সুমী আক্তার। তিনি চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়নের জলুধা গ্রামের বাসিন্দা এবং সেখানে একটি স্কুলের শিক্ষিকা। তার বাবা একজন সাম্পান চালক। কিন্তু দীর্ঘ দিন থেকে সেই এলাকার বাসিন্দা জলদস্যু ডাকাত আব্দুর শুকুর ও তার তিন ছেলের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সুমী। শুকুর বাহিনীর নির্যাতনে তিনি বর্তমানে ঘরছাড়া।
সরকারি বিভিন্ন দফতরসহ স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাননি। উল্টো শুকুর বাহিনীর তার এবং তার পরিবারের উপর নির্যাতনের পরিমান বারিয়ে দিয়েছেন। এতে অসহায় হয়ে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেছেন। এছাড়াও তিনি স্থানীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সুমী জানান, আব্দুর শুকুর এলাকায় জলদস্যু ডাকাত হিসেবে পরিচিত। এছাড়া তার ছেলে মনির ওরফে ইয়াবা মনির, দেলোয়ার হোসেন এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের অধীনে রয়েছেন একটি কিশোর গ্যাং। ওই গ্যাং সদস্যদের মাধ্যমে এলাকায় নির্যাতন ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
তিনি আরো জানান, আব্দুর শুকুর চট্টগ্রাম শহরসহ পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলায় একজন চিহিৃত তেল চোরাকারবারি। শুধু তাই নয়, তিনি একজন চিহিৃত ইয়াবা কারবারিও। দীর্ঘ ১০ থেকে ১৫ বছর চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর বহিনোঙরে আসা-যাওয়া তেলবাহী জাহাজ থেকে তেল চুরির সাথে জড়িত।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারী তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানী যখন বিভিন্ন জাহাজে তেল সরবরাহ করেন তখন শুকুর গং একটি অসাধু চক্রের সহযোগিতায় অবৈধভাবে পাইপ ঢুকিয়ে তেল চুরি করে থাকে। পরে ওই তেল অন্যত্র বিক্রি করে আব্দুর শুকুর এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। তেল লুটের পাশাপাশি বর্তমানে অন্যতম ইয়াবা ব্যবসায়ী। প্রতি বছর ইয়াবা, কেসিনো ও অনলাইনে জুয়ার আসর বসিয়েও বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ উপার্যন করেন তিনি। আর ওইসব অর্থ দিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন কিশোর গ্যাং। ওই গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে তিনি কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের পাইপের গোড়া, ডাঙ্গারচর গ্রামের বিভিন্ন ধরনের দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাদের রাজত্ব। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের কাছে জম্মি হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
সুমীর অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ও স্থানী রাজনৈতিক নেতা মাসোহারো পান আব্দুর শুকুরের কাছ থেকে। ফলে তারাও সহযোগিতা ও নিরব ভূমিকা পালন করছেন। এতে তারা আরো উগ্র হয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ধারাবাহিকতায় গত ৯ সেপ্টেম্বর সুমী আক্তার ও তার পরিবারের উপর আক্রমণ করে শুকুর বাহিনী। ধারালো অস্ত্র নিয়ে সুমীর বাড়িতে গিয়ে তাদের উপর হামলা করে। হামলায় আহত সুমী আক্তার ও তার পরিবারকে তাদের ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় সুমীর পিতা-মাতাও গুরুত্বর আহত হন। শুকুর বাহিনীর ভয়ে বর্তমানে সুমী ও তার পরিবার ঘর ছাড়া রয়েছেন। বিচারের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুর শুকুর বিবার্তাকে বলেন, সুমী আমার আপন ভাতিজি। আমার ভাইয়ের সাথে জায়গা-জমি নিয়ে মামলা চলছে। এর জের ধরেই তারা আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছে। আমাকে হয়রানির জন্য এমন অভিযোগ তুলছেন তারা।
কর্ণফুলি থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বিবার্তাকে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি আব্দুর শুকুর সুমীর আপন চাচা। সম্প্রতি সুমীর ভাইকে র্যাব গ্রেফতার করে। তাকে গ্রেফতারের পর সুমীর পরিবার আব্দুর শুকুরের পরিবারের উপর দোষ চাপায়। এর জের ধরে তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে দু’পক্ষই থানায় মামলা করেন। দুটি মামলাই তদন্ত চলছে।
তিনি আরো বলেন, দুই পক্ষের মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। মামলা তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিবার্তা/কেআর/শাহিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]