শিরোনাম
লকডাউনে অনিয়ম : তিন টোকায় খোলে বন্ধ শার্টার (পর্ব-৪)
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৬:০৩
লকডাউনে অনিয়ম : তিন টোকায় খোলে বন্ধ শার্টার (পর্ব-৪)
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৩ জুলাই থেকে ১৪ দিনের সর্বাত্মক লকডাউন চলছে সারাদেশে। করোনা বিধিনিষেধ অনুসারে জরুরি সেবা, খাবার এবং ওষুধের দোকান ছাড়া বাকি সব কিছুই বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই দোকানের শার্টার ফেলে চায়ের দোকান, ছোট ছোট ফাস্ট ফুড, চটপটির দোকান চলছে নিয়মিত। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও দোকানের শার্টার বা গেটে টোকা দিলেই মেলে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি। শার্টার তুলে ক্রেতাদের ভেতরে নিচ্ছেন দোকাদাররা।


লকডাউনের ১০ম দিন ৩১ জুলাই (শনিবার) রাজধানীর মিরপুর ১২নং সেকশনের বিভিন্ন ব্লকের অলি-গলিতে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।


সরজমিনে দেখা যায়, মিরপুর ১২ অয়েল পাম্প এরিয়া থেকে কিছু ভেতরেই ৪টি চায়ের দোকান। কোনো দোকানের শার্টার পুরো বন্ধ, কোনোটা অর্ধেক খোলা। দোকানগুলোতে ছিলো মানুষের ভিড়। সেসব দোকানের সামনে ২/৩ জনের সাথে দেখা হয়। দোকানের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে তারা বলেন, শার্টারে টোকা দিলেই ভেতরে ঢোকা যাবে। শার্টারে ৩ বার টোকা দিতেই ভেতরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়।


একই দৃশ্যের দেখা গেছে ঝিলপাড় বড় মসজিদ থেকে মিরপুর ১২ ক্যান্টনমেন্ট ঘেঁষে বড় রাস্তার দুই পাশ থেকে শুরু করে, ইস্টার্ন হাউজিং হয়ে আলুব্দি পর্যন্ত প্রায় ৫০টি চা ও ফুস্কার দোকানে। কোনো কোনো দোকানে আবার রমজান মাসের মতো বড় পর্দা ব্যাবহার করা হয়েছে। ভেতরে ক্রেতাদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। কারো মধ্যেই করোনা স্বাস্থ্যবিধি বা মাস্ক ব্যবহার করার আগ্রহ দেখা যায়নি।



সাংবাদিক পরিচয়ে ১২ নং সেকশনের বালুর মাঠের পাশে এরকম একটি চায়ের দোকানে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা বের হয়ে যেতে বলেন। কোনভাবেই কথা বলতে রাজি হননি তারা। আশপাশের এরকম আরো ৪/৫টি দোকানে কথা বলতে গেলেও তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। সকলেই বলছিলেন তাদের দোকান খোলা রাখার অনুমতি আছে।


ঝিলপাড় এলাকার একটি চায়ের দোকানে আড্ডারত একজন মিরাজুল ইসলাম। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। থাকেন পাশেরই আলুব্দি এলাকায়। তিনি বিবার্তাকে বলেন, ৩/৪ দিন ঘরে ছিলাম। আর থাকতে পারছি না। তাই একটু চা খেতে আর আড্ডা দিতে বাইরে আসলাম। আমার একবার করোনা হয়েছিলো। এরপর টিকা নিয়েছি। তাই নির্ভয়েই চলে আসি। আর আমার আশপাশে যাদের দেখতেছেন তারা সবাই আমার পরিচিত। তাই তেমন কেউ মাস্ক পরি না।


আলুব্দি পাবলিক স্কুলের সামনের চায়ের ৬ থেকে ৭টি দোকানের অধিকাংশ ছিলো পুরো শার্টার বন্ধ। কয়েকটি দোকানের শার্টার অর্ধেক খোলা ছিলো। কোনোটির একপাশ খোলা। আবার কোনো কোনটির শার্টার নিচে থেকে একটু খোলা। সেখানে এক দোকানের শার্টারে গিয়ে ৩ বার টোকা দিতেই ভেতরে থেকে প্রশ্ন আশে, কে ভাই ? প্রত্যুত্তরে এলাকার লোক পরিচয় দিতেই বলে, দাঁড়ান আসতেছি। কিছুক্ষণ পরেই শার্টার অর্ধেক খুলে ভেতরে নিয়ে যান চা দোকানদার মিনহাজ উদ্দিন। ভেতরে দেখা গেছে ১০/১২ জন বসে চা-নাস্তা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। কারো মুখে কোনো মাস্ক ছিলো না। এমনকি তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্বও ছিলো না।


কথা হয় এলাকার চল্লিশোর্ধ আব্দুল হাইয়ের সাথে। লকডাউনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথার ফাঁকে ফাঁকে তিনি প্রতিবেদককে জানান, আরে এসব লকডাউন শুধু শুধু দেয়। সবাইকে ঘরবন্ধী করে দিচ্ছে। এই দেখেন না আমি আগে দিনে ২ থেকে ৩ বার চা খেতে আসতাম। আড্ডা দিতাম। আর এখন লুকিয়ে লুকিয়ে আসতে হচ্ছে। দোকান বন্ধ করে ভেতরে বসে অন্ধাকারের মধ্যে চা খেতে হচ্ছে। এগুলা ভালো লাগে বলেন? আমরা তো মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি। করোনায় কিছু করতে পারবে না। আমরা রেগুলার ব্যায়াম করি। সকালে হাঁটি। আমাদের কিসের করোনা?


কথা হয় একই চা দোকানের দোকানদার মিনহাজ উদ্দিনের সাথে। দোকান খোলা রাখা নিয়ে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমাদের তো সংসার আছে নাকি? দোকান না খুললে আমরা খাবো কি? আমাদের তো আয় রোজগারের আর কোন রাস্তা নাই। আর দোকান খুলি না তাই দেখেন না মানুষের ভিড়। খুললে কি হবে চিন্তা করেন। পুলিশের গাড়ি এখন আগের চেয়ে বেশি আসে। তাই শার্টার বন্ধ রাখি। কেউ এসে টোকা দিলে নাম পরিচয় জেনে বা পরিচিত কেউ হলে তাকে ভেতরে আসতে দেই। শার্টার খোলা রেখে একবার পুলিশ ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলো। এরপর থেকে সতর্ক হয়ে গেছি।


সার্বিক বিষয় নিয়ে পল্লবী থানার ডিউটি অফিসার বিবার্তাকে বলেন, দেখুন আমাদেরও তো লিমিটেশন আছে। এমন না যে আমরা মানুষকে সতর্ক করছি না। এসব এলাকায় আমাদের ডিউটি দ্বিগুণ করে দিয়েছি। কিন্তু মানুষ যদি সব জেনে বুঝে আমাদের সাথে এমন চোর পুলিশ খেলা করে সেটা তো আমাদের জন্য নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর। আপনার জানানো এই বিষয়টি নিয়েও আমরা টহল জোরদার করবো। অপরাধ ভেদে আমরা জরিমানা করছি বা আইনানুগ ব্যাবস্থা নিচ্ছি। তবে সবকিছুর পরেও আমরা নাগরিকদের যার যার জায়গা থেকে সতর্ক হতে বলছি।


বিবার্তা/আদনান/গমেজ/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com