শিরোনাম
করোনা থেকে নিরাপদ থাকতে যেসব উপদেশ দিলেন কাবা শরিফের ইমাম
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২১, ১২:৫৫
করোনা থেকে নিরাপদ থাকতে যেসব উপদেশ দিলেন কাবা শরিফের ইমাম
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশসহ প্রায় দেশেই করোনা আতঙ্কে মানুষ দিশেহারা। করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবারসহ দুই বছর বহির্বিশ্বের হজ কার্যক্রম বন্ধ রেখে সৌদি। এ মহামারিতে আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য ও আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার বিশেষ উপদেশ দিয়েছেন কাবা শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববিতে প্রধান খতিব ও ইমাম শায়খ ড. আব্দুর রহমান সুদাইসি।


মানুষের অন্যায় ও অপরাধের বিপরীতে মহামারি করোনাভাইরাস এক মহাপরীক্ষা। তাই করোনাভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও ফয়সালার উপর ধৈর্যের সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপনের বিকল্প নেই।


মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষ আজ তিনভাগে বিভক্ত। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দিশেহারা হওয়া মানুষের অবস্থা হচ্ছে এমন-


১. একটি পক্ষ করোনাভাইরাস থেকে সতর্কতায় অসংখ্য পরিকল্পনা করে ঠিকই কিন্তু আল্লাহর ওপর ভরসা করে না। এটি মানুষের চরম বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়।


২. আবার একদল মানুষ নিরাপদ থাকতে কোনো পদক্ষেপ বা পরিকল্পনা ছাড়াই শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে বসে থাকার পক্ষে। অথচ এমনটি সম্পূর্ণ সুন্নাহ বিরোধী কাজ।


৩. একদল মানুষ সঠিক অবস্থার ওপর রয়েছে। তাহলো-


‘তারা মহান আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখার পাশাপাশি করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য পূর্ণ সতর্কতার সঙ্গে সুন্নাহর অনুসরণ ও অনুকরণে চিকিৎসা গ্রহণ ও নিরাপদ থাকার উপায় অবলম্বন করে থাকে।’ এটি সুন্নাহর অনুসরণ ও অনুকরণের অনন্য দৃষ্টান্ত।


মহামারি করোনায় মুসলিম উম্মাহর করণীয় :মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে নিরাপদ ও সুস্থ থাকতে শায়খ সুদাইসি কুরআন-সুন্নাহর উদ্ধৃতি দিয়ে বিশেষ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাহলো-


১. ধৈর্য ও আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা : দুনিয়ার সব মাহমারিই মানুষের জন্য পরীক্ষার কারণ। এ প্রসঙ্গে শায়খ সুদাইসি কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াত তুলে ধরেন-


> অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫)


> ‘(হে নবি!) আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছবে না। কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহর ওপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৫১)


২. সতর্কতা অবলম্বন : মহামারি করোনায় সতর্কতা অবলম্বন করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত ও নির্দেশ। হাদিসে এসেছে-


হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত একটি হাদিস তুলে ধরেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যদি তোমরা মহামারির (নতুন নতুন রোগ-ব্যাধির) কোনো সংবাদ শোন, তো সেখানে (আক্রান্ত অঞ্চলে) তোমরা প্রবেশ থেকে বিরত থাক। আর যদি কোনো শহরে বা নগরে কেউ সে মহামারিতে আক্রান্ত হয়, তো সেখান থেকে তোমরা বের হয়ে (অন্য কোনো অঞ্চলে) যেয়ো না।’ (বুখারি)


মহামারির সংক্রমণ কমাতেই হাদিসে পাকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যাতে সংক্রামক কোনো ব্যাধি এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ছড়িয়ে না পড়ে। রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ভালো অঞ্চলে না যায়; আবার ভালো ব্যক্তি আক্রান্ত এলাকায় যেয়ে নতুন করে আক্রান্ত না হয়; এ বিষয়ে সতর্ক থাকা। সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য প্রিয় নবি আরও ঘোষণা করেন-


‘সিংহের কাছ থেকে পলায়নের মতো তুমি কুষ্ঠ রোগী থেকে পলায়ন কর।’ (মুসনাদে আহমদ)


