শিরোনাম
একটি পারুল বোন আমাদের
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২১, ১৭:১২
একটি পারুল বোন আমাদের
২১ আগস্ট, ২০০৪ গ্রেনেড হামলার সময় মানববর্ম তৈরী করে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে বুক দিয়ে আগলে রাখেন নেতাকর্মীরা
গুলশাহানা ঊর্মি
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। শোকের মাস আগস্টের আরেকটি শোকাবহ কলঙ্কিত দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার সতের বছর।


২১ আগস্ট, ২০০৪।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তখন প্রধান বিরোধীদল হিসেবে বিএনপি-জামাত জোটের নির্মম-নিশংস-বর্বরতার সামনে টিকে থাকার জন্য প্রানপণ লড়াই করে যাচ্ছিল। ২০০১ সালে দেশি-বিদেশী তৎপরতায় ষড়যন্ত্রমূলক নীল নকশার নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে হারোনো হয়। এরপরেই শুরু হয় বিএনপি-জামাত জোটের নির্লজ্জ-নির্মম তান্ডবলীলা আর হত্যাযজ্ঞ, যা একাত্তরের পাক বাহিনীকেও হার মানায়। সারাদেশে সন্ত্রাস, সংখ্যালঘু নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর আর লুটের মহোৎসব। দলীয় নেতা, কর্মী, সমর্থক ছাড়াও নির্বিচার হত্যা করা হয় সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চলে অত্যাচারের স্ট্রিমরোলার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিশ্চহ্ন করতে এমন কোন পন্থা নেই যা দানবেরা সেসময় বেছে নেয়নি।


এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট পরিচালিত হয় ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য, অমানবিক, সভ্যাতাবিবর্জিত এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। সংগঠিত হয় সভ্যতার ইতিহাসে অকল্পনীয় রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত মরণঘাতী, ভয়ংকর গ্রেনেড চার্জ হয় রাজনৈতিক সমাবেশের উপর। গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় ধ্বংসযজ্ঞ আক্রান্ত করে মানবতাকে। রক্ত-ঝড়ের প্রচন্ডতায় ছিন্ন-বিছিন্ন হয়ে যায় মানব সভ্যতা, আর ধ্বংসের প্রচন্ডতায় মলিন হয়ে গিয়েছিলো বাংলা ও বাঙালীর মুখ। জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিলো মৃত্যুপুরীতে।


হামলার যাবতীয় তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে এটা এখন দিনের আলোর মত স্পষ্ট যে, আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা, দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতেই এ হামলা পরিচালিত হয়।


১৯৮১ সালের ১৭ মে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (আমরা যাকে ভালবাসে ‘আপা’ ডাকি) ৬ বছরের নির্বাসন জীবন শেষে সামরিক রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে যখন দেশে ফিরে আসেন তখন আমার জন্ম হয় নাই। তবে বিভিন্ন লেখা থেকে এবং রাজনৈতিক সিনিয়রদের কাছ থেকে শুনেছি তখন চারদিকে লাখো কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল-
“শেখ হাসিনা ভয় নাই,
আমরা আছি লাখো ভাই।”


কিংবা


“ঝড়-বৃষ্টি-আঁধার রাতে
আমরা আছি তোমার সাথে।”


আপনজনকে বুক দিয়ে আগলে রাখার বা রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা-প্রতিশ্রুতির সে শ্লোগান নিজ চক্ষে অবলোকনের সৌভাগ্য আমার হয় নাই।


কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দেখেছি কীভাবে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত শক্তিশালী গ্রেনেড আর গুলির সামনে দাঁড়িয়ে মানববর্ম তৈরী করে বুক দিয়ে আগলে রেখে আপার সেই লাখো ভাইয়েরা আপাকে রক্ষা করেছিলেন। একটিবারের জন্য সেই মুহূর্তে তাঁদের নিজের জীবনের কথা, পরিবারের কথা কিংবা অতি আদরের সন্তানের কথা মাথায় আসে নাই। সেই মুহূর্ত তাঁদের একটাই লক্ষ্য ছিল ভয়বহ সেই গ্রেনেডের, গুলির আঘাত থেকে আপাকে রক্ষা করা। নিজের জীবনে বিপন্ন করে তাঁরা সেই কাজটিই তখন করেছিলেন।



লেখক :গুলশাহানা ঊর্মি


পৃথিবীর ইতিহাসে এমন মানববর্ম কোন নেতার জন্য তৈরী হয়েছিল কিনা আমার জানা নাই। আপার প্রতি তাঁর দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকবৃন্দের ভালবাসা এর আগেও অনেকবার প্রমাণিত হয়েছে। এ যেন রূপকথার গল্পের সেই ভাইদের মত যারা মরিয়া ছিল তাঁদের পারুল বোনকে রক্ষা করা জন্য।


এই ছবিটির দিকে যতবার তাকাই শ্রদ্ধা-ভালবাসা-কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে যায় তাঁদের প্রতি, যাঁরা সেদিন তাঁদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে ‘পারুল বোন’ কে বাঁচিয়েছিলেন। ছবিটি দেখলে এক অপার্থিব-স্বর্গীয় ভালবাসার রেশ জড়িয়ে পড়ে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ে। অবাক হয়ে ভাবি, সত্যি এমন করেও কী কাউকে ভালবাসা যায়! আমার মতে একজীবনে বঙ্গবন্ধুকন্যা’র সবচেয়ে বড় অর্জন মানুষের ভালবাসা, আমাদের আপাও নিশ্চয় এমনটিই ভাবেন।


যুগ যুগ ধরে আওয়ামী লীগকে, বঙ্গবন্ধুককে, বঙ্গবন্ধু’র রক্তের উত্তরসূরিদের চিরতরে নিশচিহ্ন করার জন্য নানা দিক থেকে মরণঘাতী আঘাত এসেছে। বারবার ঘাতকেরা মরণকামড় দিয়েছেন, তারপরও আল্লাহতায়ালা নিজে সুরক্ষিত করেছেন আমাদের আপাকে। আমি বলব- এখনও আপাকে জীবন দিয়ে রক্ষা করার জন্য শুধু লাখো নয়, কোটি ভাই সদাপ্রস্তুত আছেন। আর এভাবেই কোটি ভাইয়ের ভালবাসায় সুরক্ষিত থাকবেন ‘আমাদের একটি পারুল বোন’, আমাদের প্রাণপ্রিয় আপা।


গুলশাহানা ঊর্মি
বিসিএস (তথ্য)
সংযুক্তিতে- প্রেস উইং, প্রধানমন্ত্রী’র কার্যালয়।

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com