার্কেট এলাকা, চলন্ত গাড়ি ও যেসব স্থানে মানুষের আনাগোনা কম সেসব স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি। এছাড়া যেসব জায়গায় মানুষের জটলা বেশি, সেখানে দুর্বৃত্তরা মুহূর্তের মধ্যে হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ।


এদিকে সামনে ঈদুল ফিতর। নগরীতে বেড়েছে মানুষের ভীড়। আর এ ভীড়কেই সহজ পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে দুর্বৃত্ত চক্রটি। নগরীর বিভিন্ন গলি বা সড়কে পথ আগলে যাত্রীর সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারীরা।


নগরীতে বিভিন্ন কাজে আসা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ছিনতাই হচ্ছে মধ্যরাত থেকে সকাল ৮টার মধ্যে। আর চুরির ঘটনা হয় সকাল ৮টা থেকে, চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। ছিনতাইকারীরা ওই সময়কে টার্গেট করে রাস্তায় অবস্থান নেয় এবং ছিনতাই করছে নিয়মিত। ঈদকে সামনে রেখে রমজানের শুরু থেকেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে এ নগরীতে।


সিলেট কদমতলীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কয়েক মাস আগে দক্ষিণ সুরমায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন এক এনজিও কর্মকর্তা। এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতার করলেও এলাকায় ছিনতাই কমছে না। এক্ষেত্রে কদমতলী ফাঁড়ি পুলিশ সদস্যদের দায়ী করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।


হুমায়ূন রশীদ চত্বর, কদমতলী এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কদমতলী বাস টার্মিনাল ও প্রবেশমুখ হুমায়ূন রশীদ চত্বরে কয়েকটি ছিনতাই পার্টি রয়েছে। গত ১০-১২ দিনে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।


ভুক্তভোগীদের দাবি এসব ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে কিছু অসাধু পুলিশের সখ্যতা রয়েছে বলেই এখানে দিন দিন বাড়ছে চুরি-ছিনতাই।


সম্প্রতি ওসি হিসেবে যোগদানের পর সরব হয়েছেন দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মো. শামসুদ্দোহা। গত কয়েকদিনে ২৪ জন ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ। ঈদকে সামনে রেখে রমজানের শুরু থেকে দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকা অভিযান জোরদার করা হয়েছে। মাদক বিক্রিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।


দক্ষিণ সুরমার পরেই হচ্ছে নগরীর উত্তর সুরমার উপশহর গলির মুখ, সুবহানীঘাট, ধোপাদিঘীরপাড়, বন্দরবাজার এলাকায় ছিনতাইকারীদের সিন্ডিকেট রয়েছে। এরা হচ্ছে নগরীর কাস্টঘর কেন্দ্রীক ছিনতাইকারী চক্র।


বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান খুনের ঘটনার পর ওই এলাকায় ছিনতাইসহ নানা ঘটনা কিছুটা কমলেও ফের সরব হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে ওই এলাকার ছিনতাইকারীরা। যদিও কতোয়ালী থানা ও বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে আটক করেছে।


খুচরা বিক্রেতারা ভোর রাতে বাজারমুখী হলেই ধোপাদিঘীরপাড়, সুবহানীঘাট পাম্পের সামনে এলাকায় ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের। কয়েকজন ব্যবসায়ী ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে। এরপরও মধ্যরাত থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ভয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা।


সুবহানীঘাট ফাঁড়ির অদূরে থেমে থেমে ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখন আতঙ্কিত অনেক ব্যবসায়ীরা।


নগরীর ক্বীন ব্রিজ এলাকায় রয়েছে ভাসমান ছিনতাই চক্র। ভোররাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীদের টার্গেট করে তারা। কীনব্রিজ, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, কোর্টপয়েন্ট, তালতলা এলাকায় তারা অবস্থান করে।


এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) সুদীপ দাস জানান, ছিনতাই, চুরি রোধে পুলিশ বিশেষ টহল দিচ্ছে। উপ-পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে নগরে ভোর বেলা টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সঙ্গে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ থাকছে।


এছাড়া নগরীতে অতিরিক্ত পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। পথচারীরা যাতে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ঈদ ঘনিয়ে এলে নগরের মোড়ে মোড়ে ও মার্কেটে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। তবে-এখন থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।


অপরদিকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দল বেঁধে কয়েকজন কিশোর, যুবক নামেন পথচারীদের মোবাইল চুরির মিশন নিয়ে। শুধু বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, সোবহানঘাট, সুরমা পয়েন্ট, টার্মিনাল এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ১০টি মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটে। কিন্তু থানায় গেলে পুলিশ চুরির মামলা না নিয়ে, হারানোর জিডি করতে পরামর্শ দেন।


বিগত এক বছরে শুধু কতোয়ালী থানায় প্রায় হাজার খানেক জিডি হয়েছে। কিন্তু চোরাই হওয়া মোবাইল উদ্ধার হয় না কখনো। জিডি পড়ে থাকে মাসের পর মাস, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে যোগযোগ করলে পাওয়া যায় না কোন সদুউত্তর।


অন্যদিকে মোবাইল চোরদের নিরাপদ ঘাটি সিলেট নগরীর কাষ্টঘর এলাকার জেল কোয়ার্টারের পরিত্যক্ত বাসভবনগুলো। যদিও গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে পুলিশ আটক করেছে। আটক করা হয়েছিলো চোরদের গডফাদার মৌলভীবাজারের (বর্তমান দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ীর জৈনপুরের) বাসিন্দা শহিদকে। কিন্তু মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা কতোয়ালী থানার এস.আই-এর দায়িত্বহীনতায় আদালত থেকে ছাড়া পায় শহীদ।


বিবার্তা/ফয়সাল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com