শিরোনাম
রাজধানীতে বেপরোয়া মোটরসাইকেল
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৪০
রাজধানীতে বেপরোয়া মোটরসাইকেল
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীতে অনেকটাই বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকরা। ট্রাফিক সিগন্যাল কিংবা পথ নির্দেশনা যেনো কোনো কিছুই মানছেন না তারা। এমনকি ফুটপাতে উঠে যাচ্ছেন অনেক মোটরসাইকেল চালক। পুলিশ বলছে, যানজটের অন্যতম কারণ মোটরসাইকেল।


রাজধানীতে মোটরসাইকেল চালকরা নির্দশনা অমান্য করে ফুটপাতে দিয়েও চলাচল করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি টাকা। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, মতিঝিল, পল্টন, মালিবাগ, শাহবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।


যাত্রীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, রাজধানীতে অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল চালকরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চালিয়ে যাচ্ছে যাত্রী পরিবহন। নিয়ম অনুযায়ী তাদের নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমেই যাত্রী ওঠা-নামা করার কথা। যেখানে সংরক্ষিত থাকবে চালক ও যাত্রী উভয়ের তথ্য। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানছেন না ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেল চালকরা। আর ঝুঁকি নিয়ে হলেও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য চুক্তিভিত্তিক ভাড়ায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। এতে যেমন ঘটছে দুর্ঘটনা তেমনি বাড়ছে নানা অপরাধ।


এছাড়াও দিন দিন নগরবাসীর মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক। এছাড়া অ্যাপ ছাড়া চলাচলকারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করছেন চালকরা। এতে চালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। এমনকি ট্রাফিক আইন অমান্য করা, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, বারবার লেন পরিবর্তন করা, পথচারীকে সম্মান না করা, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব- এমন নানা অভিযোগ রয়েছে চালকদের বিরুদ্ধে।



তবে চালাকদের অভিযোগ, গাড়ি, জ্বালানি ও শ্রমের বিনিময়ে যে টাকা পাওয়া যায়, তা থেকে কোম্পানিগুলো ২৫ শতাংশেরও বেশি কমিশন কেটে নিচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা পেমেন্ট করায় ভাড়া হিসেবে কত থাকছে কিংবা কত শতাংশ কোম্পানি কেটে নিচ্ছে তা তারা জানেন না। তাছাড়া বিনা অজুহাতে অ্যাপ বন্ধ করে দেয়ায় অনেক রাইডার বেকার হয়ে পড়ছে।


অ্যাপ-বেইজড ড্রাইভারস ইউনিয়ন অব বাংলাদেশের (ডিআরডিইউ) সাধারণ সম্পাদক বেলাল আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, রাস্তায় বের হলেই তাদের পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে তাদের যে মামলা দেয়া হয় সেটা সপ্তাহখানেকেও কাটিয়ে উঠতে পারেন না রাইডাররা। এসব হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে তারা ইতোমধ্যে ছয়টি দাবি উপস্থাপর করেছেন। এগুলো হলো- পুলিশি হয়রানি, অ্যাপসনির্ভর শ্রমিকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি, কর্ম-সময়ের মূল্য দেওয়া, সব ধরনের রাইডে কমিশন ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা, মিথ্যা অজুহাতে কর্মহীন করা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি পার্কিংয়ের জায়গা নির্ধারণ, তালিকাভুক্ত রাইড শেয়ারকারী যানবাহনকে গণপরিবহনের আওতায় নিয়ে আগাম কর কেটে রাখা বন্ধ করতে হবে।


উবার ব্যবহারকারী মিজানুর রহমান বিবার্তকে বলেন, সম্প্রতি আরামবাগ মোড় থেকে উবার কল করলাম। দুজনের কাছে রিকোয়েস্ট যাওয়ার পর কেটে দিল। আরেকজনকে কল করলাম, তাকে ম্যাপে দেখাচ্ছিল মতিঝিলে। তবে তিনি বললেন, আমি যাব না। আরেকজনকে ফোন দিলাম, তিনি কাছাকাছি থাকলেও যাবেন না বলে দিলেন। এরপর আরো একজন রাইড গ্রহণ করেন। পরে তিনি রাউড কেটে দিতে বলেন। তার কথা মতো রাইট কেটে বাধ্য হয়েই চুক্তির মাধ্যমে রামপুরায় যাই।


