শিরোনাম
রাজধানীতে হকারদের দখলে ফুটপাত, ভোগন্তি চরমে
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৪১
রাজধানীতে হকারদের দখলে ফুটপাত, ভোগন্তি চরমে
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

কঠোর লকডাউনের পর আবারো হকাররা দখল করে নিয়েছেন রাজধানীর ফুটপাতগুলো। শুধু ফুটপাত নয়, রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলো দখল করেও চলছে তাদের রমরমা ব্যবসা। গুলিস্তানসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে এ চিত্র দেখা গেছে। ফুটপাত দখলে নেয়ায় অনেক স্থানেই সংকুচিত হয়েছে মানুষের চলার পথ। বাড়ছে যানজট। কোথাও কোথাও অবৈধ স্থাপনা কিংবা বিভিন্ন মালামাল রেখে দেয়ায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন পথচারীরা।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর ফুটপাতে হকারদের রাজত্বের নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি। দোকান ভেদে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে দৈনিক ৫০০ টাকা পর্যন্ত মাসোহারা দিতে হয় হকারদের।


সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গুলিস্তানের রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত দখল করে পসরা বসিয়েছে হকাররা। এমনভাবে তারা ফুটপাত দখল নিয়েছে, যেখানে পথচারীদের বাধ্য হয়ে ধীরগতিতে হাঁটতে হচ্ছে। ফলে কোনভাবেই শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। ফুটপাত ছাড়াও কোথাও কোথাও আবার সড়ক দখল করে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ছে, বাড়ছে যানজট।



স্থানীয়রা জানান, গুলিস্তান এলাকায় মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রায় সবই পাওয়া যায় এখানে। আর এ কারণেই রাস্তা, ফুটপাত সবই ঢাকা পড়েছে দোকান, গ্যারেজ, আর পার্কিং করে রাখা যানবাহনে। এছাড়া, মেইন সড়কে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহনগুলো পার্কিং করে রাখা হয়। আর সেখান থেকেই পর্যায়ক্রমে একটা করে বাস যাত্রীভর্তি করে ছেড়ে যায়। এতে ছোটবড় সব পরিবহনের চাপ বাড়ছে মূল সড়কে। ফলে যানজটের মাত্রাও বেড়েছে কয়েক গুণ।


স্থানীয়দের দাবি, এখানে কয়েকটি বড় মার্কেট হওয়ায় মানুষের চাপও বেশি। এর উপর আবার রাস্তা দখল করে হকারদের অস্থায়ী দোকানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতে মানুষ হাঁটলেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।


জানা গেছে, গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল থেকে পূর্বে নবাবপুর রোডের গোড়া পর্যন্ত সড়কটি অন্তত ৬০ ফুট চওড়া, দৈর্ঘ্য অন্তত ২০০ ফুট। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, কয়েক বছর ধরে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফুটপাতের হকাররা সড়কের পুরো অংশ দখল করে ব্যবসা পেতে বসেন। সড়কের উপর দোকান, সড়ক বিভাজকের উপর দোকান, পাশের ফুটপাতেও দোকান। সর্বত্রই হকারদের নানা পণ্যের পসরা। এ ছাড়া জিপিও থেকে শুরু করে নর্থ-সাউথ রোড পর্যন্ত সড়কের দু'পাশে ফুটপাতের সঙ্গে এমনভাবে রাস্তা দখল করে ব্যবসা জমে উঠেছে যে, এ পথে চলাচল করতে গেলে নবাগতরা ভীষণ ভয়ে থাকেন। ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের সামনে-পেছনের ফুটপাত ও রাস্তারও প্রায় একই দশা। এমনভাবে বিচিত্র সব দখল, যেখানে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের কোনো উপায় নেই।



স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলিস্তানের ফুটপাত ও রাস্তা সোনার চেয়েও দামি। এখানে ১০ বর্গফুট রাস্তার একাংশের দৈনিক ভাড়া ৫০০ টাকা। ফুটপাতের ভাড়া আরো বেশি। হকার ও ফুটপাত ব্যবসায়ীদের রাস্তায় পণ্য বিক্রির সুযোগ দিয়ে ভাড়া আদায় করা হয়। পুলিশ, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা ও স্থানীয় কিছু মাস্তানের মধ্যে প্রতিদিন ওই টাকা ভাগাভাগি হয়।


সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলিস্তান সিনেমা হলের পাশের রাস্তার পুরোটাই দখল করে বসেছে পোশাক, জুতা, ব্যাগ, ফল, নতুন টাকাসহ নানা ধরনের দোকান। রাস্তায় যানবাহন চলার কোনো উপায় নেই।


শুধু গুলিস্তান নয়, পল্টন, দোয়েল চত্বর, মতিঝিল, মগবাজার, ফার্মগেট, মাজার গেট, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার, নিউ মার্কেট, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুরসহ পুরো রাজধনীর ফুটপাতের একই চিত্র।



আগে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে রাজধানীতের বিভিন্ন এলাকায় ডিএমপি ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হতো। কিন্তু বিগত লকডাউনের আগ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয় না বলে জানা গেছে। এতে দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মো. ফারুক হোসেন বিবার্তাকে বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। আর তাদের সহযোগিতা করে ডিএমপি। তবে করোনাকালীন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালতের উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়। তা এখনো চালু হয়নি।


বিবার্তা/খলিল/গমেজ/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com