শিরোনাম
১০ বছরের কম বয়সী ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, দায়ী আবহাওয়া
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২১, ০৮:২৬
১০ বছরের কম বয়সী ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, দায়ী আবহাওয়া
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ফের বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সেপ্টেম্বরের শেষ ও অক্টোবরের শুরুতেই ডেঙ্গু অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও বর্তমান সময়ে এসে তা আবারো বাড়ছে। ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। আবহাওয়ার অস্থিতিশীলতা, থেমে থেমে বৃষ্টি ইত্যাদিকে ডেঙ্গু বাড়ার কারন হিসেবে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।


সম্প্রতি রাজধানীর শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে এসব চিত্র উঠে আসে।


হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি সপ্তাহে ফের বেড়েছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। রাজধানীর বাইরে থেকেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন অভিভাবকরা। যাদের অবস্থা ভাল তাদের বাসা থেকেই চিকিৎসা নেবার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে অস্থিতিশীল শারীরিক অবস্থা নিয়ে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। অক্টোবরের শুরু থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হচ্ছিল, তবে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন বিশেষ করে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়াকে ডেঙ্গু বেড়ে যাবার জন্য দ্বায়ী করছেন চিকিৎসকরা।


হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে ডেঙ্গু , বিভিন্ন রকম ভাইরাসজনিত সমস্যা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অপেক্ষায় আছেন পঞ্চাশের বেশি অভিভাবক। তাদেরই একজন ১৪ মাসের শিশুর মা রাহেলা বেগম, এসেছেন বরগুনা থেকে। রাহেলার মত আরো প্রায় ১০ জনের বেশি মা বাচ্চাকে ঢাকার বাইরে থেকে সুচিকিৎসার আশায় এসেছেন হাসপাতালটিতে ।



রাহেলা বেগম বিবার্তাকে জানান, গত ৩ দিন ধরে বাচ্চার কাশি, শ্বাসকষ্ট, পাতলা পায়খানা। জ্বর তেমন আসে না, তবে রাতের বেলা প্রায়ই জ্বর আসে। বরগুনায় ডাক্তার তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। আগেও দেখিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তাই আজকে ঢাকায় চলে এসেছি ভাল ডাক্তার দেখাতে।


এদিকে ডেঙ্গু ওয়ার্ডেও আক্রান্ত ২০-২৫ জন শিশু ছিলো যাদের বয়স দশের কম। এদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু ঝুঁকিটা সবচেয়ে বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


৪ বছরের শিশু মাসুদের অবস্থা কিছুটা নাজুক। কাশি শ্বাসকষ্ট তো রয়েছেই, বাড়তি সমস্যা হিসেবে গত ৩ ধরে ডেঙ্গুতেও আক্রান্ত সে। মাসুদের মা রিনা পারভিন বিবার্তাকে জানায়, আমার ছেলের শুরুতে ২/৩ দিন পেটে সমস্যা ছিলো, ওষুধ কিনে খাওয়ানোর পর ভাল হয়ে যায়। তার এক সপ্তাহ পরে থেকেই কাশি শ্বাসকষ্ট। ডাক্তার বলেছেন ঠিক হতে সময় লাগবে।


সাভার থেকে আসা আব্দুর রশিদ বিবার্তাকে বলেন, আমার ৩ বছরের মেয়ের স্বাভাবিক যেমন জ্বর থাকে তেমন ছিলো। অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানোর পরে সুস্থ হয়ে যায়। ১ মাস পরে হুট করে ১০৩ জ্বর। পরে এই হাসপাতালে ভর্তি করলাম। ৫ দিন ধরে আছি, জানিনা কবে বাচ্চাটা সুস্থ হবে।



ডেঙ্গু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক মাহবুবা জামান বলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় প্লাটিলেট স্বল্পতায় থাকা রোগীদের নিয়ে। কারন আমাদের ডোনার সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ইনফেকশন থাকলে আমরা রোগীদের এন্টিবায়োটিক দিচ্ছি। তাছাড়া স্বাভাবিক চিকিৎসা সবসময় চলমান থাকে।


১০ বছরের কম বয়সী ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জানিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, পৃথিবীর সবজায়গায় ১০ বছরের কম বয়সী বাচ্চারা কিন্তু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। একই সিজনে ৪ বার পর্যন্ত আক্রান্ত হতেও আমরা দেখেছি।


ডেন-৩ ভ্যারিয়েশন নিয়ে এই চিকিৎসক জানান, প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যারা ২০১৯ সালে এই ভ্যারিয়েশনে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদেরও এবার ঝুকি থেকেই যায়। কারন ইদানিং বেশিরভাগ রোগীই এই ভ্যারিয়েশনে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে যারা কম বয়সী থাকে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা আরো বেশি। তাদের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট দ্রত নেমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শকে চলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।


এই সিজনে ছোট-বড় যে কেউ ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হবার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক।


বিবার্তা/আদনান/গমেজ/শাহিন/এমও

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com