শিরোনাম
ডেঙ্গুর সাথে অন্য শারীরিক জটিলতায় ঝুঁকি বাড়ছে
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:০৫
ডেঙ্গুর সাথে অন্য শারীরিক জটিলতায় ঝুঁকি বাড়ছে
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন হাজারো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিদিন বাড়ছে এই রোগীর সংখ্যা। এবারের ডেঙ্গু শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে রেহাই দিচ্ছে না প্রাপ্ত বয়স্কদেরও। বিশেষ করে অন্যান্য শারীরিক জটিলতা রয়েছে এমন রোগীদের সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এসব রোগীদের ক্ষেত্রে শকে চলে যাওয়া একটি নিয়মিত ব্যাপার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইসিইউতে নিয়েও রক্ষা হচ্ছে না জীবন।


সম্প্রতি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে সরেজমিনে ঘুরে ও দায়িত্বর চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।


হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মাসের শুরুর দিকে দৈনিক প্রায় ১৫০ জন রোগী ভর্তি হলেও সে সংখ্যা এখন কমে এসেছে। তবে গুরুতর রোগীর সংখ্যা প্রায় আগের মতই আছেন। ২৫ বছরের বেশি বয়স্ক অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যাসহ নানান ধরনের অভ্যন্তরীণ শারীরিক জটিলতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীর ক্ষেত্রে সুস্থ হবার সময়টা অন্য সকল রোগীর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।



অসুস্থ স্বামীর মাথায় পানি ঢালছেন তার স্ত্রী আসমা আক্তার। হাজারীবাগ থেকে আসা আসমা আক্তার বিবার্তাকে বলেন, ৫ দিন আগে উনার জ্বর শুরু হয়। পরে একশো চার থেকে একশো পাঁচ ডিগ্রি জ্বর ‍উঠে গায়ে। জ্বর ভালো হলেও শরীরে র‍্যাশ দেখা যায়। এরপর এলাকার একটি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করে জানতে পারি উনার ডেঙ্গু হয়েছে। তারপর এই হাসপাতালে ভর্তি করলাম।


পাশের দুটি সিটেও একই ধরনের লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন পুরান ঢাকার আরো দুইজন। তাদের সবার গল্পই অনেকটা একই রকম। কয়েকদিন জ্বর, গায়ে র‍্যাশ ওঠা ও ব্যথা। পরীক্ষা করতে গিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এরপর তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরপর থেকে কেউ চারদিন, কেউ পাঁচদিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন।


চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এধরনের রোগীরা সাধারণত দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এদের কারো কারো ক্ষেত্রে ইন্টারনাল ব্লিডিং হচ্ছে। ফলে বড় রকমের শারীরিক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত সেরোটাইপ-৩ এ আক্রান্ত রোগীরা এসবের সম্মুখিন হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি।



আশুলিয়ার বাসিন্দা ফাতিমা জান্নাত। স্বামীর ডেঙ্গু ধরা পড়ার পরে প্রায় ১০ দিন ধরে ভর্তি আছেন ডেঙ্গু ওয়ার্ডে। ফাতিমা বিবার্তাকে জানান, আমার স্বামীর তিনদিন ধরে জ্বর ছিল। একদিন বমির সাথে রক্ত দেখা যাওয়ার পরে তাড়াতাড়ি এখানে নিয়ে এসেছি।প্রতিদিনই ডাক্তাররা এসে দেখে যাচ্ছেন। আগের চেয়ে এখন অবস্থা ভাল।


সাভারের বাসিন্দা রিক্তা ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত। এই বছরেই দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। প্লাটিলেট কমে নেমে গেছে ৫০ হাজারের নিচে।


রিক্তার স্বামী বাঁধন সরকার বিবার্তাকে বলেন, গতকাল রক্ত পরীক্ষার পর দেখলাম প্লাটিলেট ৬০ হাজারের বেশি। ডাক্তারও বললেন যে এই অবস্থা থাকলে আর ৩-৪ দিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু আজ সকালে আবার পরীক্ষায় দেখা যায় এক ধাক্কায় প্লাটিলেট ৪৪ হাজারে নেমে গেছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে ৩ ব্যাগ রক্ত লাগবে।



ডেঙ্গু ওয়ার্ডে বিকাল শিফটে দায়িত্বরত চিকিৎসক সানজিদা ইভা বিবার্তাকে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আমাদেরও প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে রোগী সামলাতে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ডেঙ্গু সাথে আরো কিছু মারাত্মক শারীরিক জটিলতা যুক্ত হচ্ছে। যেমন- রোগীর রক্তচাপ কমে গিয়ে শকে চলে যাচ্ছে, মল বা বমির সাথে রক্ত যাচ্ছে অথবা হঠাৎ করে প্লাটিলেট নেমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমরা রোগীদের আইসিউতে নিচ্ছি। এসব অপ্রত্যাশিত বিষয়গুলো ঘটলে আমাদের হাতে আর কিছু করার থাকে না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরডা. মো.খলিলুর রহমান বলেন, আমরা কাউকে ফেরাচ্ছি না। বিছানা না থাকলেও যেভাবেই হোক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসা দিচ্ছি। ডেঙ্গুর সাথে সাথে অন্য কোন রোগ আগে থেকেই থাকলে সে ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়। তবে আশার কথা হচ্ছে এধরনের রোগীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।


বিবার্তা/আদনান/গমেজ/শাহিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com