বিশেষ প্রতিবেদন
রাস্তা নয়, যেন জলাশয়; আছে ড্রেনে পড়ারও ভয়!
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ২১:৫০
রাস্তা নয়, যেন জলাশয়; আছে ড্রেনে পড়ারও ভয়!
সামিনা বিপাশা
প্রিন্ট অ-অ+

রাস্তা নয়, যেন জলাশয়, আছে ড্রেনে পড়ারও ভয়। তবে, রাস্তাটি জলাশয় বা পুকুর হলেই যেন বেঁচে যেতেন এলাকাবাসী, অন্তত সাঁতরে পার হওয়া যেত। এমন বেগতিক দশা নিয়ে না সাঁতরাতে পারছেন, না পারছেন হাঁটতে বা যানবাহনে চড়ে রাস্তাটি পার হতে। কেউ বুকের সন্তানকে জাপটে ধরে, কেউ ড্রেনে পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়ে কেউবা রাস্তার ময়লা পানিতে নাকানি-চুবানি খেয়ে যাচ্ছেন গন্তব্যে। কখনো রিক্সা উলটে যাচ্ছে, কখনো আবার গাড়ির চাকা যাচ্ছে ফেঁসে। ম্যানহোলগুলোর ঢাকনা নেই বললেই চলে, একটু বৃষ্টিতেই প্রায় প্রতিদিন খোলা ম্যানহোল দিয়ে রাস্তায় উপচে ওঠে ময়লা পানি। বলছি রাজধানীর মীরহাজীরবাগ-জুরাইন পাইপ রাস্তা ও তৎসংলগ্ন এলাকার কথা।


মূলত ঢাকা মহানগরের মীর হাজারীবাগ, দোলাইরপাড়, পাড় গেণ্ডারিয়া নিয়ে গঠিত ৫১নং ওয়ার্ড। ওয়ার্ডটি ঢাকা মহানগরের শ্যামপুর ও যাত্রাবাড়ী থানায় অবস্থিত। ৫৪নং ওয়ার্ড ঢাকা মহানগরের করিম উল্লারবাগ, নতুন জুরাইন আলমবাগ, পশ্চিম জুরাইন, উত্তর জুরাইন ও জুরাইন মাজার এলাকা নিয়ে গঠিত। ৫৪নং ওয়ার্ড ঢাকা মহানগরের শ্যামপুর থানায় অবস্থিত। ওয়ার্ড দুটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ১৭৭, ঢাকা-৪ আসনের অন্তর্গত।



জুরাইন থেকে দয়াগঞ্জ যাওয়ার পথিমধ্যে পড়ে ৫১ ও ৫৪নং ওয়ার্ড সংলগ্ন রাস্তা। রাস্তাগুলো অত্যন্ত ভাঙাচোরা, পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা খুবই খারাপ- যার ফলে কয়েকদিন পরপরই ড্রেনের পানি উপচে ওঠে রাস্তায়। কোন কোন ড্রেন আবার বিশাল গর্তের মতো মুখ খোলাও। দীর্ঘ সময় পরপর সামান্য সুড়কি ফেলা আর ড্রেনগুলো নামকাওয়াস্তে পরিষ্কার করা ছাড়া এই রাস্তার সংস্কার বা উন্নয়নে নেই কোনো উদ্যোগ। এলাকার নিত্যদিনের প্রয়োজনে ব্যবহৃত এই রাস্তার প্রতি একদমই উদাসীন এলাকার জনপ্রতিনিধিগণ।


এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তাটি সংস্কারে জনপ্রতিনিধিরা শুধু প্রতিশ্রুতিই দেন কিন্তু পরবর্তীতে আর কার্যকরী উদ্যোগ নেন না কেউই। অতি দুঃখেই হাসতে হাসতে রাস্তার বিষয়ে একজন বলেন, কেউ কথা রাখে না। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কোনো এলাকার রাস্তার এরকম বেহাল দশায় থাকতে পারে- বিষয়টি অনেকটা দুঃস্বপ্নের মতো। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাস্তাটি ভাঙতে ভাঙতে এখন দুর্ভোগের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছেন এলাকাবাসী। তারা একপ্রকার সুফল প্রাপ্তির আশা ছেড়েই দিয়েছেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫১নং ওয়ার্ডের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিবার্তাকে বলেন, এই রাস্তায় আমার দোকান, এই রাস্তা তো আমি বহু বছর যাবত ভাঙাচোরা দেখতেছি। কয়েকদিন পর পর একটু সুরকি-টুরকি ফেলে, তাতে রাস্তাটা আরো খারাপ হয়। তারপর যেই সেই। রাস্তাডা আর কোনোদিন ঠিক হইল না। সবাই নির্বাচনের আগে কয় ঠিক করবো, কিন্তু নির্বাচন হইলে ভুইল্যা যায়। এত খারাপ রাস্তা, এটা কী ঢাকা শহর! কে কইব!


জুরাইন এলাকার আরেক বাসিন্দা ফিরোজ বিবার্তাকে বলেন, এই রাস্তার কাজ কেউ করতে চায় না। টেন্ডার হলেও কন্ডাক্টর কাজ করতে চায় না। উপর মহল থেকেই কাজ আটকে রাখে। মেয়র সাহেব আসছিলেন কয়েকদিন আগে, উনি বলছেন কাজ হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছু হবে- আমাদের এরকম কোনো আশা নাই।


৫১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিয়ামুল বিবার্তাকে বলেন, এভাবে কতদিন চলা যায়? কতগুলো দিন ধরে এই অবস্থা। আমরা ভোট দেই, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না।


৫৪নং ওয়ার্ডের আলিফ নামের এক শিক্ষার্থীর মা বিবার্তাকে বলেন, বাচ্চাকে স্কুলে আনা-নেওয়ার সময় এই রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। কী যে খারাপ অবস্থা। ছেলে স্কুলেই যেতে চায় না, রাস্তার ময়লা পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে। এখন এইরকম হলে বর্ষাকাল আসতেছে সামনে- তখন কী হবে? আর এত পচা পানি।


রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না বা আদৌ নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে ৫৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. মাসুদ বিবার্তাকে বলেন, ৫৪নং ওয়ার্ডে বহু কাজ হচ্ছে। পুরান ঢাকার যে নর্দমার পাইপগুলো সেগুলো অনেক আগে বসানো হয়েছে। আমাদের প্রতি বছর যে বাজেট দেয়, আমরা সেগুলো দিয়ে কাজ করি। মাননীয় মেয়র মহোদয় যেখানে বেশি সমস্যা সেই কাজগুলো করতেছেন। আশেপাশের যেগুলো যেমন শাহাদাত হোসেন রোড, এটার কাজ গত বছর করা হয়েছে। এই বছরও কাজ চলতেছে, হয়তো খুব দ্রুত গতিতে করা হবে। এমপি মহোদয়ের যে বাজেট আছে উনি সেটা দিয়ে এই কাজ করিয়ে দিবেন। উনি বলেছেন মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে, রাস্তার কাজটাও হবে।



রাস্তার বেহাল দশার মধ্যেই পরপর অনেকগুলো ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. মাসুদ বিবার্তাকে বলেন, ঢাকনা আসলে কয়েকদিন পরপর চুরি হয়ে যায়। এগুলো সবসময় আমাদের পক্ষে কন্ট্রোল করা সম্ভব না। আমরা অফিসিয়াল কাজ করবো, না চোর পাহারা দিবো বলেন। তবে মেয়র মহোদয়ের সাথে কথা হইছে, অনেক রাস্তার কাজ হয়েছে- এটাও হবে।


৫১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান হাবুর কাছে রাস্তা সংস্কার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, দু একদিনের মধ্যে কাজ শুরু হয়ে যাবে। মেয়র সাহেব নির্দেশ দিয়েছেন, টেন্ডার হয়ে গেছে, কাজ শুরু হয়ে যাবে।


এই প্রসঙ্গে কথা বলতে ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মো. আওলাদ হোসেনকে একাধিকবার মোবাইলে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com