শিরোনাম
লকডাউনে অনিয়ম : অস্থায়ী বাজারে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি (পর্ব-৫)
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২১, ১৮:৪০
লকডাউনে অনিয়ম : অস্থায়ী বাজারে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি (পর্ব-৫)
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে চলমান কঠোর লকডাউন ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে রাজধানী মিরপুরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ছোট-বড় অস্থায়ী বাজার গড়ে উঠেছে। সকাল-বিকেল নিয়ম করে বাজারও বসছে। এসব বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। সব জায়গায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি।


কঠোর লকডাউনের ১৪তম দিন বুধবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুর ১২ সেকশনের সি ব্লক, সুজাতনগর, বালুরমাঠ, ঝিলপাড় বড় রাস্তা ও আলুব্দি এলাকার বিভিন্ন রাস্তা ও স্থায়ী বাজারের আশপাশের আবাসিক এলাকা ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।


ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের অনুরোধে গত ১ আগস্ট থেকে গার্মেন্টস কলকারখানা খুলে দিয়েছে সরকার। ফলে রাজধানীর গার্মেন্টস সংলগ্ন মিরপুরের এসব জায়গায় অস্থায়ী বাজারে মানুষের আগের চেয়েও কয়েকগুণ ভিড় বেড়েছে। ২-৩ দিনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, গার্মেন্টস কারখানা খোলার দিন ১ আগস্ট থেকেই এসব বাজারে ভিড় বাড়ছে মানুষের। বিশেষ করে সকাল-বিকেল কর্মমুখী মানুষের ভিড় বাড়ে। ভ্যানের উপর অস্থায়ী বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ার সাথে ভ্যানের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন। তাদের ঘিরে মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। সামাজিক দূরত্বের মত করোনা সতর্কতা উপেক্ষিত এসব বাজারে।


সুজাতনগর মোড়ে সকাল-সন্ধ্যা ২টি ভ্যানে আম বিক্রি করেন মাসুম বিল্লাহ। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমি মৌসুমী ব্যবসা করি। লকডাউনে তো তেমন বিক্রি করতে পারি নাই। তবে ২/১ দিন ধরে মানুষ বেশি আসছে। গার্মেন্টস কর্মীরাই আমার আসল খরিদ্দার। এখন বিক্রি ভালো। মাঝে মাঝে পুলিশ এসে আমাদের তুলে দেয়। কই, কিসের করোনা? আমাদের তো ধরে না। আমার এখানে দিনে মিনিমাম ৫০০ মানুষ আসে যায়। ভিড় করে কেনাকাটা করে। সবাই তো সুস্থই আছে দেখি।


আপ্যারেল নিটওয়ারে চাকরি করেন আলুব্দির বাসিন্দা মুকুল হোসেন। সন্ধ্যায় এরকম কিছু ভ্যান থেকে কাঁচাবাজার করে বাসায় ফিরছিলেন। মুকুল বিবার্তাকে বলেন, চাকরির টানে ঢাকা আসতে হলো। দেখেনই তো আমার মত হাজার হাজার মানুষের ছুটি হইছে এখন। সবাই বাজার করতে আসবে, ভিড় হবে এটাই তো স্বাভাবিক। এছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখি না। মাস্ক পরে থাকি সবসময়। এরপরেও আমার করোনা হয়েছিল একবার। এরপরে থেকে আর তেমন ভয় পাই না।


সি ব্লক আবাসিকের একটি গার্মেন্টস কারখানার পাশের গলিতে ২/৩টি ভ্যানে বিভিন্ন কাঁচাবাজারের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। সেসব ভ্যানে ভিড় করে বাজার করছেন পোশাক কারখানার একদল নারী কর্মী। তাদেরই একজন শারমিন বিবার্তাকে বলেন, আমাদের বাসা সামনেই। সবাই একই বাসায় থাকি। অফিসে যাওয়া-আসা একসাথে করি। দেখলাম ভ্যানে কাঁচা শাক-সবজি বিক্রি করছে। তাই ভাবছি মুসলিম বাজার যাবো না। এখানে থেকেই বাজার করে বাসায় ফিরবো।


করোনা সচেতনতা ও সামাজিক দূরত্ব নিয়ে মাস্ক ঠিক করতে করতে শারমিন বিবার্তাকে জানান, ছোট একটা গার্মেন্টসে আমরা এক সাথে দুই হাজার কর্মী কাজ করি। আর কী দূরত্ব রাখব বলেন। সবাই সবাইকে চিনি ও জানি। একসাথে থাকি। তাই করোনা নিয়ে তেমন ভয় লাগে না। এতদিনে তো করোনা হয় নাই। আর হবে বলেও তো মনে হয় না।


সন্ধ্যায় একই দৃশ্য চোখে পড়ে আলুব্দি এলাকার বিভিন্ন গলিতে জমে ওঠা ছোট-বড় মাছের বাজারে। লকডাউনের সময়েই গড়ে উঠেছে এসব কাঁচাবাজার। পাশের এক চা দোকানদার বিবার্তাকে বলেন, আগে তো এখানে তেমন বড় কোনো বাজার ছিল না। হঠাৎ করে দেখি মাছের বাজার বসা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন আশপাশের মানুষও বাজার করতে আসছে। আমার চায়ের দোকানেও অনেক ভিড় হয়। কিসের লকডাউন, কিসের কী। এখানে এসব তো কেউ মানেই না। আমার দোকানের সামনেই ৩/৪ টা ভ্যানে কাঁচাবাজার বসে। আমি সরিয়ে দিয়েছিলাম। এখন একটু সামনে গিয়েই আবার বসছে। কী লাভ হলো বলেন?


পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার বিবার্তাকে বলেন, আসলে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে দেয়ার পর মানুষের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে, আমরা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। বেশিরভাগই তো গার্মেন্টস কার্ড দেখিয়ে চলাচল করছেন। আর এসব ভ্রাম্যমাণ ভ্যান নজরে এলে আমরা সরিয়ে দেই। তারা তখন আবাসিকের ভেতরের রাস্তায় চলে যায়। সেখানেই সবাই ভিড় করছে। করোনা সতর্কতা নিশ্চিত করতে নাগরিকদের নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রত্যেকের সচেতন হতে হবে।


বিবার্তা/আদনান/গমেজ/আরকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com