শিরোনাম
করোনায় মানবসেবা, ফের মাঠে শোভা
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২১, ১৮:৫৪
করোনায় মানবসেবা, ফের মাঠে শোভা
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কঠোর লকডাউনের মাঝেও হতদরিদ্রদের জন্য নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কখনো প্রতিবন্ধী রিক্সাওয়ালার পাশে দাঁড়িয়েছেন, কখনো নিজে খাবার রান্না করে সে খাবার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে অসহায়দের মাঝে বিতরণ করছেন। আবার কখনো কারো চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন। নিজ কর্মচারী মৃত্যুুর পর এ কোভিড সঙ্কটে কেউ কাছে না আসলেও তিনি নির্ভীক চিত্তে সবকিছুর ব্যবস্থা করে মানবসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।


শুধু তাই নয়, তিনি শিক্ষা বিস্তারেও অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। নিজের জেলা পরিষদ থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে অসহায় শিক্ষার্থীদের হাফেজী পড়াচ্ছেন। এখানে ক্ষান্ত হননি তিনি। চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্য সহায়তা দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন। প্রথম দিন ১ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। রাজধানীর প্রতিটি অলি-গলিতে ধারাবাহিকভাবে চলবে তার এ কার্যক্রম।


করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া এ মানবহিতৈষী নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও তিনি দমে যাননি। নিজে সুস্থ হয়ে ফের মাঠে নেমে অসহায় জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।



মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে যাওয়া অদম্য এই আত্মপ্রত্যয়ী নারী তানিয়া হক শোভা। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচিত প্যানেল চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ যুব মহিলালীগ কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। তিনি মুকসুদপুর উপজেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি সম্মিলিত সংগীত শিল্পী সোসাইটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।


জানা গেছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়ানো শোভা চলমান লকডাউনের কারণে রাজধানীর বস্তিবাসী, দিনমজুর-অসহায়দের খাদ্য সঙ্কটের কথা শুনে বসে থাকতে পারেননি। শুরু করেন নতুন উদ্যোগ। এ উদ্যোগের নাম ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি। শনিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের এতিমখানা থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে অসহায় ১ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেন।তার এ সহায়তার মধ্যে রয়েছে প্রতি প্যাকেটে ৫ কেজি চাল,ডাল ১ কেজি, আলু ২ কেজি, তেল ১ লিটার।এছাড়া করোনা সুরক্ষা সামগ্রীও বিতরণ করেন তিনি।এ সময় ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তার এ কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ঢাকা শহরের প্রতিটি অলিগলিতে পরিচালনা করা হবে।


করোনার এ সঙ্কটে শোভার এ সহায়তা পেয়ে অসহায়, বস্তিবাসী, কর্মহীন নিঃস্ব মানুষের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখা গেছে।অসহায় এসব মানুষ বলেন, আমরা যারা রাজধানীতে ভাসমান অসহায় জনগণ আছি করোনার এ সঙ্কটে লকডাউন হওয়ায় খুব কষ্টে আছি। আজকে এ আপা (শোভা) সহায়তা দিলেন।আমরা তার জন্য দোয়া করি। এভাবে সামর্থ্যবানরা আমাদের সহায়তা করলে আমরা খেয়ে বাঁচতে পারবো।


তারা বলেন, লকডাউনের কারণে আমরা বেশি বিপর্যয়ে পড়েছি। আমাদের অনেকের ইনকাম-সোর্স বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই এ সঙ্কটে কারো সহায়তা পেলে কি যে উপকৃত হই, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।



শুধু এ খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম নয়, এর আগেও করোকালীন সঙ্কটে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অসহায় জনগণের পাশে থেকেছেন শোভা ।বিবার্তা২৪ ডটনেটের অনুসন্ধানে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।


জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই অসহায় মানুষের জন্য মন কাঁদতো শোভার। মানুষের জন্য কিছু করা ও দেয়ার মধ্যে অসীম আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি পেতেন তিনি। চলমান করোনাভাইরাসের এ সঙ্কটেও তার ব্যতয় ঘটেনি।


