মে মাসে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৪
মে মাসে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি
কিরণ শেখ
প্রিন্ট অ-অ+

আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠাতে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এই যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোর সাথে বৈঠকও করছে বিএনপি। এসব বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দলটি চূড়ান্ত আন্দোলনের যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তও নিয়েছে। আর এই চূড়ান্ত আন্দোলন মে মাসে শুরু করবে বলে জানা গেছে।



বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলমান যুগপৎ আন্দোলন বর্তমানে যেভাবে চলছে তা মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে। এরপরে সরকার পতনে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে। তবে দলটি এবার রমজানের পরে কিংবা ঈদের পর সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বলতে চাচ্ছে না। কারণ বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ রমজান এবং ঈদের পর অনেকবার আন্দোলনের কথা বলেছেম। কিন্তু সেগুলো বাস্তবে রূপ নেয়নি। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ওই আন্দোলন নিয়ে ব্যঙ্গা করেছে। সেজন্য তারা এবার বলছে, মে মাস থেকে সরকার পতনে রাজপথে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে বিএনপি।



সরকার পতনে চূড়ান্ত আন্দোলনে কি ধরণের কর্মসূচি দেয়া হবে তা নিয়ে এসব বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। অনেকে হরতাল এবং অবরোধ কর্মসূচির কথা বলেছেন। আবার অনেকে ঢাকা ঘেরাও দিয়ে রাজপথ দখল করে বসে পড়ার কথা বলছেন। তবে কি ধরণের কর্মসূচি দেয়া হবে সেবিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।


গত ৩০ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। বৈঠকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরও নতুন কিছু সাদামাটা কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন কর্মসূচির মধ্যে গণঅনশন, মানবপ্রাচীর ও গণমিছিল হতে পারে। ৪ ফেব্রুয়ারি যুগপৎ কর্মসূচির বিক্ষোভ সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আর মে মাসে কঠোর কর্মসূচির পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা হয়।



বৈঠকের বিষয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সরকারের পতন ঘটাতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর চলমান যুগপৎ আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন কর্মকৌশল নিয়েও আলোচনা হয়েছে।



এরআগে গত ২৭ জানুয়ারি সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলন আরো জোরদারে সিদ্ধান্ত নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটির সাথে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে সরকারের পতনের আন্দোলনকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির নেয়া পূর্বের কর্মসূচিগুলো পর্যালোচনা করা হয় এবং পরবর্তীতে কি কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে সেবিষয়েও আলোচনা হয়।


এবিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলন আরো জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করবার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা যেন আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি সে ব্যাপারেও একমত হয়েছি।


পরে গত ২৯ জানুয়ারি চলমান যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। আর ২ ফেব্রুয়ারি গণফোরামের একাংশের সাথে বৈঠক করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি।


বৈঠকের বিষয়ে গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, আমরা ঐক্যমতে পৌঁছেছি যে, চলমান আন্দোলন আমরা একসাথে করব, আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। কোনো অবস্থাতে আমরা পিছ পা হব না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন চাই। এটা অর্জনের জন্য একসাথে কাজ করছি।


কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বিবার্তাকে বলেন, এখন যুগপৎ আন্দোলন চলছে। আর যুগপৎ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি রমজানের পরে আসবে।


জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের দ্বারপ্রান্তে আছি। সেই আন্দোলন সামনে আপনারা দেখতে পারবেন। তবে এই কর্মসূচি কবে নাগাদ আসবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।


এবিষয়ে ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বিবার্তাকে বলেন, রমজানের পর যুগপৎ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


কি ধরণের কর্মসূচি আসতে পারে জানতে চাইলে সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচি ‘হরতাল’ আসতে পারে।


প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির গণসমাবেশে ব্যর্থ, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, অনির্বাচিত সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা বাস্তবায়ন এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি।


এরই অংশ হিসেবে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুর বিভাগে এবং ২৪ ডিসেম্বর সারাদেশে গণমিছিল করে বিএনপি। পরে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি হিসেবে ১১ জানুয়ারি সারাদেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগীয় সদরে গণঅবস্থান কর্মসূচি এবং ১৬ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে, ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ ধাপে কর্মসূচি করেছে বিএনপি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। আর ৪ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ধাপে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।


বিবার্তা/ কিরণ/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com