হিলিতে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষীরা
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭:৪৪
হিলিতে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষীরা
হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর হিলিতে প্রথমবারের মতো সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন তারা।


মৌচাষীরা জানান, সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে আর্থিকভাবে তারা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বেকারত্বও দূর হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, একদিকে মৌচাষীরা মধু বিক্রি করে যেমন আয় করছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।


মৌচাষীরা জানান, তারা সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। বাক্সের ভেতর রাখা হয় একটি রানি মৌমাছি। রানি মৌমাছি থাকায় অন্য মৌমাছিরা আসতে থাকে ওই বাক্সে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌচাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এতে তারা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এসব মধু স্থানীয়ভাবে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন মৌচাষিরা। 


হাকিমপুর হিলি পৌর শহর থেকে হিলি-বগুড়া মেইন রোডে মাত্র তিন কি. মি. দূরে ছাতনী গ্রামের সড়কের পাশে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন পার্শ্ববর্তী পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগাড়ী গ্রামের ছামিউল ইসলাম। 


তিনি সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে বাক্স তৈরি করা হয়। বাক্সে উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। ভেতরে কাঠের তৈরি ৭টি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় এক ধরনের সিট লাগানো থাকে। বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌঁমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছির দল। রানি মৌমাছির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে পুরুষ মৌমাছিরা। একটি রানি মৌঁমাছির বিপরীতে প্রায় ১ থেকে দেড় হাজারের মতো পুরুষ মৌঁমাছি থাকে একেকটি বাক্সে। 


মৌচাষি আব্দুর রহিম বলেন, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। বাকি আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষিয়ে রাখতে হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়। 


তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। আমি এই মাঠে ৮০টি বাক্স ফেলে রেখেছি। প্রতি কেজি মধু বিক্রি করছি ৪০০ টাকা দরে।


সরিষার ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা মধু কিনতে আসা প্রভাষক শহিদুল ইসলাম জানান, আমার জানামতে আমাদের উপজেলায় প্রথম বারের মতো সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা। আমি ৬০০ টাকা দেড় কেজি মধু নিয়েছি। আসল মধুর যে একটা স্বাদ আছে সেটা সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধুতে পেলাম এবং মৌচাষিদের সরিষার হলুদ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ পদ্ধতিটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। 


গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী থানার মোটরসাইকেল আরোহী সাইফুল ইসলাম জানান, আমি ব্যক্তিগত কাজে পলাশবাড়ী থেকে মোটরসাইকেল যোগে হিলি শহরে যাচ্ছিলাম হাঠাৎ রাস্তার পাশে সরিষার হলুদ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষীরা দেখতে পেয়ে নেমে আসলাম। তাদের মধু সংগ্রহ বিষয়টি নিজ চোখে দেখলাম। মধু খেয়ে দেখলাম আসলেই অরিজিনাল মধুর যে স্বাদ তা এই মধুতে আছে, তাই ৪০০ টাকা দিয়ে এক কেজি কিনে নিলাম। 


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা জানান, এবার উপজেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে। চাষীরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ১ টি পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নে ২৪'শ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মীরা সরিষা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। 


তিনি আরও বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ গুণ বেড়ে যায়। এতে সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহও একটা লাভজনক ব্যবসা। এরফলে একদিকে মৌচাষিরা মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে যেমন লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে সরিয়া ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।


বিবার্তা/রব্বানী/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com