শিরোনাম
বাজারে ঘাটতি নেই সবজির, তবুও দাম আকাশচুম্বী!
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৫৭
বাজারে ঘাটতি নেই সবজির, তবুও দাম আকাশচুম্বী!
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীসহ দেশের বাজারগুলোতে সব ধরণের সবজির দাম বাড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই প্রয়োজনীয় নিত্য পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।


সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারে ঘাটতি নেই মৌসুমি সবজির। বছরব্যাপী পাওয়া যায় এধরনের সবজিরও কমতি দেখা যায়নি। তবুও লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ায় ভোগান্তিতে ক্রেতারা। বাজেটের মধ্যে কোনভাবেই বাজার শেষ করতে পারছেন না তারা। দাম বাড়ার জন্য মজুতদার, সিন্ডিকেট ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন বিক্রেতারা।


বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুরের মুসলিম কাঁচা বাজারে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।


বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মৌসুমি সবজি ফুলকপি, টমেটো, মুলা, গাজর, শিমের কোন ঘাটতি নেই। মুলা গত সপ্তাহেও সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও চলতি সপ্তাহে সেটা ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। সারা বছর টমেটোর কেজি ৮০ টাকার ওপরে না গেলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা দরে। মিডিয়াম মানের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, প্রকারভেদে ১৫০ টাকা পর্যন্ত মরিচ রয়েছে। শীতের সবজি কিনতে হলে গুনতে হচ্ছে বেশ মোটা অংকের টাকা। ৫০ টাকার নিচে কোন ধরনের সবজি মিলছে না। বাঁধাকপি ৬০ টাকা, ফুলকপি ছোট সাইজের ৩০ এবং মাঝারি সাইজের ৬০-৭০ টাকা, আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। গুদামে এসব পণ্যের বিপুল মজুদ থাকলেও দাম কমছে না কোনভাবেই।



সরকারি চাকরিজীবী মোস্তফা উদ্দিন বাজারে এসে ১ ঘণ্টা ঘুরেও সাধ্যের মধ্যে বাজার করতে পারেননি। তিনি বিবার্তাকে বলেন, কাঁচা বাজার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। প্রতিদিনই এসব জিনিসের দাম বেড়েই চলছে। তেলের দাম তো এমনি বাড়তি। শেষ ২ সপ্তাহ ধরে দেখছি সবজির বাজারেও আগুন। ২/৩ আইটেমের সবজি কিনতে চাইলেই হাজার টাকার বাজেট করতে হয়। আমরা তো মধ্যবিত্ত মানুষ। এখন বাধ্য হয়েই আমাদের শাকসবজি কম খেতে হচ্ছে।


অফিসে যাওয়ার আগে দ্রুত বাজার করতে আসেন নিলুফা ইয়াসমিন। তিনি আক্ষেপ করে বিবার্তাকে বলেন, আগে সপ্তাহে ৩ দিন বাজার করতাম। এখন ২ দিন করি। বাধ্য হয়েই খাবারের মেনু থেকে শাক-সবজি কমিয়ে দিয়েছি। মৌসুমি সবজি বাঁধাকপি, ফুলকপি কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা জোড়া, সাইজেও ভালো না। বাধ্য হয়ে কষ্টের টাকা দিয়ে যা পাচ্ছি তাই কিনে নিয়ে যাচ্ছি। ব্রয়লার মুরগির দামও আজকে বাড়তি দেখলাম। ১৭০ টাকা কেজি। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় জীবন যাপন কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।


১০ থেকে ১১ রকমের সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন বিক্রেতা আব্দুল হাই। সবজির এরকমঅস্বাভাবিক দামের বিষয়ে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমাদের সবজি কিনতে হয় চড়া দাম দিয়ে। কেজিতে ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা লাভ হলেই ছেড়ে দিই। যাদের কাছে থেকে আমরা কিনে আনি তাদেরকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। গুদাম ভর্তি মাল থাকলেও দাম প্রতি সপ্তাহেই ২/৩ বার বেড়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে আমাদেরও দাম বাড়াতে হয়।


ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক বিক্রেতা সালাম বলেন, আমাদের নিজেদেরও তো সবজি কিনেই খেতে হয়। দাম বাড়লে তো আমাদেরও সমস্যা। আমরা তো ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ি। কিনে এনেই বিক্রি করতে হয়। প্রতিদিনই আড়ৎ থেকে বাড়তি দামে মাল ছাড়ছে। সরকার এদিকে যদি একটু নজর দেয় তাহলে দাম কমানো সম্ভব।



মুসলিম বাজারের একজন সবজির আড়ৎদার বিবার্তাকে বলেন, সবকিছুর খরচ মিলিয়েই তো আমাদের মালের দাম নির্ধারণ করতে হয়। লেবার বিল, পরিবহন খরচ, গুদামের ভাড়া সবকিছু বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম বাড়াতে হচ্ছে। এছাড়া সবজির উৎপাদক থেকে যারা আমাদের কাছে মাল বিক্রি করে তারাও নিজেদের লাভের ভাগটা বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে। দাম বাড়ায় আমাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। বিক্রি কমে গেছে অনেক।


দামের এমন অস্বাভাবিকতা নিয়ে মুসলিম বাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান শিকদার বিবার্তাকে বলেন, দাম বৃদ্ধি হ্রাসের ওপর আমাদের তেমন কোনো হাত নেই। আমরা কমিটির লোক বাজারের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করি। নিরাপত্তার বিষয়টা নজরে রাখি। বাজার দামের ওপর আমাদের তেমন কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। দোকানদার যদি বেশি দামে মাল কিনে, তাহলে তো বাধ্য হয়েই বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। সরকার যদি এদিকে নজর দেয় তাহলেই দাম কমানো সম্ভব।


এদিকে, নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই নয়, নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্তদেরও। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্যের দাম সহনীয় মাত্রায় আনতে হলে সরকারকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।


বিবার্তা/আদনান/গমেজ/আবদাল/এমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com