শিরোনাম
সেই পাপুলের আসনে মনোনয়ন পেতে মরিয়া আ.লীগের নিষ্ক্রিয়রা
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২১, ১৭:২৬
সেই পাপুলের আসনে মনোনয়ন পেতে মরিয়া আ.লীগের নিষ্ক্রিয়রা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ায় শূন্য ঘোষিত মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম পাপুলের আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষাণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই তফসিল অনুয়ায়ী আগামী ১১ এপ্রিল ওই আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তাই ওই আসন থেকে সংসদ সদস্য হতে চান আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। এছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রার্থীরা দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। তবে পাপুলের সহযোগী, দলের নিষ্ক্রিয় নেতা ও জন বিচ্ছিন্ন হাইব্রিড নেতারাই উচ্চপর্যায়ে দৌড়ঝাঁপে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে থেকে ওই আসানে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে আওয়ামী লীগ ফের আরেক পাপুলের জন্ম দিবে হলে মনে করছেন ওই আসনের ভোটার ও তৃণমূল আওয়ামী লীগ। তাই যাচাই-বাছাই করে দলের ত্যাগী নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (৫ মার্চ) থেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। ১০ মার্চ পর্যন্ত এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের ফরম কেনার সুযোগ ছিল। তবে শুরুর দিনেই দলের চারজন নেতা ফরম কিনেছেন। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ফরম সংগ্রহ করেন। শনিবার (৬ মার্চ) আ.লীগের জেলা কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক নেতা ফরম কিনেছেন। বাকিরাও মনোয়ন ফরম ক্রয় করেছেন বলে জানা গেছে।


আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. এহসানুল কবির জগলুল, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন, জসিম উদ্দিন ওরফে টাওয়ার জসিম, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুদ্দিন চৌধুরী নয়ন ওচট্টগ্রাম এক্সসশাহিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুল বাকীন ভূঁইয়া। তবে সম্প্রতি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে ও অনুসন্ধান করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অবস্থান জানার চেষ্টা করে বিবার্তা২৪নেট।


বিবার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ ১৯৯৬ এর উপ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে এলাকায় রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত আচরণ দিয়ে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছিলেন কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এ সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদেও আশ্রয় নিতেও অনিহা প্রকাশ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিএনপির দলীয় প্রধান ও সেই সময়ের প্রাধনমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অনুরোধে তিনি বাফুফের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকের পদও ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দলীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হলেও তাকে কখনোই নির্বাচনী এলাকায় যেতে দেখা যায়নি।


জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. এহসানুল কবির জগলুল বর্তমানে তিনি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ওষুধ কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) এমডির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৪ সালে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয়ায় তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ইডিসিএল এর পরিচালক হিসাবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।


আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন, তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি বিটিএমএ এর সভাপতি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। সেই সময় নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে আনারস প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচন করেন। সেই কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন। এর পর থেকে তিনি এলাকায় জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।


মনোনয়ন প্রত্যাশী জসিম উদ্দিন ওরফে টাওয়ার জসিমও নৌকার মাঝি হতে আগ্রহী বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু গত ৩১ বছর থেকে রাজনীতি থেকে তিনি দূরে রয়েছেন। এছাড়া এলাকায় ভোটারদের কাছেও তিনি অপরিচত বলে জানা গেছে।


এছাড়াও শহীদ ইসলাম পাপুলের অন্যতম সহযোগী লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ গোলাম ফারুক পিংকু, চট্টগ্রাম এক্সসশাহিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুল বাকীন ভূঁইয়া দলীয় মনোনয়নের জন্য তদবীর করছেন বলে জানা গেছে।


জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুদ্দিন চৌধুরী নয়নও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি স্কুল জীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত আদর্শ সামাদ উচ্চ বিদ্যালের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে পৌর ছাত্রলীগ, উপজেলা সদর ছাত্রলীগ, লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পরে লক্ষ্মীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র দীর্ঘ রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।


এদিকে, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে জড়িত এমন ত্যাগী নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে অনুরোধ করেছেন অনেকেই।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন শরীফ বিবার্তাকে বলেন, ওই আসনে দীর্ঘ দিন থেকে দলীয় ত্যাগী নেতার অভাব রয়েছেন। এছাড়াও পাপুলের কর্মকাণ্ডে ওই এলাকার জনগণ অনেক বিরক্ত। তাই যে নেতা তৃণমূলের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং দীর্ঘ দিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন; এমন কাউকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।


জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব ইমতিয়াজ বিবার্তাকে বলেন, শহীদ ইসলাম পাপুলের কলঙ্কিত অধ্যায় মুছে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদে বিপদের বন্ধু এমন কাউকে মনোনয়ন দিলে ভালো হয়। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সম্বনয় করে বিগত দিনে যারা সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন তাদের মধ্যে থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।


লক্ষ্মীপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শংকর মজুমদার বিবার্তাকে বলেন, জনকল্যাণমূলক চিন্তাভাবনা যিনি করবেন, যার মধ্যে কথা ও কাজে মিল আছে এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাব আছে এমন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে ভালো হয়।


তিনি আরো বলেন, অতীতে অনেককেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা এমপিও হয়েছেন। কিন্তু এমপি হওয়ার পর ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে যান। এতে জনগণের কোনো লাভ হয় না। তবে জনগণ ও এলাকার মানুষের পাশে উন্নয়ন করবেন এমন কাউকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।


উল্লেখ্য, ইসি সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম পাপুল। গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের ফৌজদারি আদালত পাপুলকে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করায় তার (লক্ষ্মীপুর-২) আসনটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। আসন শূন্য ঘোষণা গেজেট নির্বাচন কমিশনেও পাঠানো হয়। এরপর ইসি উপ-নির্বাচনের তফসিল দেয় গত ৩ মার্চ।


সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান স্বাক্ষরিত আসন শূন্য ঘোষণা গেজেটে উল্লেখ করা হয়, কুয়েতের ফৌজদারি আদালত কর্তৃক গত ২৮ জানুয়ারি ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় ২৭৫ লক্ষ্মীপুর-২ হইতে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম পাপুল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকিবার যোগ্য নহে। সেই কারণে সংবিধানের ৬৭ (১) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ ২৮ জানুয়ারি হইতে তাহার আসন (২৭৫ লক্ষ্মীপুর-২) শূন্য হইয়াছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী-বিধির ১৭৮ (৪) বিধি অনুযায়ী ২৭৫ লক্ষ্মীপুর-২ হইতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের আসন শূন্য সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হইল।


শূন্য আসনে নির্বাচনের বিধান অনুযায়ী, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে ভোটগ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আগামী ২৮ এপ্রিল ৯০ দিন পূর্ণ হবে। এর আগেই আসনটিতে উপ-নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।


এর আগে পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েত সরকার মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ এনে ২০২০ সালের ৭ জুন আটক করেছিল। তারপর বিচারকাজ শেষে দেশটির আদালত গত ২৮ জানুয়ারি রায় দেন। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি।


বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com