রবিবার খাগড়াছড়িতে আধাবেলা সড়ক অবরোধের ডাক
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
রবিবার খাগড়াছড়িতে আধাবেলা সড়ক অবরোধের ডাক
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে আগামী রবিবার (১৫ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি জেলায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।


শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় খাগড়াছড়ি সদরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সড়ক অবরোধের কর্মসূচি থেকে ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সফরকে সামনে রেখে সন্ত্রাসসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। সংগঠনটির প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


বিক্ষোভ মিছিল শেষে খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফর সংগঠক ও সাবেক পিসিপির সভাপতি বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি ক্যামেরন দেওয়ান ও পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমা।


সমাবেশে ইউপিডিএফ নেতা বিপুল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট বাহিনীর সন্ত্রাসসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে আগামী রোববার খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা (সকাল ৬টা হতে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) সড়ক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হলো। অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে জেলার সকল যানবাহন মালিক, শ্রমিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চুক্তিকে ঝুলিয়ে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে। বিচার বহির্ভুত হত্যা, অন্যায় ধরপাকড়, মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক রাখা, তল্লাশি, হয়রানি, শারীরিক নির্যাতনসহ নানা নিপীড়ন খুন, গুম, অপহরণ, নির্যাতন, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাহিনী সৃষ্টির পর পরই তাদেরকে ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাকে হত্যা, একই বছর ১৮ আগস্ট স্বনির্ভর-পেরাছড়ায় প্রকাশ্যে দিবালোকে ভারী অস্ত্রে গুলি চালিয়ে ছাত্র-যুব নেতাসহ ৭ জনকে হত্যার ঘটনাসহ এ যাবত ইউপিডিএফের অর্ধশত নেতা-কর্মী ও সমর্থকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারে সরকার-প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বরং দিন দিন এ সন্ত্রাসীদের আরো বেপরোয়াভাবে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন।


বিপুল চাকমা আরো বলেন, সরকার শুধু নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, গুম করে ক্ষান্ত হচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে চালানো হচ্ছে ভূমি আগ্রাসন, নারী নির্যাতনের মতো জঘন্য ঘটনা। বান্দবানের লামায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুমভূমি বেদখল করে তাদেরকে নিজেদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদে ভূমিদস্যু রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানিকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে, মহালছড়ির মাইসছড়িতে সেটলার বাঙালিদের লেলিয়ে দিয়ে ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র চলছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়িদের ওপর এমন অন্যায়-অবিচার করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।


তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় মদদে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে তা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন। ২০১৮ সালে স্বনির্ভর বাজারে যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল তার তদন্ত রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করুন এবং উক্ত ঘটনার বিচারের জন্য পদক্ষেপ নিন।


বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় মদদে সংঘটিত সকল হত্যা ও গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন বন্ধ করা, সেনা শাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’ তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট ঠ্যাঙারে বাহিনী ভেঙ্গে দিয়ে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবি জানান। খাগড়াছড়ি সদর ছাড়াও একই দাবিতে জেলার পানছড়ি এবং রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, সাজেক ও কাউখালীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে এতে জানানো হয়।


উল্লেখ্য, আগামী ১৬ থেকে ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ও কমিশনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় সফর করার কথা রয়েছে।


বিবার্তা/আল-মামুন/বিএম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com