শিরোনাম
নানা সফলতা ও ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ছাত্রদলের মেয়াদ
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:৪৮
নানা সফলতা ও ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ছাত্রদলের মেয়াদ
ফাইল ফটো
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর। অথচ এই মেয়াদে পূর্ণাঙ্গ কমিটিই গঠন করতে পারেনি দলটি। ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে তারা। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগ নেননি বলে অভিযোগ পদবঞ্চিত নেতাদের পক্ষ হতে।


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজসহ রাজধানীর অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করতে পারেনি কমিটি। আর কমিটি নিয়ে রয়েছে পদ বাণিজ্যেরও অভিযোগ।


২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি এবং ইকবাল হোসেন শ্যামল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বর্তমান এ কমিটি বিভিন্ন সাফল্য দেখাতে পারলেও পিছু ছাড়েনি নানান বিতর্ক। এসব বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে। অনেক পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী তাদের রাজনৈতিক পরিচয় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য তারা বিগত দিনে অনশন, লিখিত আবেদনসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কাছে ধরণা ধরেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।


সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে বেশিরভাগ কমিটি গঠন করলেও এখানেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিভিন্ন ইউনিটর কমিটি নিয়ে উঠেছে বাণিজ্যের অভিযোগ। যা বিএনপির শীর্ষ নেতারাও অবহিত আছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত হয়েছে একাধিক তদন্ত কমিটি। যদিও এ তদন্ত রিপোর্ট আর আলোর মুখদেখেনি।


বর্তমান এ কমিটির দায়িত্বে থাকা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা কমিটিকে সফল বললেও তা মানতে নারাজ ছাত্রদলের অনেক নেতা। বর্তমান নেতৃত্বপূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার আশ্বাস দেয়ার আশ্বাস দিলেওবাস্তবেতারা পারেনি। যে কমিটি দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারে না, সেই কমিটিকে সফল বলা যায় না বলে জানান ছাত্রদলের একাধিক নেতা।


সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা অভিযোগ করেন, আমাদের অনেক সিনিয়র নেতা আছেন যারা ২০টির অধিক মামলার হুলিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন তাদেরকেও মূল্যায়ন করা হয়নি। আজকে যদি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারতো তাহলে পদহীনভাবে তাদের থাকতে হতো না।


সারাদেশে সংগঠনকে আরো গতিশীল ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়িত করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১০ সাংগঠনিক টিম গঠন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কমিটি গঠনে সাংগঠনিক টিমের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ সৃষ্টি হয়েছে।


নেতাকর্মীদের অভিযোগ, প্রত্যেকেই নিজ নিজ বলয়ের থেকে নেতা বানানোর প্রতিযোগিতা শুরু করেন। অনেকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমেও অযোগ্যদের হাতে নেতৃত্বভার তুলে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।


রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ও কলেজে দলের ত্যাগী ও নির্বাসিত নেতারা একাধিকবার কমিটি করার বিষয়ে তাগাদা দিলেও কর্ণপাত করেননি ছাত্রদলের শীর্ষনেতারা, এমনটা অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন কলেজের নেতারা।


এদিকে, কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে নতুন কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। নতুন কমিটির শীর্ষ পদে আসতে ইতিমধ্যে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন পদ প্রত্যাশী নেতারা। বিএনপির হাইকমান্ডও গত ৩ জুন ছাত্রদলের কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় সংগঠনের ১২ নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়। সে বহিস্কারাদেশ এখনো বহাল।


কমিটির পদ থেকে বঞ্চিতরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ করার অজুহাতে কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছে এ মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি। বর্তমান নেতৃত্ব কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। এতে দল ও সংগঠনের ক্ষতি হবে। সংগঠনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে। নতুন নেতৃত্বের পথ তৈরীর পথকে বাধাগ্রস্ত করা হবে। তাই তারা নতুন কমিটি গঠনের জন্য সংগঠনের অভিভাবক তারেক রহমানের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।


সংগঠনের শীর্ষ পদে আসতে ইতিমধ্যে সংগঠনের সিনিয়র নেতারা শোডাউন দিচ্ছেন। নিজেদের ত্যাগ ও যোগ্যতা তুলে ধরছেন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে।


ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, নতুন কমিটির সভাপতি পদে যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সহ-সভাপতি আশরাফুল ফকির লিঙ্কন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর, রহমান আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, যুগ্ম সম্পাদক শাহনেওয়াজ, তানজিল হাসান, মাহিনউদ্দির রাজু প্রমুখ।


সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অথবা স্বল্প সময়ের জন্য যদি ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি করা হয়, সেক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনকেও দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলে সূত্রটি জানায়।


সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন- যুগ্ম সম্পাদক নিজামউদ্দিন রিপন, মারুফ এলাহী রনি, রনি প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, কেন্দ্রীয় নেতা শ্যামল মালুম, রিয়াদ ইকবাল প্রমুখ।


ছাত্রদলের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে সভাপতি পদপ্রার্থী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জুয়েল মৃধা এ কমিটি প্রসঙ্গে বিবার্তাকে বলেন, সারাদেশে কমিটি করলেও এ কমিটিকে সফল বলা যায় না। দুই বছরেও কমিটিকে পূর্ণাঙ্গরূপ দিতে পারেনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর অধিকাংশ কলেজ কমিটি করতে পারেনি।


তিনি বলেন, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার জন্য তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করেছিলেন। এ কমিটিকে পূর্ণাঙ্গরূপ না দেয়ায় রাজপথের অনেক নেতাকর্মীরা হতাশ হয়েছে। আমরা ছাত্রদলের অভিভাবক তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা বিবেচনা নিয়ে খুব শীঘ্রই আমাদের পরিচয় নিশ্চিত করবেন।


জুয়েল আক্ষেপ করে বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিতে গিয়ে ২২টি মামলা চলমান। মাথায় ১৩টি সেলাই হয়েছে, কপালেও সেলাই আছে। ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। অথচ কমিটিতেই স্থান পেলাম না।


ছাত্রদলের পদবঞ্চিত আরেক নেতা শেখ আল ফয়সল বলেন, সারাদেশে কমিটি করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে না পারা অবশ্যই এ কমিটির ব্যর্থতা। তারা আরেকটু সিরিয়াস হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া সম্ভব হতো। আমি বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ চেয়েছিলাম। ঢাবি শাখার আহবায়ক পদও চেয়েছিলাম। কিন্তু এ দুটি বছর আমাকে এবং আমার মতো অনেক নেতাকে পদহীনভাবে চলতে হয়েছে।


কমিটির দুই বছরের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, মূল্যায়ন করবে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আমি আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আমার চেষ্টার কোন কমতি ছিলোনা। কমিটি বানিজ্যে অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্যামল বলেন, ছাত্রদল একটি বড় ছাত্র সংগঠন। এখানে বিভিন্ন অভিযোগ আসতেই পারে। তবে, এর সত্যতা যাচাই করা উচিত। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করতে পারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চেস্টা করেছি কমিটিকে পূর্ণাঙ্গরূপ দিতে। নানা প্রতিকূলতার কারণে পারিনি। তবে, এখনও চেষ্টা অব্যাহত আছে।


ছাত্রদলের দুই বছরের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে সংগঠনের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বিবার্তাকে বলেন, আমরা সিংহভাগ সফল। করোনার মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত ছিলো। তারপরো আমরা তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেছি। তৃণমূলের ১৮০০ ইউনিটের মধ্যে ১৫০০ টি ইউনিটে কমিটি করেছি। কিছু কিছু জায়গায় একযুগ যাবত কমিটি ছিলো না, সেসব স্থানে কমিটি করেছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।


পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করতে পারার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচিত হবার ৩ মাসের মধ্যে ৬০ জন নিয়ে কমিটি করি। পরবর্তীতে রাজনীতি স্তিমিত হওয়াসহ নানান কারণে আমরা তা পারেনি। তবে, আমরা চেষ্টার কমতি ছিলো না।


কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন সভাপতি বলেন, কিছু স্থানে কমিটি করতে গিয়ে যারা কমিটিতে আসতে পারেনি তারা নাখোশ হয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে। অভিযোগকারীদের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি তদন্ত কমিটিও করা হয়, কিন্তু এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। ঢাকার কলেজগুলোর কমিটি না করতে পারা প্রসঙ্গে খোকন বলেন, কলেজগুলো বন্ধ থাকায় কমিটি করা সম্ভবপর হয়নি। সংগঠনকে গতিশীল রাখতে শুধু ছাত্রদল নয়, সব সংগঠনেরই নিয়মিত কমিটি হওয়া দরকার বলেও জানান।


বিবার্তা/বিদ্যুৎ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com