বডি স্প্রে ও অন্যান্য সুগন্ধি ব্যবহার ইসলামে জায়েজ কি?
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:১৯
বডি স্প্রে ও অন্যান্য সুগন্ধি ব্যবহার ইসলামে জায়েজ কি?
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইসলামে সুগন্ধি বা খুশবোর ব্যবহার বৈধ। সুগন্ধি বা খুশবোর ব্যবহার ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খুবই প্রিয়। তিনি নিজে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তাই সুগন্ধি ব্যবহার করা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। শর্ত হলো শুধু তাতে হারামের কোনো না থাকলেই হলো।


আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.)-এর সুরভির চেয়ে হৃদয়কাড়া কোনো ঘ্রাণ আমি কখনো নেই নি। (ইমাম নবভির ব্যাখ্যাকৃত মুসলিম, হাদিস নং ৮৬/১৫)। আনাস (রা.)-এর অন্য বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমার পৃথিবীর সুগন্ধি আমার কাছে প্রিয় করা হয়েছে এবং নামাজের ভেতর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে। ’ (নাসাঈ, হাদিস নং :  ৩৯৩৯)


বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কেউ সুগন্ধি উপহার দিলে তিনি তা গ্রহণ করতেন, ফিরিয়ে দিতেন না। আবার কেউ সুগন্ধি দিলে ফিরিয়ে দিতেও তিনি নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি)


তবে, বডি স্প্রেতেও রয়েছে সুগন্ধি। এ সব সুগন্ধি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সুগন্ধির মধ্যে যদি অ্যালকোহল মাত্রাতিরিক্ত থাকে বা সুগন্ধি যদি অ্যালকোহলের কারণে মাত্রাতিরিক্ত ঝাঝালো হয় তবে তা ব্যবহার বৈধ হবে না। কেননা যেসব অ্যালকোহল আঙুর, খেজুর অথবা কিশমিশ থেকে তৈরি সেসব অ্যালকোহল সম্পূর্ণ হারাম। এ ধরনের অ্যালকোহল মেশানো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না।


হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম।’ (বুখারি)


তবে এ তিন উপাদান ছাড়া যেসব অ্যালকোহল বিভিন্ন শস্যদানা, গাছের ছাল, মধু, যব, আনারসের রস, গন্ধক, সালফেট ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান থেকে তৈরি তা নাপাক নয়। সুগন্ধিযুক্ত বডি স্প্রে বা যে কোনো সুগন্ধিতে যদি তা এমন পরিমাণ মেশানো হয় যা নেশার সৃষ্টির করে না তবে তা ব্যবহার বৈধ।


শুধু সুগন্ধিযুক্ত বড়ি স্প্রে বা আতরই নয়, সুগন্ধিযুক্ত সাবানসহ যে কোনো পারফিউমের ক্ষেত্রেই এ বিষয়টি প্রযোজ্য। অর্থাৎ নেশার সৃষ্টি করে না বা বা শারীরিক বা মস্তিষ্কের মতিভ্রমের মতো কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না। এমন পরিমাণ অ্যালকোহলসমৃদ্ধ সুগন্ধি ব্যবহার করে নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত করা যাবে। আর তা ব্যবহার করা বৈধ।


যে কোনো সুগন্ধিযুক্ত স্প্রে, আতর বা পারফিউম ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলো দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত থাকা। এ সম্পর্কে ইসলামিক স্কলারদের বক্তব্য হলো- কোনো জিনিস যে উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে আর সেটি তৈরির উপাদানে যদি বিচ্ছিন্ন কিছু না থাকে তবে তা ব্যবহারে ইসলামি শরিয়তে বাধা নেই বরং তা ব্যবহার বৈধ।


বডি স্প্রেসহ যেকোনো পারফিউম বা আতর যদি মাত্রারিক্ত অ্যালকোহল দিয়ে তৈরি করা হয়। আর তার ঘ্রাণে মানুষ নেশাগ্রস্ত হয় তবে তা ব্যবহার বৈধ হবে না।


আবার সুগন্ধি বা খুশবোতে যদি এমন কোনো হারাম বস্তু মিশ্রিত হয়, আর তা মিশ্রিত করার আগে ওই জিনিসকে এমনভাবে প্রসেসিং করে যে, হারাম বস্তুটির মৌলিকত্ব বিদ্যমান থাকে না তবে তা ব্যবহার করা বৈধ। যদি সুগন্ধিতে সে হারাম বস্তুর মৌলিকত্ব থাকে তবে তা ব্যবহার করা বৈধ নয়।


আর যদি হারাম বস্তু মিশ্রিত করা হয়েছে কিনা, তা জানা না থাকে তাহলেও ওই পারফিউম, স্প্রে ব্যবহারেও কোনো সমস্যা নেই বলে উল্লেখ করেছেন অনেক ইসলামিক স্কলার।


সুতরাং হাদিসে ঘোষিত ৩ ধরনের অ্যালকোহল সমৃদ্ধ কোনো সুগন্ধি ব্যবহার না করে অন্যান্য বৈধ পন্থায় তৈরি সুগন্ধি ব্যবহার করে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত তথা আদর্শের অনুসরণ করা উচিত।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com