শিরোনাম
পাঙ্গাসের গ্রাম আটিয়া!
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৪৫
পাঙ্গাসের গ্রাম আটিয়া!
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া গ্রামের পাঙ্গাস মাছের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ি-বাড়ি পুকুর। ঘরে-ঘরে পাঙ্গাস চাষী। পুকুর ভরা পাঙ্গাস মাছ। এই গ্রামের সবাই এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। অনেকেই পাঙ্গাস মাছ চাষে ঝুঁকছেন। ফলে এ গ্রামে বেকারত্ব নেই বললেই চলে। সবাই এখন স্বাবলম্বী।


পুকুরের মাটি ও পানির গুনগত মান এবং পুষ্টিকর খাবারে উৎপাদিত পাঙ্গাস জেলার মানুষের আস্থা কুঁড়িয়েছে। সেই সাথে জেলার নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের আমিষের চাহিদা পুরণ করছে আটিয়ার পাঙ্গাস। ১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালে দেশীয় মুদ্রা সংস্করণে দশ টাকার নোটের প্রচ্ছেদে স্থান পাওয়া ৪০০ বছরের পুরনো মসজিদটির গ্রাম আটিয়া। পাশেই রয়েছে শাহান শাহ আদম (কাশ্মিরী) মাজার শরীফ। এজন্য গ্রামটির পরিচিতি দেশব্যাপী। এবার যোগ হয়েছে পাঙ্গাস চাষ। পাঙ্গাসের গ্রাম নামে নতুন পরিচয় আটিয়া গ্রাম।


১৯৯৪ সালে আসাদুজ্জামান আসাদ নামের এক ব্যক্তি প্রথম আটিয়াতে পাঙ্গাস মাছ চাষ শুরু করেন। আসাদের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে আটিয়ার ঘরে-ঘরে তৈরি হয়েছে পাঙ্গাস চাষী। এই গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক পুকুরে এখন পাঙ্গাস চাষ হচ্ছে। পোনা মজুদ, পাঙ্গাস চাষ, মাছ ধরা, এমনকি বাজারে বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাঙ্গাস চাষের সাথে যুক্ত। দুইযুগের পাঙ্গাস চাষে গ্রামের অধিকাংশ পরিবার এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।


গত কয়েক বছরে ধাপে-ধাপে বেড়ে খাবারের দাম দ্বিগুন হওয়ায় পাঙ্গাস চাষের আগাম দিনগুলো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। খাবারের দাম কমানো, মাছ সরবরহের ব্যবস্থাসহ সরকারি পৃষ্টপোষকতা এই মুহুর্তে জরুরী বলে মনে করছেন এই গ্রামের পাঙ্গাস চাষীরা।


পাঙ্গাস চাষী আসাদের এখন চারটি পুকুর। দুইটিতে ৩০ হাজার পাঙ্গাস চাষ করেন। বাকি দুইটি পুকুরে পাঙ্গাসের পোনা মজুদ রাখেন। তিনি বলেন, আমি প্রথম এই গ্রামে পাঙ্গাস চাষ শুরু করি। গ্রামে এখন দেড় শতাধিক পুকুরে পাঙ্গাস চাষ হচ্ছে। বর্তমানে খাবারের দাম দ্বিগুন। ৮০০ টাকা মূল্যের খাবারের বস্তা হয়েছে ১৮০০ টাকা। মাছের দাম আগের মতোই রয়েছে। পাঙ্গাস চাষে দুইবার সেরা চাষীর পুরস্কার পেলেও বর্তমানে পাঙ্গাস চাষ নিয়ে হতাশায় রয়েছেন আসাদ।


আসাদের পর ১৯৯৯ সালে পাঙ্গাস চাষ শুরু করেন বায়েজিদ হোসেন জুয়েল। তার চারটি পুকুরে ১৫ থেকে ২০ হাজার পাঙ্গাস চাষ করেন। জুয়েলও জানালেন মাছের খাবারের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কথা। ৩৪ টাকা কেজির খাবার হয়েছে ৫৪ টাকা। প্রতি কেজিতে ২০টাকা মূল্য বেড়েছে। খাবারের দাম কমানোর দাবি জানান এই পাঙ্গাস চাষীও।


ডা. লুতফর রহমান ও জায়েদুর রহমানরা সাত ভাই মিলে ৬টি পুকুরে পাঙ্গাস চাষ করেন। খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডা. লুতফর রহমান নিয়েছেন বিকল্প পদ্ধতি। খাবারের সব ধরনের কাঁচামাল কিনে কারখানা থেকে ভাঙিয়ে নেন। ফলে মাছের খাবারের উর্ধ্বগতিতেও লাভের হিসেব আগের মতোই গুনছেন তিনি। কয়েকজন আবার বাড়িতে খাবার তৈরির জন্য ছোট আকারের মেশিন নিজেই ক্রয় করেছেন। তাদের খাবার খরচ আরো কমে এসেছে। তবে বেকায়দায় পড়েছে যেসব চাষীরা প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ায়।


খায়রুল হোসেন বাচ্চুও চারটি পুকুরে পাঙ্গাস চাষ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে পাঙ্গাস চাষ করে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনলেও বর্তমানে খাবারে দাম বেড়ে যাওয়ায় হোঁচট খাচ্ছেন তিনি।


স্বামী মারা যাওয়ার পর বিধবা নারী ঝরনাও শুরু করেন পাঙ্গাস চাষ। বেঁচে থাকা অবস্থায় স্বামীর কাছ খেকে শিখেছিলেন কিভাবে পাঙ্গাস চাষ করতে হয়। মাছ চাষ করেই দুই মেয়ের বিয়ের খরচ যুগিয়েছেন তিনি। বাকি দুজনের ভরণ পোষণের জন্য মাছ চাষ ছাড়েননি এখনও।


ঝরনার মতো গ্রামের অনেকেই প্রতি হাজার পাঙ্গাস চাষ করে বছরে ২৫/৩০ হাজার টাকা উপার্জন করেছে। একজন চাষী ২৫ থেকে ৩৫ হাজার পাঙ্গাস চাষ করে গ্রামের অর্থনৈতিক চাকা বদলে দিয়েছে। একদিকে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছে, অন্যদিকে গ্রামের অর্থনীতিকে মজবুত করেছেন। মাছের বর্তমান পাইকারী বিক্রয় মূল্য মন প্রতি ৪০০০ থেকে ৪২০০ টাকা। পাঙ্গাস পালনে খাবারের দাম দফায়-দফায় বেড়ে দ্বিগুন হলেও মাছের পাইকারী দাম কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১০৫ টাকার মধ্যেই থাকছে। সম্প্রতি চাষীরা ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে। খাবারের দাম না কমলে পাঙ্গাস চাষ থেকে ছিটকে পড়বে চাষীরা এমনটাই ভাবছেন এ পেশার সাথে সম্পৃক্তরা। প্রয়োজন খাবারের দাম কমানো। প্রয়োজন সরকারি সহেযোগিতা।


দেলদুয়ার উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, আটিয়ার পাঙ্গাস প্রসিদ্ধ। পাঙ্গাস চাষ করে গ্রামের অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা সাধ্যমতো পাঙ্গাস চাষীদের সহযোগিতা করছি। প্রশিক্ষণসহ নানা পরামর্শ দিয়ে মৎস্য অফিস সবসময় এসব মাছ চাষীদের পাশে আছে।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/জনি/বাবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com