শিরোনাম
ভোগান্তি চরমে, চাকরির পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেয়ার দাবি (পর্ব-১)
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৪২
ভোগান্তি চরমে, চাকরির পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেয়ার দাবি (পর্ব-১)
ফাইল ছবি
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

দীর্ঘ দিন থেকে সরকারি-বেসরকারিসহ সব চাকরির পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এজন্য তারা বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু এখনো তাদের সেই দাবি আদায় হয়নি।


এদিকে চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রথমবারোর মতো দেশের বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যে দেশ সেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক, খ ও চ ইউনিটের (সাধারণ জ্ঞান) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২২ অক্টোবর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ (গ ইউনিট) ও ২৩ অক্টোবর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের (ঘ ইউনিট) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।


প্রথমবারের মতো আট বিভাগীয় শহরে নেয়া এ ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু কোথাও কোনো জালিয়াতির খবর পাওয়া যায়নি।


ঢাকা বিভাগের পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, চট্টগ্রাম বিভাগের পরীক্ষা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাজশাহী বিভাগের পরীক্ষা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, খুলনা বিভাগের পরীক্ষা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সিলেট বিভাগের পরীক্ষা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, রংপুর বিভাগের পরীক্ষা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, বরিশাল বিভাগের পরীক্ষা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ময়মনসিংহ বিভাগের পরীক্ষা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।



ফলে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চাকরির পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেয়ার বিষয়টি। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন, বিসিএস এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেয়া সম্ভব হলে, চাকরির পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেয়া হচ্ছে না কেনো?


এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা মো. আরিফুল ইসলাম বিবার্তা২৪ ডটনেটকে মুঠোফোনে বলেন, অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরির জন্য আবেদন করেছি। স্বপ্ন ছিলো ভালো একটা জব করে পরিবারের হাল ধরবো। কিন্তু এ স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত যে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছি, তাতে ভয় হয় চাকরির পরীক্ষা ভালোভাবে দিতে পারি কিনা! দেশ ডিজিটাল হলেও অধিকাংশ নিয়োগ পরীক্ষা এখনো ঢাকা কেন্দ্রীক। ফলে যারা ঢাকার বাহিরে থেকে পরীক্ষা দিতে যায় তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। যাতায়াত নিয়ে চিন্তা, থাকবো কোথায় সে চিন্তা, চেনা জানা না থাকায় সময় মতো পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারবো কিনা সে চিন্তাও আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। এ পরিস্থিতিতে ভালো পরীক্ষা দেয়া আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।


তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দুই বছর চাকরির পরীক্ষা বন্ধ ছিলো। এখন কোভিড সংক্রামণ কমায় চাকরির পরীক্ষা পুরোদমে শুরু হয়েছে। কিন্তু শুরু হলে কি হবে? রাজধানীর বাহিরের শিক্ষার্থীদের জন্য এ এক মহা চ্যালেঞ্জ। প্রতি শুক্রবার ও শনিবার নেয়া হচ্ছে নিয়োগ পরীক্ষাগুলো। এ দুইদিন পরীক্ষা নেয়া হলেও দূরত্ব বিবেচনায় বাহিরের শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে একদিন আগে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। ফলে আমাদের যাতায়াত খরচসহ মাত্রাতিরিক্ত ভোগান্তি হচ্ছে ঢাকায় পৌঁছাতে। পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থা নিয়েও মহা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। যারা থাকার ব্যবস্থা করতে পারে না, তাদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে তারপর ক্লান্ত শরীর নিয়ে পরীক্ষার হলে বসতে হয়। এ অবস্থায় ভালো পরীক্ষা দেয়া এক মহা চ্যালেঞ্জ। কাজেই আমরা মনে করি, বিভাগীয় শহরে পরীক্ষাগুলো নিলে আমাদের এ ভোগান্তি দূর হবে।



উত্তর বঙ্গের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থী তালহা ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, টিউশনি করে নিজে চলে পরিবারকেও কিছু সহায়তা করি। এদিকে চাকরির পরীক্ষাও দিচ্ছি। কিন্তু এ পরীক্ষা ঢাকা কেন্দ্রীক হওয়ায় মহা সঙ্কটে পড়ে যাচ্ছি। যাতায়াত, থাকা-খাওয়াসহ অনেক খরচ। সাথে রয়েছে সীমাহীন ভোগান্তি। এসব বিবেচনা করে অনেক সময় আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব আবেদন করলেও অনেক পরীক্ষা দিতে পারে না।


এ চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থী বলেন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে বিসিএস পরীক্ষা নিয়েছে। চলতি বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও দেশব্যাপী নেয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে এ পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাহলে কেন বাকী পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় শহরে নেয়া হচ্ছে না? আমরা অবিলম্বে বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেয়ার জোর দাবি জানাই।


এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলমগীর বাদশাহ বিবার্তাকে মুঠোফোনে বলেন, আমাদের শিক্ষাবিদরা আমাদের নিয়ে কি ভাবছেন? ভাবলে তো এমন হতো না। তারা কি আমাদের ভোগান্তির কথা বোঝেন না?


চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সরকারি হাজী এবি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ইবরাহীম হোসেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় আবেদন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। যাতায়াতের অনেক ব্যয়ভার ও ভোগান্তি আমাদের পড়াশোনার গতি নষ্ট করে দেয়।


আক্ষেপ প্রকাশ করে এ চাকরিপ্রার্থী বলেন, ঢাকার চাকরিপ্রার্থীরা যেভাবে বিভিন্ন পরীক্ষায় বসতে পারেন, বাহিরের শিক্ষার্থীরা তা পারেন না। তার কারণ হলো, বাহিরের শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হলে অনেক ভেবে চিন্তে করতে হয়। অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলে অনেকে মেধাবী হলেও অনেক পরীক্ষা দিতে পারেন না। বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেয়া হলে সবাই সুযোগ পাবে বলে দাবি এ চাকরিপ্রার্থীর।



ঢাকার বাহিরের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজ উল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, চাকরির পরীক্ষার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গিয়ে বাহিরের ছেলেদের সাথে কথা হয়। তাদের অধিকাংশের চোখে মুখে ক্লান্তির চাপ থাকে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তাদের পরীক্ষা দিতে আসতে হয় ঢাকায়, আবার পরীক্ষা শেষ করে এলাকায় যেতে হচ্ছে। এভাবে বারবার তাদের চাকরির পরীক্ষা জন্য আসা-যাওয়ায় নানা ভোগান্তি হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নিলে এ ভোগান্তি দূর হবে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ শিবলী সাদিক বিবার্তাকে বলেন, এ পরীক্ষাগুলো বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট কেন্দ্রীক নেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক পরীক্ষার পদও কম থাকে, আবার আবেদনকারীও কম থাকে। মনে করেন, কিছু পদের জন্য ২০০০ জন আবেদন করলে বিভাগীয় শহর অনুযায়ী পরীক্ষা নিলে এক বিভাগে কতজন পড়ে? কাজেই এটা করতে গেলে আলাদা কেন্দ্র ভাড়াসহ আরো অনেক কাজ থাকে।


বড় পরীক্ষাগুলো বিভাগীয় শহরে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিসিএস তো বিভাগীয় শহরে নেয়া হচ্ছে। এটা অফিসিয়াল নয়, আমার একান্ত ব্যক্তিগত মত।


বিবার্তা/রাসেল/গমেজ/আবদাল/এমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com