শিরোনাম
৫ দিনের ব্যবধানে গুনতে হবে মাসের ভাড়া, ক্ষুব্ধ ঢাবি শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৪৫
৫ দিনের ব্যবধানে গুনতে হবে মাসের ভাড়া, ক্ষুব্ধ ঢাবি শিক্ষার্থীরা
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। তাদের মতে, ওই তারিখে হল খোলা হলে শিক্ষার্থীদেরকে পুরো অক্টোবরের আবাসন বাবদ বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। আর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে হল খোলা হলে সেই বাড়তি ভাড়া আর গুনতে হবে না।


বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান প্রশাসনের হল খোলার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবার্তাকে বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তান। এটা তো সবারই জানা। সেই শিক্ষার্থীরা করোনাকালীন সঙ্কটে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়েছি। আমাদের অনেকে ইতোপূর্বে টিউশনি ও পার্ট টাইম জব করে নিজে চলে পরিবারের হালও ধরেছেন। কিন্তু অনেকের আয়ের এখাত করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এরপরেও আমরা শিক্ষার্থীরা নানা টানাপোড়েনের মধ্যে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় ঢাকায় আসতে বাধ্য হয়েছি।


তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে মেস, হোস্টেল কিংবা বাসা ভাড়া করতে হয়েছে। তাই আমরা অপেক্ষায় ছিলাম, কবে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল? কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল আগামী ৫ অক্টোবর থেকে খোলার ঘোষণা দেয়া হলেও মেস কিংবা বাসা ভাড়া করে থাকা শিক্ষার্থীদের কথা একটুও ভাবা হলো না। সেপ্টেম্বরের শেষে কিংবা ১ অক্টোবর হল খুললে আমাদের ১ মাসের ভাড়া দেয়া লাগতো না। এখন মাত্র ৫ দিনের জন্য শিক্ষার্থীদের গুনতে হবে এক মাসের ভাড়া। এ যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা। আমরা এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানায়।


শিক্ষার্থী শিক্ষার্থী হাসানুজ্জামান আরো বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে অভিভাবকসুলভ সিদ্ধান্ত আশা করেছিলাম কিন্তু এ সিদ্ধান্ত আমাদের মর্মাহত করেছে। আমরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়ার জোর দাবি জানাই।


পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বিবার্তাকে বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষে হল খোলার কথা শুনেছিলাম। তাই মেস ছেড়ে দিয়েছি। অথচ এখন শুনলাম ৫ অক্টোবর হল খুলবে। তাহলে এই ৫ দিন আমি কোথায় থাকবো? কোথাও উঠলে পুরো মাসের ভাড়া দিতে হবে। পরিবারের যা অবস্থা তাতে আরেক মাসের বাসা ভাড়া চাইতে বিবেকের কাছে দংশিত হয়ে যাচ্ছি।


ক্ষোভ প্রকাশ করে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী অনুপম রায় বিবার্তাকে বলেন, পরিবারের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ২য় পরিবার ভেবেছিলাম। কিন্তু এ পরিবার আমাদের কথা ভেবে সিদ্ধান্তটুকু নিলো না! খুব হতাশ করেছে আমাদের। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন চাই।


নাজমুল ইসলাম নামের ঢাবির আরেক শিক্ষার্থী বিবার্তাকে বলেন, আগে টিউশনি করে নিজে চলে পরিবারকেও সহায়তা করেছি। কিন্তু এখন করোনার কারণে টিউশনি নেই। এদিকে অনেকদিন বাড়ি থাকলেও পরীক্ষা শুরু হওয়ায় ঢাকায় এসে মেসে উঠতে হয়েছে। আমার পরিবার এখন ধার দেনা করে বহু কষ্টে খরচ দিচ্ছে। এ অবস্থায় যদি শুনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের খেয়ালীপনা সিদ্ধান্তের জন্য মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে আমাকে এক মাসের ভাড়া দেয়া লাগবে, তখন কেমন লাগে?


এর আগে বুধবার রাতে (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির এক বৈঠকে ‘আগামী ৫ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ফাইনাল ইয়ার এবং মাস্টার্স পরীক্ষার্থীদের হলে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সেপ্টেম্বরের শেষে হল খোলার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।


বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এ প্রতিবাদ জানান।


এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ৫ অক্টোবর নয়, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। তাহলে শিক্ষার্থীদেরকে অক্টোবরের আবাসন বাবদ বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়ার ব্যাপারে, ঢাবি প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়া।


তিনি বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, পরিবেশ পরিষদের মিটিংয়ে এই দাবি করেছি। আবারো বলছি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বাদ দেন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সকল দাবি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।


ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ‍বিবার্তাকে বলেন, অক্টোবরের ৫ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার সিদ্ধান্ত সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। ২৭ সেপ্টেম্বরের পর হল খোলার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব বিষয় এবং বাসা ভাড়াসহ শিক্ষার্থীদের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে হল খোলাই অভিভাবকসুলভ হতো।


তিনি বলেন, মহামারি চলাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, অনলাইন শিক্ষা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করাসহ বৃহত্তর স্বার্থে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহায়তা করেছে, অথচ হল খোলার সময়সূচি নির্ধারণে ছাত্রদের সমস্যাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। পরিবেশ পরিষদে ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামত অযৌক্তিকভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে হল খোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ অনতিবিলম্বে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছে।


এদিকে ৫ অক্টোবর হল খোলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার দাবিতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে হল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলো আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেসব শিক্ষার্থীরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে মেসে অবস্থান করে পড়ালেখা করছে তাদের জন্য মাসের প্রথম ৫ দিন মেসে থাকা পুরো মাস থাকার-ই সমতুল্য। এজন্য তাদেরকে পুরো মাসের ভাড়া বহন করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি হবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই-চলমান সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে হল খুলে দেয়া হোক।


হল খোলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বিবার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলা ও সশরীরে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আজ শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিশেষ সিন্ডিকেট সভা বসবে। সেখানে হল খোলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।


তিনি আরো বলেন, হল খোলার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে অবহিত হয়েছি। শিক্ষার্থীরা যেহেতু দাবি উত্থাপন করেছে, সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে ফলাফল কী হবে সেটা সভার পর জানা যাবে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিণ্ডিকেট গ্রহণ করবে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শতভাগ যেনো টিকা কার্যক্রমের আওতায় আসে সেজন্য আমরা কাজ করছি।


উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে এখন অবধি বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আবাসিক হলগুলো বন্ধ রয়েছে।


বিবার্তা/রাসেল/গমেজ/বিদ্যুৎ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com