বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বিআরটিএর যৌথ উদ্যোগে বাসে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হলেও ঢাকার একাধিক রুটে অসংখ্য লোকাল ও সিটিং বাস সার্ভিস চলাচল করছে। নির্দেশনা অমান্য করেই রাজধানীজুড়ে এখনো বেশ কিছু পরিবহন কোম্পানি সুযোগ পেলেই আদায় করছে বাড়তি ভাড়া। বাস মালিকরা বলছেন, ওয়েবিল যাত্রী ও পরিবহন মালিকদের সুবিধার জন্যই রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর বেশ কিছু ব্যস্ততম পয়েন্টে বাসযাত্রী ও পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব চিত্র উঠে এসেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গাবতলী থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যাওয়া পরিস্থান, বসুমতি, তেতুলিয়া পরিবহনের একাধিক সিটিং সার্ভিস বন্ধ থাকলেও ওয়েবিল পদ্ধতিতেই ভাড়া আদায় করছেন চালকের সহকারী। সরকার-মালিক পক্ষের যৌথ উদ্যোগে প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ২ টাকা ৪০ পয়সা নির্ধারণ করা থাকলেও দূরত্ব যাই হোক না কেন, ওয়েবিল চেক হয়ে যাবার পরে যাত্রী যেকোনো জায়গায় নামলে আদায় করা হচ্ছে নির্দিষ্ট অংকের নির্ধারিত ভাড়া। ডিজেলচালিত বাসের পাশাপাশি সিএনজিচালিত বাসগুলোও ভাড়া বাড়িয়েছে ৪০-৪৫ শতাংশ। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া পড়ছে ২ টাকারও বেশি। ক্ষেত্র বিশেষে সেটা আবার ৩.৫ টাকা থেকে ৪ টাকা।
অন্যদিকে, কিছু কিছু কোম্পানির বাসগুলো সরকারি কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নির্ধারিত ভাড়ার চার্টের তোয়াক্কা না করেই তাদের নিজেদের নির্ধারণ করা ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের থেকে। কারণ হিসেবে কোম্পানি মালিকের সিদ্ধান্ত এবং ওয়েবিলের দোহাই দিচ্ছে।
বিরক্তি প্রকাশ করে মিনহাজ নামক একজন নিয়মিত গণপরিবহন ব্যবহারকারী বিবার্তাকে বলেন, আমরা যতদূর জানি সিটিং সার্ভিস অনেক আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে ভাড়া তো আগের মতই নিচ্ছে। ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে, বাস ভাড়াও বাড়ানো হলো। সেই সাথে কাঁচাবাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও বেড়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বলার কোনো ভাষা নেই। আপনারা জোর করে যা চাপাবেন আমরা তাই মেনে নেবো। এছাড়া আমাদের কিই বা করার আছে। এদিকে অফিসের বেতন বাড়ার কোনো খবর নাই।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়াম বিবার্তাকে বলেন, মিরপুর ১২ থেকে বাড্ডা গেলেও ৩০ টাকা ভাড়া, আবার তার অনেক আগে কুড়িল বা যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নেমে গেলেও ৩০ টাকা ভাড়া। একইভাবে মিরপুর থেকে মতিঝিল, গুলিস্তানের ভাড়া ৩৫ টাকা। কিন্তু তার আগে অর্থাৎ শাহবাগ বা পরীবাগে নামলেও একই ভাড়া দিতে হয়। কোনো কোনো কোম্পানি তো আবার ফার্মগেট ক্রস করলেই পুরো ভাড়া দাবি করছে।
রবরব পরিবহনে রামপুরাগামী যাত্রীদের কাছ থেকে সিটিং বা গেটলকের ভাড়া নিচ্ছিলেন হেল্পার নাজমুল। সিটিং ভাড়া কেন আদায় করছেন জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমরা নিয়মের মধ্যেই ভাড়া নিচ্ছি। একজন যাত্রীও দাঁড়িয়ে নেই না। আমাদের এটা গেটলক সার্ভিস।
কয়েকটি স্টপেজ পরপরই ওয়েবিল চেক করার কাজটি করেন একজন লাইনম্যান। একজন লাইনম্যান নির্ধারিত দূরত্বে ওয়েবিলে যাত্রীর সংখ্যা লিখে দেন। এক ওয়েবিলের স্টপেজ থেকে পরবর্তী স্টপেজের মধ্যে যেখানেই নামুন না কেন, যাত্রীকে গুনতে হয় পুরো পথের ভাড়া। এখানে কিলোমিটার প্রতি সরকারি হিসাবের কোনো বালাই নেই।
পরিস্থান পরিবহনের লাইনম্যান মারুফুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমরা তো কোম্পানিতে চাকরি করি। আমাদের যেভাবে মালিকরা নির্দেশ দেয় তাই করতে আমরা বাধ্য। সারাদিন পরে মালিক যেন ঠিকমত ভাড়ার হিসাব করতে পারেন সে কারণেই ওয়েবিল চালু রাখছে বলে আমরা জানি। এতে যাত্রীরাও সুবিধা পাচ্ছেন।
জানতে চাইলে পরিস্থান পরিবহন কোম্পানির ম্যানেজার লিটন মিয়া বিবার্তাকে বলেন, আমরা বাসে সরকারি চার্ট লাগিয়ে দিয়েছি। চার্ট অনুসারেই ভাড়া আদায় করা হয়। ওয়েবিল রাখা হয়েছে আমাদের নিজেদের হিসাব রাখার জন্য। এর উপর ভিত্তি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছি না আমরা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, কেউ যেন যাত্রীদের হয়রানি বা বাড়তি ভাড়া আদায় করতে না পারে সে কারণে সরেজমিনে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে। দরকার হলে আরো বাড়ানো হবে। আর শিক্ষার্থীদের জন্য ইতোমধ্যে হাফ পাস চালু করে দিয়েছি আমরা। ওয়েবিলের ওপর ভিত্তি করা যাত্রীদের কাছে থেকে বাড়তি ভাড়ার ব্যাপারেও আমরা সজাগ রয়েছি।
বিবার্তা/আদনান/গমেজ/কেআর/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]