শিরোনাম
কদমতলীর ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ড!
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২১, ১৯:৪০
কদমতলীর ট্রিপল মার্ডারের নেপথ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ড!
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর কদমতলীর মুরাদনগরে মা-বাবা ও বোনকে হত্যার ঘটনায় আরেক মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম ও তার স্বামী শফিকুল ইসলামকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মেহজাবিনের চাচা সাখাওয়াত হোসেন বাদী হয়ে এই মামলা করেন। পরে রবিবার (২০ জুন) মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই জাকির হোসাইন মেহজামিন মুনের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস শুনানি শেষে মেহজামিন মুনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।


তবে পুলিশের ধারনা, অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে মা-মেয়ের দ্বন্দ্ব, স্বামীর সঙ্গে ছোটবোনের পরকীয়া সন্দেহ ও সম্পর্কের অবনতি এবং আগের স্বামীকে হত্যার মানসিক যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতেই মেহজাবিন পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। আর সেই পরিকল্পনা থেকেই কদমতলী হত্যাকাণ্ড বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি মেহজাবিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাকি এ কথা স্বীকারও করেছেন।


নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত মৌসুমীর স্বামী মাসুদ রানা প্রায় ২৫ বছর মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। তিন মাস আগে তিনি দেশে ফেরেন। স্বামী প্রবাসে থাকার সময়ে মৌসুমী অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কয়েকজন যৌনকর্মীকে দিয়ে তিনি দীর্ঘদিন অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়েছেন। এমনকি নিজের দুই মেয়েকেও দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতে তিনি। এক সময় তার কথিত প্রেমিকের সঙ্গে মেহজাবিনের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের অন্তরঙ্গ অবস্থার একটি ভিডিওচিত্র পরিবারের কেউ ধারণ করে রেখেছিলেন।


বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ব্যক্তিগত সচিব আমিনের সঙ্গে মেহজাবিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে। এতে আপত্তি ছিল পরিবারের। মৌসুমী এ ব্যাপারে জানার পর মেয়েকে একরকম জোর করেই শফিকুলের সঙ্গে বিয়ে দেন।


মেহজাবিনের খালা ইয়াসমিন বলেন, পাঁচ বছর আগে পারিবারিকভাবেই শফিকুল ও মেহজাবিনের বিয়ে হয়। এর কিছুদিন পরই মেহজাবিনের আগের সম্পর্ক নিয়ে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় আমিনকে হত্যা করেন শফিকুল। এর আগে তিনি শাশুড়ি মৌসুমী ও খালাশাশুড়ি শিউলিকে দিয়ে আমিনকে ডেকে নেন। এ কারণে হত্যা মামলায় ওই দুজন ও মেহজাবিনকে আসামি করা হয়।


তিনি বলেন, এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে ছয় মাস কারাগারে থাকার পর জামিন পান শফিকুল। পরে মেহজাবিনের ছোট বোন জান্নাতুলের ওপর নজর পড়ে তার। তিনি নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে একপর্যায়ে জামাতার বিরুদ্ধে মামলা করেন মৌসুমী। আবার তার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন জামাতা।


ইয়াসমিন আরো বলেন, শফিকের সঙ্গে আমার বোন পেরে উঠতে না পেরে তার ছোট মেয়ে জান্নাতুল ইসলামকে (শফিকের শালিকে) কারাগারে দিয়ে দেন। শফিক তদবির করে ৫ মাস পর তাকে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে এসে আবার তার সঙ্গে অনৈতিক কাজ করেন। এ নিয়ে আমার ভাগ্নি ও বোনের সঙ্গে শফিকের কলহ লেগেই থাকত। চার বছর আগে সফিক আমার বোনকে (তার শাশুড়ি) হত্যার উদ্দেশ্যে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। চিকিৎসা করতেও বাধা দেয়। দরজা-জানালা বন্ধ করে আমার বোন ও ভাগ্নিকে প্রায়ই মারধর করত। এ বিষয়ে কদমতলী থানায় অভিযোগ জানিয়ে কোনো ফল না পেয়ে কোর্টে মামলা করা হয়েছে।


ইয়াসমিনের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবেই শফিকুল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তিনি একজন ঠান্ডা মাথার খুনি। এ ঘটনায় তিনি স্ত্রীকে জিম্মি করে হত্যায় সহায়তা করতে বাধ্য করেছেন। নইলে তাদের শিশু সন্তান তৃপ্তিকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। একা তিনজনকে হত্যা করা সম্ভব নয় বলেই তিনি স্ত্রীকে কাজে লাগিয়েছেন। তাকে বোঝানো হয়েছে, চলমান অশান্তি নিরসনে এটাই কার্যকর পন্থা। আর ঘটনার পর তিনি মুনকে বুঝিয়েছেন, তুমি পুলিশে ফোন করে হত্যার দায় স্বীকার করো। কয়েকদিন পর আমি তোমার জামিনের ব্যবস্থা করব।


এদিকে মেহজাবিন ইসলাম মুন গ্রেফতার হলেও তার স্বামী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) পুলিশি পাহাড়ায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বিবার্তাকে বলেন, একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধারের সময় মেহজাবিন ইসলাম মুনকে আটক করা হয়। তাকে আটকের পর মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তার স্বামী শফিকুল ইসলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তাকে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে। সুস্থ হওয়ার পর গ্রেফতার দেখানো হবে। মেহজাবিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার স্বামী শফিকুল ইসলামকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।


পুলিশ জানায়, অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন মেহজাবিন মুন। মা-বাবাসহ ছোট বোনকে হত্যা করে ৯৯৯-এ ফোন দেন মুন নিজেই। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কদমতলীর মুরাদপুর হাজী লাল মিয়া সরকার রোড এলাকা থেকে স্বামী, স্ত্রী ও মেয়ের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। আটক মেহজাবিন থাকেন আলাদা বাসায়। মায়ের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন তিনি।


পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, মেহজাবিন আত্মস্বীকৃত একজন খুনি। স্বামীর সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো ছিল না। বোনের সঙ্গে তার স্বামীর অবৈধ কোনো সম্পর্ক ছিল কি না সে বিষয়ে শফিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।


বিবার্তা/খলিল/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com