শিরোনাম
কঠোর হুশিয়ারি সত্ত্বেও বিক্রি হচ্ছেন জাপা প্রার্থীরা
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:২৭
কঠোর হুশিয়ারি সত্ত্বেও বিক্রি হচ্ছেন জাপা প্রার্থীরা
সংগৃহীত ছবি
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

কঠোর হুশিয়ারি সত্ত্বেও একের পর এক জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাড়াচ্ছেন। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সিংহভাগস্থানেই নিজ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন জাপা প্রার্থীরা। শুধুমাত্র সংসদ নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও সরকার দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নিজ মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে বিক্রি হওয়ার অভিযোগ।


বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারদলীয় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পথ তৈরি করে দিতে এই সমঝােতার খেলায় প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা প্রার্থিতা গােপনে প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন ।


দশম জাতীয় নির্বাচন থেকেই দেশে সমঝোতার নির্বাচন শুরু হয়েছে। সেই সমাঝোতার ভিত্তিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বেশকয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়। রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) যশোর সদর উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থনে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম-আহবায়ক মো. নুরুল আমিন। তিনি শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) গভীর রাত পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কাকরাইল কার্যালয়ে অবস্থান করলেও সকাল থেকে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।


পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রবিবার সকাল দশটায় বিমানযোগে যশোর গিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থনে নিজ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন নুরুল আমিন। পরে সাথে সাথেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তৃণমূল পর্যায়েও চলছে একই চিত্র। বিভিন্ন ইউপি নির্বাচনেও সমাঝোতা করে নির্বাচন থেকে সরে দাড়াচ্ছেন জাপা প্রার্থীরা। পার্টি থেকে বহিস্কার করা হচ্ছে স্থায়ীভাবে। তাতেও লাগাম টেনে রাখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিব্রত জাপার শীর্ষ নেতারা।


এর আগে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) ও ঢাকা-১৪ আসনের উপ-নির্বাচনের সমঝােতা ‘ওপেন সিক্রেট’। এই দুটি আসনে বিএনপিবিহীন ভােটে প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা দলের অগােচরেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ভােটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। পরপর পাঁচটি আসনে জাপার প্রার্থীরা বিক্রি হয়ে গেছেন বলে খােদ দলটির নেতাকর্মীদেরই মুখে-মুখে চাউর।


এদিকে, কুমিল্লা-৫ আসন জাপার প্রার্থী মাে. জসিম উদ্দিন ও ঢাকা-১৪ আসন দলীয় প্রার্থী মােস্তাকুর রহমান মােস্তাক। দলকে কিছু না জানিয়েই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ভােট থেকে সরে যান খোকন, নুরুল আমিন, জসিম ও মােস্তাক। দলকে কিছু না জানিয়ে গােপনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় এদের সবাইকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারও করা হয়।


২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে জাপার প্রার্থী ছিলেন দশম সংসদের এমপি ও জাপা নেতা মােহাম্মদ নােমান। জাপার সঙ্গে আসন-সমঝাতার ভিত্তিতে এই আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে ভােটের কয়েকদিন আগে হঠাৎ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাপার নােমান। এতে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পথ সুগম হয় ‘আপেল’ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের।


জানা যায়, কয়েক কােটি টাকার বিনিময়ে ভােটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান নোমান। পরবর্তীতে এ ঘটনাটি দেশজুড়ে তুমুল আলোচিত হয়। অবশ্য ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে জাপার প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে লড়াই করে গেছেন।


রবিবার যশোর সদর উপজেলা নির্বাচন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে জেলা জাপার যুগ্ম আহবায়ক ও দলীয় প্রার্থী মো. নুরুল আমিন বিবার্তাকে জানান, আমি ব্যক্তিগত ও সার্বিক পরিবেশ বিবেচনা করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকারি দলের কোনো চাপ বা কোনো আর্থিক লেনদেন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এবিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।


একের পর এক জাপার প্রার্থীতা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া বিবার্তাকে বলেন, অব্যাহত মনোনয়ন প্রত্যাহার নিয়ে আমরা অস্থিরতায় আছি। দলীয় প্রার্থীরা নিজ মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে আমরা দেখেছি, প্রতিটি উপনির্বাচনে বা স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রথমে আমাদের প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে, পরে অর্থের প্রলোভন, ভয়ভীতি ও শক্তিপ্রয়োগ করে। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে জনগণের মাঝে একটি স্বাভাবিক ধারণা সৃষ্টি হয়ে গেছে। নির্বাচনের পরিবেশ ও ভোটাধিকার নেই। তাই আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাড়াচ্ছেন বলে আমি মনে করি।


জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় প্রশাসনও নিরপেক্ষ থাকছেন না। ক্ষমতাসীনদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আমাদের প্রার্থীদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছেন। প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও তারা এতে কোনো কর্ণপাত করছেন না।


দলীয় প্রার্থীতা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বিবার্তাকে বলেন, আমাদের দলীয় নির্বাচনী বোর্ডের মাধ্যমে মনোনয়ন দেয়া হয়। দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সময় জানতে চাওয়া হয় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবেন কিনা? প্রার্থীরাও মাঠে থাকার প্রতিজ্ঞা করে। তারপরো কি কারণে, কিসের ভয়ে, কোন লোভে তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন! এগুলো ঠিক নয়।


তিনি বলেন, আমি মনে করি ভবিষ্যতে যাতে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রত্যাহার করতে না পারে সেজন্য লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।


বিবার্তা/বিদ্যুৎ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com