ডিজেলের দাম বাড়ার পর গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য কিছুতেই থামছে না। যাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এ নিয়ে বিভিন্ন রুটে যাত্রী, চালক ও হেলপারের সঙ্গে প্রতিনিয়তই বাকবিতণ্ডার পাশাপাশি ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা।
এছাড়াও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সড়কে অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন ছাড়া বাসে বাসে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একইসঙ্গে সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
তবে গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমরা মনিটরিং করছি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে বিআরটিএ বৈঠক করে নতুন বাস ভাড়া নির্ধারণ করেছে। এটা নিয়ে কোনো জটিলতা থাকার কথা নয়। গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, হাফ পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবারও ঢাকা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষক ও নিউমার্কেট থানা পুলিশের আশ্বাসে সড়কের অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাসমালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হাফ পাসের বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মিরপুর রোডে চলাচল করা বাসগুলো ওয়েবিলের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অল্প দূরত্বের পথেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। শিক্ষার্থীরা হাফ পাস দিতে চাইলে জোরপূর্বক গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া, খারাপ আচরণসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। সম্প্রতি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে সিএনজিচালিত বাসগুলোতেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধানে তারা রাস্তায় নেমেছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবারের মধ্যে কোনো ঘোষণা না এলে পুনরায় কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
সড়ক অবরোধে অংশ নেয়া জাকির হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বিবার্তাকে বলেন, প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে তারা হাফ ভাড়া নিশ্চিত করবে। এজন্য আমরা রাস্তা ছেড়েছি। শনিবারের মধ্যে হাফ ভাড়া নিশ্চিত না করলে আবারও কঠোর কর্মসূচি দেব।
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বিবার্তাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেক অভিযোগ আছে। তাদের থেকে হাফ ভাড়া নেয়া হয় না। অনেক বাসের স্টাফরা সব সময় খারাপ ব্যবহার করেন। ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়ার নজিরও রয়েছে। তবে এসবের সমাধান তো গাড়ি আটকে, রাস্তা অবরোধ করে হবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়েছি, মালিক সমিতির সঙ্গে বসে এসব সমস্যার সমাধান করব।
মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়ে নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন বিবার্তাকে বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে আমরা সমাধানে আসার চেষ্টা করব।
গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে হাফ ভাড়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এ দাবি তাদের পুরনো। যা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গত ৭ নভেম্বর বাস ভাড়া বাড়িয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় করছে পরিবহন শ্রমিকরা-এমন অভিযোগে রাজধানীতে প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘঠনা ঘটে। এছাড়া সিটিং সার্ভিস ও গেটলকের নামে যাত্রীদের হয়রানি আরও বেড়েছে।
অপরদিকে, মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন ছাড়া বাসে বাসে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একইসঙ্গে সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বারবার ঘোষণা দিয়েও কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধ-চালুর ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মেতে উঠেছে। এতে বলির পাঠা হচ্ছে যাত্রী সাধারণ। নানা অনিয়ম ও অযৌক্তিক, ভুয়া হিসাব দেখিয়ে তেলের দামের চেয়েও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া বাড়িয়ে নিয়ে এখন রুটে রুটে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের জিম্মি করে আরো ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়ের পাঁয়তারা করছে তারা।
বিবার্তা/খলিল/কেআর/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]