তেল-সারের দাম বাড়ে, ধানের দাম বাড়ে না
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৩, ১৫:৩৭
তেল-সারের দাম বাড়ে, ধানের দাম বাড়ে না
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

জ্বালানি তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধান উৎপাদনে খরচ বেড়েছে কৃষকের। জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সেচ, পরিচর্যা, শ্রমিকের মজুরি সব ক্ষেত্রেই বাড়তি খরচের বোঝা টানতে হচ্ছে কৃষকদের। সঙ্গে যোগ হয়েছে রাসায়নিক সারের কৃত্রিম সংকট। কৃষকদের অভিযোগ সারের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি রোধ না করলে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে খরচ উঠবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।


ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল এলাকার কৃষকরা জানান তাদের আশঙ্কার কথা।


সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার কৃষকরা বোরো ধান রোপনে জমিতে সেচ, জমি প্রস্তুত ও চারা উত্তোলন করে রোপন কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। কিন্তু বর্তমান দ্রব্যমূল্যের আগুন দামে ডিজেল ও সারের কৃত্রিম সংকটের কারণে ধান উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শংঙ্কায় আছেন তারা।


ঠাকুরগাঁওয়ে জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি। যার ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রেক টন। আর এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ধান রোপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি জমিগুলোতে আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যেই রোপণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আলমগীর কবিরের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর বোরো ধানের ক্রয় মূল্য ছিলো ২৬ টাকা কেজি। সেই হিসেবে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রেকটন ধানের উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা অনুযায়ী এবার ৬৯৬ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে।


কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘সরকার বলছে সারের কোন ঘাটতি নাই কিন্তু বাজারে তাদের নির্ধারিত দামে সার পাওয়া যাচ্ছেনা, গেলেও দাম দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ। ইউরিয়া ১২’শ, টিএসপি ১৭’শ ও পটাশ (এমওপি) ১৬’শ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের দিকে না দেখে তাহলে আমরা কৃষক মাঠে মারা যাবো। সরকার চাকুরিজীবীদের বেতন ঠিকি বাড়াচ্ছে কিন্তু কৃষকদের খোঁজ নেন না।


আরেক কৃষক আলতাফ বলেন, ডিজেলের দাম যেভাবে সরকার বাড়াইছে, এতে আমাদের বাঁচার কোন পথ দেখি না। ডিজেলের দাম বাড়ে, সারের দাম বাড়ে। কিন্তু বাজারে গেলে ধানের দাম নাই। বাজারের গায়ে তো হাত দেওয়া যায় না। তাইলে বলেন কৃষক কেমনে বাঁচবে?


বালিয়াডাঙ্গীর কৃষক বাবলু বলেন, ‘ডিজেল ও সার-বিষের দামের জন্য আমরা ক্ষেতের ঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারছি না। টাকার অভাবে এতো দামে আমরা তেল, সার-বিষ কিনে কৃষি করতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকার যদি এসবের দাম একটু কমায় তাহলে আমাদের কৃষককের খুব উপকার হবে।


কৃষক হামিদুর রহমান জানায়, নিজের অল্প জমি থাকলেও বেশিরভাগ সময়ই অন্যের জমি বর্গা চাষাবাদ করি। জ্বালানি তেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধির খবর যেন তার কাছে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার চেয়েও বেশি কিছু। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সারের পর তেলের দাম বাড়ি গেইছে (গেছে)। বিবি বাচ্চাদের নিয়ে কীভাবে বাঁচবো সেইটায় ভাবছি। এখন যদি সরকার তেল সারের দাম কমায় তাহলে ভালো হইবে।


আরেক কৃষক মোস্তফা বলেন, আমি ১০ একর জমিতে এবার বোরো আবাদ করেছি। কিন্তু বর্তমানে কৃষিপণ্যের যে দাম তাতে ৫০ শতকের প্রতি বিঘা জমিতে বোরো আবাদে ২৬ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। যদি ধানের মণ ১৫০০ টাকা থাকে তাহলে হয়তো আমরা একটু লাভবান হবো।


অন্যদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারের কোনো ঘাটতি নেই। জেলায় চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সার মজুদ রয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ বেশি দামে সার বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিবার্তা/মিলন/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com