শিরোনাম
মেয়ের জন্য দুধ কিনতে আর্টিস্ট বাবা এখন রিকশা চালক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২১, ২০:০৭
মেয়ের জন্য দুধ কিনতে আর্টিস্ট বাবা এখন রিকশা চালক
বরিশাল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

‘আমার দুই বছরের একটা মেয়ে আছে। মেয়েটাকে দুই দিন ধরে দুধ কিনে দিতে পারছি না। মেয়েটা আমাকে বলে, আব্বা আমি দুধ খাবো। আমাকে দুধ এনে দাও। বাচ্চাটা খুব কান্নাকাটি করে। বাচ্চার কান্না দেখে আমি আর ঘরে থাকতে পারিনি। রিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছি। মেয়ের নাম মুসকান জাহান তাইয়্যেবা। মুসকান অর্থ হাসি। আমার মেয়েটা সত্যিই হাসিখুশি থাকে। সেই হাসি কেড়ে নিচ্ছে ঘরের অভাব।’


কথাগুলো বলছিলেন মাঝ বয়সী মাহাবুব আলম। পেশায় একজন আর্টিস্ট। কিন্তু করোনার প্রবল আঘাত আর লকডাউনের বাধ্যবাধকতায় হয়েছেন রিকশাওয়ালা।


বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোড জগদীশ স্বারস্বত গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশেই নিজের দোকান। লকডাউনে সেই দোকান খুলতে পারেন না অনেক দিন। যতটুকু পুঁজি ছিল তা গত বছর ঘরে বসেই শেষ করেছেন। এ বছর স্বামী-স্ত্রী মিলে এক বেলা ভাত আর দুই বেলা মুড়ি-পানি খেয়ে পার করেছেন টানা দুই মাস।


তারপরও মান-সম্মানের ভয়ে ঘরে ছিলেন। কিন্তু মেয়ে দুধ খাবে বলে যখন কান্না করেছে তখন আর বসে থাকতে পারেননি এই বাবা। দিনে লোকলজ্জার ভয়ে বের না হলেও রাতে রিকশা নিয়ে নেমে পড়েন নগরীতে।


বুধবার (২৮ জুলাই) রাতে কথা হয় মাহবুব আলমের সঙ্গে। রিকশার হ্যান্ডেল ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, পারেন না পেশাদার রিকশাচালকের মতো প্যাডেল ঘুরাতে। কিছু না জানলেও শুধু জানেন ঘরে বাজারের টাকা নেই, মেয়ের জন্য দুধ নেই। এসব কিনতে হলে তাকে প্যাডেল ঘুরাতে হবেই।


কথা বলতে বলতে অঝোড়ে কাঁদেন। ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে থাকেন, আমার যে করুণ অবস্থা তা কারো কাছে বলতেও পারি না, আবার দুই হাত বাড়িয়ে সাহায্যও চাইতে পারি না। আমি একজন আর্টিস্ট। এই দুই হাত দিয়ে মানুষের শখের ছবি আঁকছি। আমার হাতে ছিল রঙ তুলি। এখন সেই হাতে রিকশার হ্যান্ডেল ধরেছি।



‘রিকশাচালকদের খাটো করছি না’ উল্লেখ করে বলেন, জগতে সকল কাজ সকলের জন্য না। করোনা আর লকডাউন আমাকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। পথে বসিয়ে দিয়েছে। করোনার সময় আমি অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছি। কারো কাছ থেকে একটি টাকাও সাহায্য পাইনি। কেউ নাই আমাকে সাহায্য করার মতো।


আমার দোকানের নাম মাহাবুব আর্ট। ওখানে সাইনবোর্ড, কম্পিউটার সিল, পাথর খোঁদাই, টাইলস খোঁদাইয়ের কাজ করতাম। কিন্তু দুই মাসের অধিক সময় ধরে দোকান খুলতে পারছি না। দোকান মালিককে অগ্রিম যে টাকা দিয়েছি তা হয়তো বন্ধ থাকা অবস্থায় ভাড়া বাবদ কেটে যাবে। নিজের আর কোনো পুঁজি নেই রিকশা চালানো ছাড়া।


১৯৯১ সালে এসএসসি পাস করা মাহবুব আলম বলেন, আমি খুব করুণ অবস্থায় আছি। কেউ যদি থাকেন আমার দুই বছরের বাচ্চাটির মুখের দিকে তাকিয়ে একটু সাহায্য করুন। এই মাহাবুবের মতো কোনো আর্টিস্ট যেন না খেয়ে মারা যান সেজন্য সকলের কাছে অনুরোধ জানান।


বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় জেলা সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজের। তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো। জেলা প্রশাসন এবং সমাজসেবা থেকে অসংখ্য মানুষকে সহায়তা করা হচ্ছে। তার সাহায্যের দরকার হলে জানালেই হবে, আমরা পৌঁছে দেব।


বিবার্তা/ইমরান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com