শিরোনাম
করোনায় মানবসেবা, তারাই রিয়েল হিরো (পর্ব-৪)
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২১, ১৮:৫৩
করোনায় মানবসেবা, তারাই রিয়েল হিরো (পর্ব-৪)
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

চলমান বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে মানবসেবায় অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।


তার উদ্যোগে মহামারির শুরু থেকে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, কর্মহীন মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ, রমজান মাসে দুস্থ-হতদরিদ্রদের মাঝে মাসব্যাপী ইফতার বিতরণ, ঈদ উপহার, সম্মিলিত ত্রাণ বিতরণ, জয় বাংলা বাইসাইকেল সার্ভিস, জরুরি ঔষধ সরবরাহ, আলেম-ইমাম-খাদেমদের জন্য রমজান ও ঈদের বিশেষ উপহার, ভাঙা রাস্তা মেরামত করে জনদুর্ভোগ দূর করা, সাবেক ছাত্রলীগের নেত্রী আয়েশার পাশে দাঁড়ানোসহ নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়েছে।


করোনার এ সঙ্কটকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে নেমে অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করায় সনজিত চন্দ্র দাসের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সাধারণ মানুষ।



জানা গেছে, বাংলাদেশে যখন ২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রথম করোনা হানা দেয় তখন সরকার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ছুটি পেয়ে নিজ এলাকা ময়মনসিংহে চলে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তবে এখানে এসে বসে না থেকে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতামূলক কাজ শুরু করেন ছাত্রলীগের এ নেতা। বিতরণ করেন লিফলেট ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।


দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রামণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করলে মানুষ ঘরবন্দি হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে অর্থ ও খাদ্য সংকটে ভোগে। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে এ ছাত্রনেতাকে। সাথে সাথে উদ্যোগ নেন তিনি। নিজ এলাকায় ঘোষণা করেন কারো খাদ্য সহায়তার দরকার হলে তাকে যেন মুঠোফোন,এসএমএস কিংবা ফেসবুক-মেসেঞ্জারে জানানো হয়। এরপর মানুষের ডাক পেয়ে নিজেই হেঁটে কিংবা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ অন্যের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন তিনি। এ পর্যন্ত তার উদ্যোগে ৪০০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য পৌঁছে দেয়া হয়েছে।



নিজ এলাকার মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার দরকার হলে যাতে বিনাপারিশ্রমিকে বাসায় পৌঁছে যায় এজন্য তিনি স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে তৈরি করেন ‘জয় বাংলা বাইসাইকেল সার্ভিস’। এ টিম খবর পেয়ে মানুষের ডাকে সাথে সাথে সাড়া দিয়েছে।


দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কারো সংকট দেখা দিলে তাকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন সনজিত।পরে শিক্ষার্থীরা সাড়া দিলে এ পর্যন্ত ৩০০ শিক্ষার্থীকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তিনি।


২০২০ সালের পবিত্র রমজান মাসে নিজ উপজেলা ময়মনসিংহের গৌরীপুরে রিকশাচালক, দিনমজুর, হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে টানা ২৮ দিন ইফতার বিতরণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এই নেতা। তার উদ্যোগে প্রতিদিন ৩০০ জনেরও অধিক রোজাদারের মাঝে ইফতার বিতরণ করা হয়।এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন এ অঞ্চলের মানুষ।



শুধু তাই নয়, সনজিতের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ময়মনসিংহ এলাকার আলেম, মসজিদের ইমাম, খাদেম, মুয়াজ্জিনের জন্য রমজান ও ঈদের বিশেষ উপহার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তিনি নিজে এবং ছাত্রলীগের অন্যান্য কর্মীরা পৌঁছে দিয়েছেন এ উপহার।


২০২০ সালের ‘মহান মে দিবস’ উপলক্ষে গৌরীপুর উপজেলার শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী, চা দোকানদার, রংমিস্ত্রী, হেলপার,ভ্যান ও রিকশা চালক, কামার, হোটেল কর্মচারীদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা উপহার দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি।


করোনার এই দুঃসময়ে আর্থিক অস্বচ্ছল পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি অস্বচ্ছল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতেও ভুলেননি সনজিত। চক্ষুলজ্জায় নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে না পারা এসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তিনি।



নারায়নগঞ্জে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার হওয়া ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী আয়েশা অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছেন খবর পেয়ে সাথে সাথে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন ছাত্রলীগের এই নেতা। পরে তার বাসায় নিজ অর্থায়নে ১ মাসের খাদ্য সামগ্রী পাঠান সনজিত।


এ বিষয়ে আয়েশার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সনজিতের পাঠানো খাবার বাসায় পৌঁছেছে এবং আমি তা পেয়েছি। সনজিত আমার আপন ছোট ভাইয়ের মত দায়িত্ব নিয়ে আমাকে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। আর এই সংকটে বাসায় খাবার না থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই আমার বাসায় খাবার পাঠিয়ে দেন। আমার এই করুণ অবস্থায় সনজিত আমার ভাইয়ের মতোই পাশে দাঁড়িয়েছেন।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস অনন্য ভূমিকা রেখেছেন নিজ এলাকায়ও। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের শ্যামগঞ্জ রেলওয়ে এলাকার রাস্তার দুর্ভোগের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হলে জানতে পারেন সনজিত। এরপর ২০২০ সালের ১১জুলাই প্রায় ২ কিলোমিটার ভাঙা রাস্তা পানি সেচে মেরামত করা হয় সনজিতের নেতৃত্বে। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি নিজে এ কাজ করেন।



সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সনজিত চন্দ্র দাস বিবার্তাকে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলের সহযোগিতায় আমার নিজ এলাকা গৌরীপুরের অসচ্ছল মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আমি যেহেতু ছাত্রনেতা সেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অসচ্ছল ভাই-বোনদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি। মানবিক কাজে সহযোগিতার জন্য যে সকল শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেয়েছি আমি উনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার রাজনৈতিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি।


তিনি বলেন, করোনার এ সঙ্কটে আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবশ্রেণীর মানুষের পাশে আছেন। আমাদেরও মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের উপজেলার আলেম, ওলামা, মসজিদের ইমাম, খাদেম, মুয়াজ্জিন ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য বিশেষ উপহার দিয়েছি।


ছাত্রলীগের এই নেতা আরো বলেন, দেশের চলমান দুর্যোগে খুবই খারাপ সময় পার করছেন গরিব-দুঃখী, রিকশাচালক, খেটে খাওয়া অসহায় মানুষরা। রমজান মাসে তাদের পাশে থাকাটা মানবিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। তাই রোজাদার খেটে খাওয়া অসহায় মানুষদের জন্য আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি।মুজিব আদর্শের সৈনিক হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছি। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।


বিবার্তা/রাসেল/গমেজ/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com