শিরোনাম
‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডব’ গণশুনানিতে যা বললেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২১, ২০:৫৬
‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাণ্ডব’ গণশুনানিতে যা বললেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘চলতি বছরের ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে তাণ্ডব চালানো হয় সেটি হেফাজত ইসলামের নেতৃত্বে মাদরাসা ছাত্ররা ঘটায়। এ হামলা ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত। হামলা ঠেকাতে পুলিশের কোনো কার্যকরী ভূমিকা ছিলো না। পুলিশ নিজেদের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলেন। এমনকি সাদা পোশাক পরে পালিয়ে যান তারা। তাণ্ডব থামাতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের ভূমিকাও ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ।’


ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ও কুমিল্লার সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সন্ত্রাস সম্পর্কে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ এর তদন্ত ও গণশুনানিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের স্বাক্ষ্যে এসব বিষয় উঠে আসে।


একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর উদ্যোগে এ তদন্ত ও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।


রবিবার (১৭ অক্টোবর) বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা নাগাদ হওয়া কার্যক্রমে বিকেল সাড়ে ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৪ জন লিখিত ও মৌখিক স্বাক্ষ্য দেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রায় ৫০ মিনিট সময় দেওয়া স্বাক্ষ্যে তাণ্ডবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।


দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা স্বাক্ষ্য নেন গণকমিশনের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ নূরুল আনোয়ার, গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ, মাওলানা জিয়াউদ্দিন। এ সময় স্বাক্ষীদেরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়।


স্বাক্ষ্য দিতে গিয়ে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম জানান, ২৫ তারিখ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওষুধ আনা জন্য বের হয়ে দেখেন দলে দলে লোকজন ট্রাকে করে আসছেন। অনেকে হেলমেট পড়া ছিলো।


হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা দিলীপ নাগ বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি এলাকায় হামলা হলে ইউএনও, ওসিকে ফোনে জানালে তারা নিরাপত্তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এমনকি তারা নিজেরাই বিপদগ্রস্ত আছেন বলে জানান।’ অ্যাডভোকেট কাজী মাসুদ অভিযোগ করেন, মাদরাসা ছাত্ররা এ তাণ্ডব চালিয়েছে।


জীবন আচার্য্য নামে এক যুবক জানায়, আনন্দময়ী কালীবাড়িতে হামলার সময় তার ওপর আঘাত আসে। ২৮ মার্চ সংসদ সদস্যের অফিসে হামলা হতে দেখে ৯৯৯ এ কল করা হলে সব জায়গায় পুলিশ আছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।


মাওলানা ক্বারী আনিসুর রহমান জানান, সবকিছুর নেতৃত্বে ছিলে হেফাজত। মসজিদের মাইকে হাইয়ালাল জিহাদ বলতে তিনি শুনেছেন।


সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী তার স্বাক্ষ্যে বলেন, ‘২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গার খবরে আমি হেফাজত নেতা মোবারক উল্লাহ’র সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে জানান বাধা দিলেও কেউ কথা শুনছে না। ওই দিনই দল ভারি করে রেলওয়ে স্টেশনে হামলা করা হয়।’


সংসদ সদস্য আরো জানান, এ হামলা ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত। তাণ্ডব চালানো হবে বলে ২৫ তারিখই ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে বিষয়টি তিনি জানতেন না। ঘোষণার পর নাকি পুলিশ পাহারায় তাদেরকে বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তারা কেউ কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেননি। যদি কারফিউ বা ১৪৪ ধারা জারি করা হতো তাহলে পরবর্তীতে এত বড় ধরণের ঘটনা ঘটতো না। ২৭ তারিখ হাইওয়ে থানা পুলিশ পোশাক বদল করে নিজেদেরকে রক্ষা করে। একজন এডিশনাল এসপি পালিয়ে গিয়ে জীবন বাঁচান।


স্বাক্ষ্য দেয়ার সময় তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাণ্ডবকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। আমার ইউনিভার্সিটির সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল রক্ষায় যে মাওলানা কাজ করেছে তার নামে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


বিবার্তা/আকঞ্জি/ ইমরান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com