শিরোনাম
মনের আশা পূরণে ১১০০'শ বছরের গোরকই কূপে মানুষের ঢল
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:০৭
মনের আশা পূরণে ১১০০'শ বছরের গোরকই কূপে মানুষের ঢল
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ঠাকুরগাঁও নেকমরদ ইউনিয়নে অবস্থিত অন্যতম পুরাকীর্তি গোরক্ষনাথ মন্দির। মন্দিরের ভিতরে একটি কূপ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি অলৌকিকভাবে বেলে পাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে এ কূপটি। প্রায় ১১০৩ বছরের পুরোনো এ মন্দির ও বৈচিত্রময় আশ্চর্য কূপ'র পানি সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে মহাপবিত্র। এছাড়াও প্রতিবছরের বাংলা মাসের ফাল্গুনে শিব চতুর্দশী তিথীতে পূণ্য স্নানের জন্য আগমন ঘটে অসংখ্য পূণ্যার্থীর।


জানা যায়, ৯২০ খ্রিস্টাব্দে বেলে পাথলের দ্বারা তৈরি কূপ ও মন্দিরটি নির্মাণ হয়েছিলো এবং নাথ সহজিয়ার মতে গুরু গোরাক্ষ নাথের নামানুসারে কুপ ও স্থানের নাম করণ করা হয়েছে গোরকই। আর এই ‘গোরকই’ ফরিকি স্নান বা বারুনীর মেলা হিসেবে আজও সমানভাবে সমাদৃত। প্রতিবছর ফাল্গুনের শিব চতুর্দশী তিথীতে পাঁচদিন ব্যাপী আয়োজন করা হয় গোরক্ষনাথ বারনী মেলা। আর হাজার বছরের পুরনো কূপে পানিতে স্নান করতে বিভিন্ন জেলার লক্ষ্য লক্ষ্য নর-নারী আসেন।


ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ থেকে পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে ‘গোরকই’ নামক স্থানে গোরক্ষনাথ মন্দিরের অবস্থিত। গোরক্ষনাথ মন্দির ছাড়াও এখানে রয়েছে নাথ আশ্রম। গোরক্ষনাথ মন্দিরটি স্থানীয়দের কাছে গোরকই মন্দির নামে পরিচিত। মন্দির চত্বরে রয়েছে পাঁচটি মন্দির। এছাড়াও রয়েছে তিনটি শিবমন্দির, একটি কালিমন্দির। মন্দিরের পিছনে রয়েছে কালো পাথর দিয়ে নির্মিত একটি কূপ। উত্তারাঞ্চলের লক্ষ্য-লক্ষ্য সনাতন ধর্মাবলম্বীর নারী-পুরুষ পাপ-মোচনের জন্য কূপের পানিতে  স্নান করার জন্য আসেন। কূপটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো লাখ মানুষ স্নান করার পরেও কূপের পানি এক ইঞ্চিও কমে না। আর মন্দিরের উত্তরে রয়েছে একটি পান্থশালা। পান্থশালার দরজায় একটি ফলক বা গ্রানাইট শিলালিপি ছিল যা বর্তমানে ঢাকা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।


আরো জানা যায়, গোরক্ষনাথ ছিলেন নাথ পন্থীদের ধর্মীয় নেতা খীননাথের শিষ্য। নবম-দশম শতাব্দির মধ্যভাগে গোরক্ষনাথের আবির্ভাব ঘটে। তিনি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে মন্দির স্থাপন করেন। অলৌকিক এ কূপটি সেই সময়ে নির্মিত হয়েছে বলে প্রবীনদের ধারনা। আবার অনেকের মতে, গোরক্ষনাথ কোন ব্যক্তির নাম নয়, এটি একটি উপাধি মাত্র। গোরক্ষনাথ অথবা উপাধি চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এই মন্দির ও আশ্রম নির্মাণ করা হয়।


স্থানীয় নারায়নপুর গ্রামের গোতম বর্মন এক দর্শনার্থী বলেন, মন্দিরে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন। যারা এখানে আসেন তারা মূলত মনবাসনা নিয়ে আসেন। যেমন কারও সন্তান না হলেও এখানে এসে প্রথমে এই কূপে স্নান করে শিবমন্দিরে পূঁজা করলে অনেকের সেই মনবাসনা পূরণ হয়। গঙ্গার জল আমাদের ধর্মে যেমন পবিত্র তেমনি এই কূপের পানিও আমাদের কাছে পবিত্র। তাই এই পানি দিয়ে আমরা গোসল করি। কেউ আবার শুদ্ধিকরণের জন্য শরীরে পানি ছিটিয়ে দেয়। পলাশ বর্মন বলেন, ‘এই মন্দির ও কূপটি কে তৈরি করেছে তা আমাদের জানা নেই, তবে আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি কূপটি নাকি অলৌকিকভাবে নির্মিত হয়েছে।


দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা  কুশলা গৌস্বামী নামে এক বৃদ্ধা বলেন, এখানে এসে কূপটিতে স্নান করে মন্দিরে পূঁজা করেছি যাতে আমার মনোবাসনা পূরণ হয়। জামালপুর থেকে আসা সোহাগী রাণী নামে এক গৃহবধু বলেন, মানুষের মুখে শুনে এখানে এসেছি। এসে অনেক কিছু দেখলাম ও মেলা থেকে অনেক কিছু কিনেছি। এখানে অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে।


মেলা আয়োজক কমিটি ও মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমার বর্মন জানান, ‘১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই মেলা আমরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় করে আসছি। এবারো পাঁচদিনের মেলায় প্রায় দশ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে।


গোরকই মন্দিরের সভাপতি কাশীনাথ বর্মন বলেন, ‘৯২০ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু দেশ থেকে গোরক্ষনাথ ও তার বন্ধু নাসির উদ্দিন নামে দুই জন এখানে আসেন। গোরক্ষনাথ এখানে বসবাস শুরু করেন ও নেকমরদে নাসির উদ্দিন। তখনই এখানে অলৌকিকভাবে মন্দির ও কূপটি নির্মিত হয়। তবে কিছু মন্দির আমরা সংষ্কার করে নির্মাণ করেছি। এই কূপটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল লাখ লাখ মানুষ এখানে গোসল করলেও এর পানি এক ফোটাও কমেও না বারেও না।’


তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের সীতাকন্ডু মেলার সাথে মিল রেখে আমরাও এখানে গোরক্ষনাথ শিব রাত্রীব্রত মেলা করে আসছি। শিবরাত্রীব্রত্র করলে ও কূপে স্নান করলে আমাদের মনস্কামনা পূরণ হয়। তাছাড়া পাপও মোচন হয়। এই এলাকার মানুষ দরিদ্র হওয়ায় আমরা মন্দিরের ও কূপের সংস্কার করতে পারছি না। তাই মন্দির ও কূপটিকে সংস্কার করার জন্য সরকারকে দাবি জানাচ্ছি ও অনুরোধ করছি এই মেলাটিকে ব্যাপক পরিসরে করতে আমাদের সহযোগিতা করার। মেলাটি গত রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়ে  বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে শেষ হয়েছে।


বিবার্তা/মিলন/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com