শিরোনাম
করোনায় মানবসেবা, তারাই রিয়েল হিরো (পর্ব-১)
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২১, ২০:০৯
করোনায় মানবসেবা, তারাই রিয়েল হিরো (পর্ব-১)
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

চলমান করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বব্যাপী এক মহা আতঙ্কের নাম। এ ভাইরাস প্রাণঘাতী সংক্রামক হওয়ায় মানুষের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে অনেকে অনীহা প্রকাশ করছেন। নিকট আত্মীয়রাও অনেক সময় এক্ষেত্রে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করছেন। পিতা তার সন্তানের লাশের পাশে না যাওয়ার কিংবা সন্তান তার পিতার লাশের কফিন কাঁধে না নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ কঠিন পরিস্থিতিতেও কিছু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে নেমে অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।


এমনই একজন হলেন অদম্য আত্মপ্রত্যয়ী নারী তানিয়া হক শোভা। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচিত প্যানেল চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ যুব মহিলালীগ কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। দায়িত্ব পালন করছেন মুকসুদপুর উপজেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি সম্মিলিত সংগীত শিল্পী সোসাইটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে।


করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কঠোর লকডাউনের মাঝেও হতদরিদ্রদের জন্য নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কখনো প্রতিবন্ধি রিক্সাওয়ালার পাশে দাঁড়িয়েছেন, কখনো নিজে খাবার রান্না করে সে খাবার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে অসহায়দের মাঝে বিতরণ করছেন। আবার কখনো কারো চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন। নিজ কর্মচারী মৃত্যুুর পর এ কোভিড সঙ্কটে কেউ কাছে না আসলেও তিনি নির্ভীকচিত্তে সবকিছুর ব্যবস্থা করে মানবসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি শিক্ষা বিস্তারেও অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। নিজের জেলা পরিষদ থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে অসহায় শিক্ষার্থীদের হাফেজী পড়াচ্ছেন। বিবার্তা২৪ ডটনেটের অনুসন্ধানে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।



জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই অসহায় মানুষের জন্য মন কাঁদতো শোভার। মানুষের জন্য কিছু করা ও দেয়ার মধ্যে অসীম আনন্দ ও আত্মতৃপ্তি পেতেন তিনি। চলমান করোনাভাইরাসের এ সঙ্কটেও বিভিন্নভাবে অসহায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন শোভা।


দেশে যখন করোনায় মানুষের মৃত্যু শুরু হয় তখন মানুষের অন্য যেকোন কারণে মৃত্যু হলেও আতঙ্কে কেউ কাছে যেতো না। এমন পরিস্থিতিতে শোভার বাসার দারোয়ান আবু বকর অসুস্থ হলে তিনি নির্ভীকচিত্তে পাশে থেকে ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন এবং চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্বও নেন। কিন্তু আবু বকর মারা যায়। তার মৃত্যুর পর শোভা নিজ উদ্যোগে সমস্ত ব্যয়ভার বহন করে লাশ গোসল থেকে শুরু থেকে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সমস্ত কিছু করেন।


এ বিষয়ে আবু বকরের ছেলে রফিক বিবার্তাকে বলেন, আমি একটা ইন্টারভিউ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন। হঠাৎ আন্টি ( শোভা) ফোন দিয়ে আব্বার অসুস্থতার কথা জানালেন। এরপর আব্বাকে কঠোর লকডাউনের মধ্যে ল্যাব এইড হাসপাতালে তিনি ভর্তির ব্যবস্থা করলেন। ঔষধসহ যাবতীয় সবকিছুর ব্যয়ভার বহন করলেন। এরপরেও আব্বাকে বাঁচানো সম্ভব হলো না।আব্বা স্টক করে মারা গেলেন।


তিনি বলেন, কেউ ছিল না সেদিন। আন্টি একাই দায়িত্ব নিয়ে সব করেছেন। অনেক বড়লোক ছিল কেউ নেমে লাশও দেখেনি!


রফিক আরো বলেন, আব্বার চিকিৎসার বিষয়ে আন্টি (শোভা) টাকার কথা ভাবেননি। সবকিছু করেছেন। আব্বার মৃত্যুুর পর তিনি গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে ১৪ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে লাশ পাঠিয়েছেন।আমাদের বাড়িতে রাত ৩ টায় আব্বার লাশ পৌঁছায়।আন্টি আমার আব্বাকে সব সময়ই সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। আব্বার মৃত্যুুর পর তিনি আমাদের বাড়ি আসেন। এখনো তিনি আমাদের খোঁজ -খবর রাখছেন এবং বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।



দেশে যখন করোনা মারাত্মক রূপ ধারণ করে তখন সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করলে দিনমজুর-অসহায়রা ভোগে খাদ্য সঙ্কটে। এ পরিস্থিতিতে অসহায়দের জন্য এগিয়ে আসলেন শোভা। নিজে বাসায় খাবার রান্না করে সে খাবার রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেন।


করোনা মহামারীতে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া এ মানবহিতৈষী নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও তিনি দমে যাননি। নিজে সুস্থ হয়ে ফের মাঠে নেমে অসহায় জনগণের জন্য কাজ করেছেন।


রাস্তায় একদিন এক প্রতিবন্ধী রিক্সা চালকের কষ্ট দেখে সহ্য করতে পারেননি শোভা। পরে তিনি রিক্সা চালককে ডেকে নিয়ে খাবার খাইয়ে তার কষ্টের কথা শুনে প্রতি মাসে তাকে ৩ হাজার করে টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন। করোনার মাঝামাঝি সময় থেকে তার এ অনুদান দেয়া শুরু হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতেও এটা চলমান থাকবে বলে তিনি বিবার্তার এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।



তানিয়া হক শোভা অসহায়দের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে রেখে চলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নিজ জেলা গোলাপগঞ্জের মকসুদপুরের ঝুটিগ্রামের আলহাজ্ব আতিয়ার রহমান এতিমখানা নূরানী ও হাফেজিয়া মাদরাসায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন তিনি। নিজের জেলা পরিষদ থেকে প্রাপ্ত বেতনের টাকা দিয়ে ২ বছর ৫ মাস যাবত শিক্ষার্থীদের হাফেজি পড়াচ্ছেন। এসব অসহায় শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে আরো ৬ মাস। ৩ বছর পরে তারা হাফেজ হয়ে বের হবে।


এতিমখানায় সহযোগিতার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বিবার্তাকে বলেন, উনি (শোভা) আমাদের এলাকায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের এতিমখানায় বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। নিজে থেকে যোগাযোগ করে এখানকার সঙ্কট সম্পর্কে খোঁজ -খবর রাখছেন এবং সমাধানের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করছেন।



বিভিন্ন মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তানিয়া হক শোভা বিবার্তাকে বলেন, ছোট বেলা থেকেই আমি একজন মানবিক মানুষ। অন্যের কষ্ট সহ্য হতো না। আর আল্লাহ আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। তাই আমি আমার অবস্থান থেকে আমার আশে পাশের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই।


তিনি বলেন, এ সঙ্কটে জননেত্রী শেখ হাসিনা আপার পক্ষ থেকে সবার জন্য করা সম্ভব নয়। তাই আমার মনে হয়, আমরা যারা তার সৈনিক আছি তারা যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে সবাই অন্তত ডাল ভাত খেয়ে ভালো থাকতে পারবো।


তিনি আরো বলেন, এমন কিছু করে যেতে চাই, যাতে মৃত্যুর পরে সেগুলোর কারণে মানুষ মনে রাখবে, দোয়া করবে। তাদের দোয়ায় আল্লাহ আমাকে ভালো রাখবে।


বিবার্তা/রাসেল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com