মুস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বিবার্তাকে বলেন, আমি উবারের সেবা নেই প্রায়ই। একবার বুয়েট থেকে জিগাতলা আসার জন্য উবার নিলাম। প্রথমে ডিসকাউন্টসহ ভাড়া দেখায় ৮৫ টাকা। কিন্তু ওই ভাড়ায় চালক গন্তব্যে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে বাধ্য হয়ে ১২০ টাকা দিয়ে জিগাতলা যাই।


তবে চালকরা বরং যাত্রীদের উপরেই দোষ চাপাচ্ছেন। তারাই দ্রুত গন্তব্যে যাওয়ার জন্য তাড়া দেন বলে দাবি করলেন কয়েকজন চালক। আব্দুর রহিম নামের একজন উবার চালক বিবার্তাকে বলেন, অনেক সময় যাত্রীরাই বলে যে আমার অফিস ধরতে হবে একটু তাড়াতাড়ি যান। এটা নিয়ে রিপোর্ট কখনো আসে না যে যাত্রীরা তাড়া দেয়। সবসময় আসে আমাদের রাইডারদের দোষ।


এদিকে, সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় শীর্ষে বাংলাদেশ। প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের মধ্যে বাংলাদেশে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে ২৮ দশমিক ৪টি। বাংলাদেশের পর কম্বোডিয়ায় ১১ দশমিক ৯, লাওসে ১১ দশমিক ৫, থাইল্যান্ডে ১১ দশমিক ২, ভারতে ৯, মিয়ানমারে ৮ দশমিক ৬, মালয়েশিয়ায় ৪ দশমিক ৪, ভিয়েতনামে ৪ দশমিক ১, ইন্দোনেশিয়ায় ২ দশমিক ৫ এবং ভুটানে ২ দশমিক ১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।



সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজধানীতে কয়েক বছরে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এই খাতের কোম্পানিগুলোর নিবন্ধনের বাইরে অনেকেই মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করেন। চালকদের অধিকাংশই প্রশিক্ষিত নন। তারা ঠিকভাবে ট্রাফিক সিগন্যাল না মেনে রাস্তায় মোটরসাইকেল চালান। যাত্রীদের জন্য নিম্নমানের হেলমেট রাখেন। এছাড়া ফাঁক গলে আগে যাওয়ার প্রবণতাও প্রবল। এসব কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে বলেও তারা মনে করেন। এছাড়া অ্যাপ ছাড়া যাত্রী পরিবহন, বেপরোয়া গতিসহ নানা অনিয়মের কারণেই দুর্ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।


এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, বর্তমানে দেশের দুর্ঘটনায় ৪৫ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এছাড়া রাজধানীতে দিন দিন মোটরসাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। এটা একটা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে মোটরসাইকেল চালালে দুর্ঘটনাও অনেক কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।


ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে চলাচল করলে ভাড়ার একটি অংশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। তাই তারা অ্যাপ ব্যবহার করতে চায় না। তবে অ্যাপ ব্যবহার না করলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তাই সবাইকে অ্যাস ব্যবহার করে চলাচল করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।


চালকদের হয়রানি বা মামলার ব্যাপারে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, সব সময় যে তাদের মামলা দেয়া হয় তা সঠিক নয়। যদি কেউ অতিরিক্ত আইন ভঙ্গ করে, তবেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। চালকরা নিয়ম মেনে সেবা দেয়া এবং যাত্রীরা যাতে নিরাপদে সেবা গ্রহণ করে এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।


বিবার্তা/খলিল/গমেজ/শাহিন/এমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com