৩. তাওবাহ-ইসতেগফার করা : যে কোনো মহামারিতে (নতুন নতুন রোগ-ব্যাধিতে) আক্রান্ত হওয়া থেকে সুস্থতা লাভে বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করা সুন্নাত। যাতে মানুষ সতর্কতা বা সুস্থতার উপায় অবলম্বন করে। তাওবাহ-ইসতেগফার মানুষের সব সমস্যার সমাধান করে দেয়।


৪. মসজিদমুখী হওয়া : মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়ে বিশ্বব্যাপী অনেক স্থানে ভাইরাস মোকাবেলায় মসজিদে যাওয়ার পরিবর্তে ঘরেই ইবাদত-বন্দগি করছে। অথচ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদেই ইবাদত-বন্দেগি সম্ভব। তাই মসজিদ থেকে পলায়ন নায় বরং নিয়ম মেনে মসজিদমুখী হওয়ার বিকল্প নেই।


করোনার ভয়ে মসজিদ থেকে পলায়ন করা মানুষের মানবিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। মানুষকে মনে রাখতে হবে-


‘আল্লাহর আশ্রয় থেকে এক মুহূর্ত পলায়ন করার বা তার অমুখাপেক্ষী হওয়ার সুযোগ নেই।’


৫. আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখা : আল্লাহ তাআলাই বান্দাকে রোগ দেন। আবার তিনিই মানুষকে সুস্থ করেন। আল্লাহর প্রতি এ বিশ্বাস রাখা। যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের উদ্ধৃতি দিয়ে কুরআনে ঘোষণা করেন-


‘আর যখন আমি অসুস্থ হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ৮০)


কুরআনের এ আয়াত প্রমাণ করে যে, মানুষ সুস্থতা লাভে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে অসুস্থতা থেকে পূর্ণ সুস্থতা দান করবেন।


৬. বাহ্যিক নিরাপত্তা গ্রহণ করা : শায়খ সুদাইসি ব্যাহিক উপায় অবলম্বন করতে কিছু স্বাস্থ্যবিষয়ক সতর্কতার উপদেশও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের ভয়ভীতি, শঙ্কা বা আতঙ্কের ফলে একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহা করা, মসজিদে আসা বন্ধ করে দিতে চলেছে। বরং তা না করে করোনা সতর্কতায় বাহ্যিকভাবে নিরাপত্তা গ্রহণ করাও জরুরি। তাহলো-


> সব সময় জীবাণুমুক্ত থাকার চেষ্টা করা।


> ঘন ঘন সাবান-পানি দিয়ে দুই হাত ধোয়া।


> অপরিচ্ছন্নতা ও আবর্জনার মাধ্যমে যাতে সংক্রামক ব্যাধি ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা।


সতর্কতামূলক এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা সুন্নাতের পরিপন্থী বিষয় নয়; বরং তা হাদিসের নির্দেশনাও বটে। তাই করোনাসহ নতুন নতুন সংক্রামক রোগব্যাধি ও মহামারি দেখা দিলে তা থেকে আশ্রয় লাভে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং ধৈর্যধারণ করা।


৭. আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা : যে কোনো রোগ-ব্যাধিসহ মহামারি করোনার এ সময়ে বেশি বেশি ইস্তেগফারের সঙ্গে সঙ্গে এ দোয়াগুলোরি নিয়মিত আমল করা। তাহলো-


>> اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ


উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)


অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানি না) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।


>> اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ


উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’


অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)


সকাল-সন্ধ্যার এ দোয়া এবং ইস্তেগফারও বিশেষ কার্যকরী। কেননা হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা দিয়েছেন-


>> হজরত উসমান ইবনে আফ্‌ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট/ক্ষতি করতে পারবে না-


بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ


উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্সামায়ি ওয়া হুয়াস্‌সামিউল আলিম।’ (তিরমিজি)


অর্থ : ‘ওই আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ঠ করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’


>> সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া


اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ


উচ্চারণ : আল্লাহুম্মারাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্কতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহ্দিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউলাকা বিজাম্বি ফাগ্ফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।'


অর্থ : 'হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই বান্দা আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নেয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।' (বুখারি)


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com