শিরোনাম
ভালো থাকুক আমার প্রিয় বাবা, ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২১, ১২:৩৮
ভালো থাকুক আমার প্রিয় বাবা, ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা
নাঈম কামাল
প্রিন্ট অ-অ+

দুই অক্ষরের একটি শব্দ বাবা। কিন্তু এই শব্দটির ব্যাপকতা এতোটা বেশি যা লিখতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শেষ হয়ে যাবে, হাত ব্যথা হয়ে যাবে তবুও লিখে শেষ করা যাবে না। শিশু থেকে বৃদ্ধকাল সবসময়ই বাবারা সন্তানের মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকে। সন্তানকে একটু ভালো রাখার জন্য, সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাবারা কি না করে। নিজের সবটুকু প্রচেষ্টা ঢেলে দেয় সন্তানকে মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য। অন্যদের (চাচা, মামা, এলাকাবাসী) কাছে আমার বাবা সহজ-সরল হলেও আমার কাছে তিনি পৃথিবীর সেরা বাবা। আজ সেই বাবাকে নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করছি।


মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। আসলে মধ্যবিত্ত না বলে উচ্চ নিম্নবিত্ত বলাটাই মনে হয় উত্তম হবে। ছোটবেলা থেকেই আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যেই বড় হতে হয়েছে। যদিও এখনো বড় হয়ে উঠতে পারিনি। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমাদের সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিবারকে কিভাবে পরিচালনা করছেন প্রিয় বাবা। মাথার ঘাম পায়ে পেলে কিভাবে আমাদেরকে মানুষ করে গড়ে তোলার জন্য নিজের শরীরের সাথে যুদ্ধ করে গেছেন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। নীরবে সয়ে গেছেন সকল কষ্ট, হাজারো যন্ত্রণা। বিসর্জন দিয়েছেন নিজের সখ আহ্লাদ।


বাবা কতটা কষ্ট সহ্য করেছেন (এখনো করছেন) তা নিজের চোখে দেখেছি। মাঝে মাঝে বাবার সাথে মাঠে কাজ করতে যেতাম। কাজ করার সময় সবচেয়ে সহজ কাজটাই করতে দিতেন বাবা। ভারি কোন বোঝা নিতে চাইলেও তা নিতে দিতেন না প্রিয় বাবা। যখন সূর্যের তাপ একটু বেশি পড়তো তখন রোদে থাকতে দিতেন না, বলতেন গাছের ছায়ায় গিয়ে জিরিয়ে (বিরতি) নে। রোদ কমলে আসিস। যখন মাথায় বোঝা নেয়ার প্রয়োজন হতো সবচেয়ে ছোট বোঝাটাই দিতেন আমাকে। একটু বড় বোঝা নিতে চাইলেও দিতেন না তিনি। এ নিয়ে মাঝে মাঝে রাগারাগিও হতো প্রিয় বাবার সাথে।


তখন এই কষ্ট বুঝতে না পারলেও এখন ঠিকই বুঝতে পারছি বাবা কষ্টগুলোকে কতটা লুকিয়ে রাখতেন। সারাদিন মাঠে কাজ করে বিকেলে গরুর পরিচর্যা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। বিকেলের কাজ সেরে মাঝে মাঝে কন্ট্রাকে (চুক্তিতে) কাজ নিয়ে রাতের ১২টা-১টা পর্যন্তও কাজ করেছেন আমাদেরকে ভালো রাখার জন্য। বাবার এই আত্মত্যাগ কখনো নিজের মনে দাগ কাটতো না। কারণ তখন নিজের চাহিদাটাকেই বড় করে দেখা হতো। চাহিদা পূরণ করার ইচ্ছে থাকলেও সব চাহিদা পূরণ করার যে সামর্থ্য বাবার ছিলো না তা কিন্তু তখন বুঝতাম না। যে কারণে যখন-তখন রাগ করে বসতাম বাবার সাথে। বাবা তখন চুপ করে থাকতেন, অনেক সময় বুঝানোর চেষ্টা করতেন কিন্তু এই অবুঝ মন কি আর তখন এসব বুঝতো। মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করতেন প্রিয় বাবা।


এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছি যদিও বাবার কাছে সেই ছোটই রয়ে গেছি। এখন নিজের খরচ নিজে চালাতে পারলেও সংসারের ভারটা এখনো বাবার কাঁদেই আছে। সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী এখনো বাবাই কিনেন। আমরা যখন কিনতে চাই বাবা তখন বাধা দিয়ে বলেন আমি যতদিন আছি ততদিন তোদের খরচ করতে হবে না। তোরা শুধু তোদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা কর। রমজান মাসের ফিতরাটা এখনো বাবা দেন। যে সময়টাতে বাবার মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড করে দেয়ার কথা আমার সেই বয়সটাতেও মাঝে মাঝে মোবাইলে ফ্লেক্সিলোডও করে দেন বাবা। সময়-অসময়ে কল দিয়ে খোঁজ নেন। কেমন আছি, কি করছি, খেয়েছি কি না জানতে চান। মাঝে মাঝে বিরক্ত হই বাবার ফোনে কিন্তু বাবা তো বাবাই। তারপরেও নিয়মিত কল দিয়ে খোঁজ নেন প্রিয় বাবা।


জানি শুধু আমার বাবা নয়, পৃথিবীর সকল বাবাই এমন। সত্যি অনেক বেশি ভালবাসি প্রিয় বাবাকে। কখনো বলা হয়নি কতটা ভালবাসি আমার সহজ-সরল প্রিয় বাবাকে। ভালো থাকুক নীরবে হাজারো কষ্ট সয়ে যাওয়া আমার প্রিয় বাবা, ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা।


লেখক: সহ-সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com