রজব মাসের আমল নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা বর্জন করা কর্তব্য
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৬
রজব মাসের আমল নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা বর্জন করা কর্তব্য
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

‘রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত।সুতরাং রজব মাস অত্যন্ত সম্মানিত ও ফজিলতপূর্ণ।


পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস নিশ্চয়ই বারোটি। সুতরাং তোমরা এই মাসগুলোতে নিজেদের প্রতি অত্যাচার কোরো না।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩৪)। যেহেতু এ মাস রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে তাই এই রজব মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতে হবে।


এ মাসের বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এ মাস আল্লাহ প্রদত্ত চারটি সম্মানিত মাসের (আশহুরে হুরুমের) একটি। রাসুল (সা.) এ মাস সম্পর্কে খুবই গুরুত্ব দিতেন। ফলে রজবের চাঁদ দেখা গেলেই তিনি কিছু বিশেষ আমল শুরু করতেন। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, যখন রজব মাস শুরু হতো, নবী করিম (সা.) তখন এ দোয়াটি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত হায়াত বৃদ্ধি করে দিন।’ (আলমুজামুল আওসাত, হাদিস : ৩৯৩৯)।


হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলেকে (সা.) রজব ও শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি, রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি। 


তবে, রজব মাসে আলাদা নির্দিষ্ট নামাজ বা রোজা নেই, যা একমাত্র রজব মাসে আদায় করতে হয়। নফল নামাজ এবং নফল রোজা নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত বছরের যেকোনো সময় আদায় করা যায়। আর রজব যেহেতু সম্মানী মাসের অন্তর্ভুক্ত, তাই অধিক পরিমাণে নফল নামাজ ও রোজা পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে।


রজব মাসের বিশেষ আমল হলো বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। বিশেষত প্রতি সোমবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার এবং মাসের ১, ১০; ১৩, ১৪, ১৫; ২০, ২৯, ৩০ তারিখ রোজা রাখা। অধিক হারে নফল নামাজ পড়া। বিশেষ করে তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত-দোহা, জাওয়াল, আউয়াবিন; তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদি আদায় করা।


এছাড়াও, আরবি অন্য মাসগুলোর মতো এ মাসেও আইয়ামে বিজের তিন রোজা ও প্রত্যেক সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা রাখা উত্তম।


রজব মাসে নেক আমল ও পাপ বর্জনের মাধ্যমে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তওবা ও ইস্তিগফার করতে হবে। মোহমুক্তি ও পাপ পরিহার করার সক্ষমতা অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে।


তবে আমল করতে গিয়ে এ কথা অবশ্যই স্মরণ রাখা উচিত, ইবাদত করতে গিয়ে যেন কোনো প্রকার কুসংস্কারে জড়িয়ে না পড়ি। 


রজবের রোজা রাখা সুন্নত নয়


রজবের বিশেষ রোজা হিসেবে ফজিলতপূর্ণ মনে করে রোজা রাখা সুন্নত নয়। বিশেষত, রজবের রোজাকে সুন্নত ও মুস্তাহাব মনে করে নফল রোজা রাখা ঠিক নয়। 


আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, ২৭ রজবে রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ। এমনকি অনেকের মধ্যে এ বিশ্বাস রয়েছে যে, এই একটি রোজার ফজিলত এক হাজার রোজার সমান। এ জন্য তাকে হাজারি রোজা বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এ রোজার ব্যাপারে সহিহ ও গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা নেই।


অনেকের মাঝে আবার শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ নামাজ ও ইবাদতের প্রচলন রয়েছে। অধিকাংশ আলেমের মতে, শবে মেরাজ উপলক্ষে নামাজ বিদআত। নবী করিম (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে রজব মাসের রোজা সম্পর্কেও বিশুদ্ধ কোনো হাদিস বর্ণিত নেই। 


আবার, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে ওমরা করেছেন, এমন কোন প্রামাণ্য দলিল নাই। এ জন্য নির্দিষ্ট ভাবে রজবে ওমরা করা কিংবা এতে ওমরার বিশেষ ফজিলত আছে-বিশ্বাস করা বিদআত।


তবে, কেউ যদি স্বাভাবিক নিয়মে (ফজিলতের বিশ্বাস বিহীন) রজব মাসে ওমরা করে, তাতে দোষ নেই। কারণ, এ সময়েই তার জন্য ওমরা করার সুযোগ হয়েছে।


হাদিসে কতিপয় মিথ্যাচারের দ্বারা এ নামাজের সূচনা হয়। এ নামাজ রজবের প্রথম রাতে পড়া হয়। একে পরিত্যাগ করা, এর থেকে বিরত থাকা এবং এর সম্পাদনকারীকে নিষেধ করা কর্তব্য। কারণ, ইসলাম কোন আনুষ্ঠানিক ইবাদতকে বৈধতা দেয় না।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com