শিরোনাম
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের পার্কটি এখন আতঙ্কের নাম!
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২১, ০৮:৩৪
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রের পার্কটি এখন আতঙ্কের নাম!
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

অবসর সময় ঘুরে বেড়ানো এবং সকালে হাঁটাচলা করার জন্য রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ও মিডিয়া পল্লীখ্যাত কারওয়ান বাজারে গড়ে তোলা হয়েছিলো 'পান্থকুঞ্জ পার্ক'। সেই পার্ক এখন সাধারণ মানুষের কাছে এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্কটি দিনে দিনে অপরাধের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে। দিনের আলোতেই চলে মাদক সেবন। বলা যায় মাদকসেবীদের আড্ডা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আস্থানায় পরিণত হয়েছে পার্কটি।


রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার সার্ক ফোয়ারা মোড়ের পাশে পান্থকুঞ্জ পার্কের অবস্থান। পার্কটির একদিকে কাঁঠাল বাগান আবাসিক এলাকা, অন্যদিকে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল এবং পাশেই বাংলামটর। নগরের অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আসা ক্লান্ত পথচারীদের জন্য গাছের ছায়ায় বিশ্রামের জায়গা ছিলো এ পার্ক। উন্মুক্ত ছিলো সবার জন্য। কিন্তু প্রায় তিন বছর ধরে উন্নয়ন কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে পার্কটি।


জানা গেছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সংস্কার কাজ শুরু হয় পার্কটির। সংস্কার কাজের জন্য লোহার গ্রিল দিয়ে তৈরি পার্কের নিরাপত্তা বেষ্টনি সরিয়ে চারদিকে দেয়া হয় টিনের বেড়া। কাজ শুরুর পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়ালসড়কের কাজের জন্য পার্কের নকশায় পরিবর্তন আনার কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। এরপরই বন্ধ করে দেয়া হয় পার্কের উন্নয়ন কাজ। সেই থেকে প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ আছে পার্কটি। অথচ কাজ শেষে এক বছরের মাথায় ‌'পান্থকুঞ্জ পার্ক' জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা ছিলো।



সরেজমিন পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, উন্নয়ন কাজ শুরুর সময় দেয়া টিনের বেড়া হলেও অনেক জায়গা সেই টিন নেই। ঝোপ-ঝাড়ে পুরো পার্কটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এমনকি পার্কটিকে মলমূত্র বিসর্জনের জন্য ব্যবহার করছেন অনেকে। ইটের সুরকি, পাথরসহ উন্নয়ন কাজের নানা সরঞ্জামাদি রাখা হয়েছে পার্কের ভেতর। পার্কের চারদিকে আবর্জনা ছড়িয়ে আছে। উন্নয়ন কাজ শুরুর পর মাটি খুঁড়ে কয়েকটি ড্রেন করা হয়েছিলো, সেগুলোও এখন ময়লা আবর্জনায় ভর্তি। পার্কটির তিনভাগের মধ্যে দুই ভাগের বেশি ঝোপঝাড়। সার্ক ফোয়ারার পাশে পার্কের ভেতর স্থাপন করা হয়েছিলো ডিজিটাল এলইডি লাইট। পুরো পার্কের মধ্যে এই জায়গায় অল্প একটু হাঁটার জায়গা রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে এই জায়গাটিও ছিন্নমূল মানুষের বাসস্থানে পরিণত হয়ে পড়েছে।


এদিকে সন্ধ্যা হলে পাল্টে যায় পুরো পান্থকুঞ্জের রূপ। ভুতুড়ে পরিবেশ নেমে আসে পুরো পার্ক এলাকায়। গভীর রাত পর্যন্ত চলে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। রাত বাড়ার সাথে সাথে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয় পার্কটি। রাত ১০ টার পর থেকে পার্কটি ভাসমান যৌনকর্মীদের দখলে চলে যায়। পার্কের পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটলে এসময়ে দেখা পাওয়া যায় তাদের।



রবিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ফোনে কথা বলতে বলতে পার্কে চত্বরে ঢুকেন জাহিদুল ইসলাম (২৫)। তিনি বলেন, এখানে ঢুকতে দুর্গন্ধে গা ঘিন ঘিন করে। বাইরে সাউন্ড বেশি তাই মোবাইলে কথা বলার জন্য ঢুকেছি। নিউ এস্কাটন এলাকার এ বাসিন্দা বলেন, পার্কটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। আগে বন্ধুরা মিলে এখানে আড্ডা দিতাম। এই জঙ্গলে কি বসা যায়? ভয়ে সন্ধ্যার পরে ফুটপাত ধরে হাঁটাই যায় না। এসময় তিনি পার্কটির উন্নয়ন কাজ দ্রুত করার দাবি জানান।


পার্ক এলাকার আশেপাশের দোকান মালিকরা জানান, রাত নামলেই পার্কের ভেতর অনৈতিক কাজ চলে। কেবল রাত নয় দিনের বেলায়ও মাদকসেবীদের আড্ডা চলে বর্তমানে ‘পরিত্যাক্ত’ এ পার্কে। সন্ধ্যার পর ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর ফুটপাথ দিয়ে পথ চলতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থী।


পান্থকুঞ্জ পার্ক ফুটপাতের পাশে চা বিক্রি করেন ইমরান (২৭)। তিনি বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে পার্কটি একই অবস্থায় আছে। জায়গা তো ভালো না। রাতে এদিকে যেতেও ভয় করে। রাত ১০টার আগেই দোকান বন্ধ করে চলে যাই।


জানা যায়, ২০১৮ সালে 'জলসবুজে ঢাকা' প্রকল্পের আওতায় পার্কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ জন্য বরাদ্দ ছিলো প্রায় ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। পার্কটিতে হাঁটার জন্য রাস্তা, পথচারীদের বিশ্রামের জন্য চেয়ার বসানো, ক্যাফেটেরিয়া ও পাঠাগার নির্মাণের ব্যবস্থাসহ নানা উন্নয়ন কাজ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো।



পার্কটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বিবার্তাকে বলেন, পার্কটির উন্নয়নে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ কাজ করছে। কাজ শেষ করে তারা পার্কটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। এরপর সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু এখনো কাজ শেষ হয়নি। হস্তান্তর করা হলে আমরা দেখভাল করবো।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুন্সী মো. আবুল হাসেম বিবার্তাকে বলেন, পার্কের উন্নয়নে ওয়ার্কওর্ডার দিয়ে কাজ শুরু করার পর আমরা জানলাম এখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়ালসড়কের কয়েকটি পিয়ার বসবে। পরে পার্কের কাজ স্থগিত করা হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের লাইন পান্থকুঞ্জ পার্কের ওপর দিয়ে হাতিরপুল হয়ে বুয়েটের দিকে যাবে। এক্ষেত্রে উড়ালসড়কের খুঁটি বসাতে পার্কের দক্ষিণ দিকে ২০ ফুটের মতো জায়গা লাগতে পারে। কিছুদিন আগে তারা অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে পাঠিয়েছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে আমাদের কাজ শুরু হবে।


এ বিষয়ে জানতে রবিবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও এসএমএস করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।


বিবার্তা/সোহেল/গমেজ/শাহিন/এমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com