শিরোনাম
'এরশাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকেই গণতন্ত্র নিপাত যেতে শুরু করেছে'
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:০৩
'এরশাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকেই গণতন্ত্র নিপাত যেতে শুরু করেছে'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও আমাদের বলতে হচ্ছে, স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর হতে পারে না।


তিনি বলেন, এখন রাস্তায় নেমেই কেউ শ্লোগান দিতে পারে না স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। এ থেকেই বোঝা যায় দেশের মানুষ কতটা গণতন্ত্র ভোগ করছে। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সাংবিধানিকভাবেই রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেন পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পল্লীবন্ধুর ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকেই স্বৈরাচারের উত্থান আর গণতন্ত্র নিপাত যেতে শুরু করেছে।


সোমবার জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় ময়মসসিংহের বিশ্বব্যাংকের সাবেক কনসাল্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মনির আহমেদ গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।


জিএম কাদের বলেন, ১৯৮২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হয়ে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। আবার ১৯৯০ সালে সংবিধান সমুন্নত রেখে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংবিধানিক নিয়মনীতি মেনেই ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন।


গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, দেশে সাংবিধানিকভাবেই একনায়কতন্ত্র চলছে। একটি দলের প্রধান সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দেশের নির্বাহী বিভাগের প্রধান হন তিনি। আবার সরকার প্রধানের সিদ্ধান্তের বাইরে দলীয় সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারে না, তাই সরকার প্রধান যা বলেন তার বাইরে কিছুই হতে পারে না। এতে আইন সভাও সরকার প্রধানের অধীনে। অপরদিকে বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে শতকরা ৯৫ ভাগই সরকার প্রধানের অধীনে। তাই রাষ্ট্রে প্রধান তিনটি বিভাগ এক ব্যক্তির অধীনে থাকায় এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, যাকে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র বলা যায়।


জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রবেশদ্বার। তাই সঠিকভাবে নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ কারণেই জাতীয় পার্টি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন প্রনয়নের দাবি করে আসছে। জনগণের কাছে সরকারের সার্বক্ষণিক জবাবদিহিতায়ই হচ্ছে গণতন্ত্রের চর্চা। কিছু মানুষ অন্যায়ভাবে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বৈরাচার বলেন। কিন্তু কেনো স্বৈরাচার বলে তার উত্তর দিতে পারেন না। তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চেয়ে ছোট স্বৈরাচার কে?


তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণ। ১৯৯০ সালে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মী না হলে পরীক্ষায় প্রথম হয়েও কেউ চাকরি পায়না। সরকারি দলের সদস্য না হলে কেউ ব্যবসা করতে পারে না। তেমনিভাবে সরকারি দলের হলে এক ধরনের আইন আর বিরোধীদের জন্য আলাদা আইন। ধনী ও গরীবদের মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে, ধনীদের জন্য এক আইন আর গরীবদের জন্য অন্য আইন।


আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধে মূল চেতনা ধংস করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকে গণতন্ত্রের পতন হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলময় রাজনীতির পতন শুরু হয়েছে। আর উত্থান হয়েছে স্বৈরতন্ত্রের।


জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনীতি ছিলো গণমানুষের জন্য কল্যাণকর রাজনীতি। তিনি ঐতিহাসিক ঔষধ নীতি করেছেন। দেশের মানুষ এখন স্বল্পমূল্যে মানসম্মত ওষুধ কিনতে পারছে। অপরদিকে, দেড় শতাধিক দেশে বাংলাদেশ এখন অসুধ রফতানী করছে। এছাড়া উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে দেশের মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যার সুফল আজীবন দেশের মানুষ উপভোগ করবে। পল্লীবন্ধু কল্যাণময় রাজনীতির অসংখ্য কীর্তি রেখে গেছেন। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষি মিশনে সৈন্য প্রেরণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল এর বিরোধীতা করে তিন দিনের হরতাল দিয়েছিলো। আজ প্রমাণ হয়েছে পল্লীবন্ধুর প্রতিটি সিদ্ধান্তই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর। যার সুফল দেশের মানুষ আজীবন ভোগ করবে। তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণমানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় আজীবন বেঁচে থাকবেন তার কীর্তির মাঝে।


এসময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের ৯০ ভাগ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করেছেন। যতদিন বাংলাদেশে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব থাকবে ততদিন কেউ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক হয়ে অপচেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতায় না থেকেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলো। আবার মাত্র ১৩ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে বিএনপি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু, জাতীয় পার্টি ৩১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকেও অত্যন্ত সুসংহত রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাঠে আছে। কারণ, জাতীয় পার্টি হচ্ছে দেশের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার রাজনৈতিক প্লাটফর্ম।


জাতীয় পার্টির যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবিধান সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, এডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, জহিরুল ইসলাম জহির, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদের এমপি, জহিরুল আলম রুবেল, ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ওমর, এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান।


বিবার্তা/বিপ্লব/জেএইচ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com