দেশে যখন করোনায় মানুষের মৃত্যু শুরু হয় তখন মানুষের অন্য যেকোন কারণে মৃত্যু হলেও আতঙ্কে কেউ কাছে যেতো না। এমন পরিস্থিতিতে শোভার বাসার দারোয়ান আবু বকর অসুস্থ হলে তিনি নির্ভীক চিত্তে পাশে থেকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্বও নেন। কিন্তু আবু বকর মারা যায়। তার মৃত্যুর পর শোভা নিজ উদ্যোগে সমস্ত ব্যয়ভার বহন করে লাশ গোসল থেকে শুরু থেকে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সমস্ত কিছু করেন।


দেশে যখন করোনা মারাত্মক রূপ ধারণ করে তখন সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করলে দিনমজুর-অসহায়রা খাদ্য সঙ্কটে ভোগে। এ পরিস্থিতিতে অসহায়দের জন্য এগিয়ে আসেন শোভা। নিজে বাসায় খাবার রান্না করে সে খাবার রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেন।



এখানে শেষ নয়, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান শোভার মানবসেবা। রাস্তায় একদিন এক প্রতিবন্ধী রিকশা চালকের কষ্ট দেখে সহ্য করতে পারেননি শোভা। পরে তিনি রিকশা চালককে ডেকে নিয়ে খাবার খাইয়ে তার কষ্টের কথা শুনে প্রতি মাসে তাকে ৩ হাজার করে টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। করোনার মাঝামাঝি সময় থেকে তার এ অনুদান দেয়া শুরু হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতেও এটা চলমান থাকবে বলে বিবার্তার এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তিনি।


তানিয়া হক শোভা অসহায়দের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে রেখে চলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নিজ জেলা গোলাপগঞ্জের মকসুদপুরের ঝুটিগ্রামের আলহাজ্ব আতিয়ার রহমান এতিমখানা নূরানী ও হাফেজিয়া মাদরাসায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন তিনি। নিজের জেলা পরিষদ থেকে প্রাপ্ত বেতনের টাকা দিয়ে ২ বছর ৫ মাস যাবত শিক্ষার্থীদের হাফেজি পড়াচ্ছেন। এসব অসহায় শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে আরো ৬ মাস। ৩ বছর পর তারা হাফেজ হয়ে বের হবে।



বিভিন্ন মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তানিয়া হক শোভা বিবার্তাকে বলেন, এই করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একার পক্ষে সারা বাংলার মানুষের জন্য সাহায্য করা সম্ভব নয়। তিনি আমাদের যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে হতদরিদ্রদের সাহায্য করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। তাই আমি আমার সামর্থ্য অনুয়ায়ী চেষ্টা করছি দেশের হতদরিদ্র মানুষের জন্য কিছু করার।


তিনি বলেন, অসহায়দের জন্য অনেক কিছু করার সামর্থ্য হয়তো আমার নেই। তারপরও ডাল ভাত খেয়ে ভালো আছি। তাছাড়া ছোটবেলা থেকেই আমি একজন মানবিক মানুষ। অন্যের কষ্ট সহ্য হতো না। আর আল্লাহ আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। তাই আমি আমার অবস্থান থেকে আমার আশে পাশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই।


মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এ সন্তান বলেন, আমরা অনেকে অনেক টাকা দিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে কিংবা শপিং করতে পছন্দ করি। এগুলো না করে এই টাকা দিয়ে অসহায়দের সহায়তা করলে কিছু মানুষ তো ডাল ভাত খেতে পারবে। মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশ স্বাধীন করেছেন কেউ না খেয়ে মরে যাবার জন্য নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঙ্কটে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়।


তিনি বলেন, এ সঙ্কটে জননেত্রী শেখ হাসিনা আপার জনগণের জন্য ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জনগণের জন্য তার কার্যকম ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক প্রশংসাও কুড়িয়েছে। তারপরও আপার (শেখ হাসিনা) পক্ষ থেকে সবার জন্য করা সম্ভব নয়। তাই আমার মনে হয়, আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আছি, তারা যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে সবাই অন্তত ডাল ভাত খেয়ে ভালো থাকতে পারবো।


তিনি আরো বলেন, এমন কিছু করে যেতে চাই, যাতে মৃত্যুর পরে সেগুলোর কারণে মানুষ আমাকে মনে রাখবে, দোয়া করবে। তাদের দোয়ায় আল্লাহ আমাকে ভালো রাখবে।


বিবার্তা/রাসেল/গমেজ/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com