শিরোনাম
যে গ্রামে হঠাৎ ঘটতে পারে বিস্ফোরণ
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৯:৫৬
যে গ্রামে হঠাৎ ঘটতে পারে বিস্ফোরণ
বিবাতা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ছবির মতো সুন্দর একটি গ্রাম। সুইজারল্যান্ডের নাম শুনলেই সবাই কল্পনার জগতে হারিয়ে যান নিশ্চয়ই! সুইজারল্যান্ডের কিনডের উপত্যকায় আছে ছোট এক গ্রাম মিতহোলজৎ। প্রকৃতির সবটুকু রূপ ও রস যেন ঢেলে দিয়েছে এই স্বর্গকূলে।


ছোট এই গ্রামে বসবাস করে মাত্র ১৭০টি পরিবার। পাহাড়ের উপরে একই গড়নে তৈরি করা হয়েছে বাড়িগুলো। দেখতেও বেশ নান্দনিক। প্রতিটি বাড়ির একতলায় গবাদি পশুর ঘর আর দোতলায় নিজেদের থাকার জায়গা। আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে প্রায় সব গ্রামেই এই কায়দায় গড়ে উঠেছে ঘর-বাড়ি।


প্রতিবছর হাজারো পর্যটক ছুটি কাটাতে যান এই গ্রাম। তবে এই গ্রামবাসী প্রতিটি মুহূর্তেই মৃত্যুর কথা ভেবে কপালে ভাঁজ ফেলেন। প্রতি মুহূর্তই তাদেরকে মৃত্যুর হাতছানি দিয়ে ডাকে। কারণ পায়ের তলে অস্ত্রভাণ্ডার ও অসংখ্য বিস্ফোরক নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।


তারা আজও ভোলেনি ৭৪ বছর আগে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর এক ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সুইস সেনাদের অস্ত্রভাণ্ডার ছিলো এই পাহাড়ি গ্রাম। মাটির তলায় গোপনে তারা এই অস্ত্রভাণ্ডার পরিচালনা করত। তাতে মজুত ছিলো প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক।


১৯৩৯-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলে। গোলা-বারুদের রমরমা দেখেই দিন কাটিয়েছেন এই এলাকার বাসিন্দারা। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা হলে বাসিন্দারা ভেবেছিলেন আর হয়তো কোনো বিস্ফোরণ বা গোলাগুলির ঘটনা ঘটবে না।


তবে তাদের সেই স্বপ্ন এক রাতে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালের এক গভীর রাতে আচমকা কেঁপে ওঠে গোটা গ্রাম। সবাই মনে করেছিলেন ভূমিকম্প। তবে বাইরে বেরিয়েই স্তব্ধ হয়ে যান তারা। চারদিক দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিলো। প্রাণে বাঁচতে দৌড়াদৌড়ি করা শুরু করেন গ্রামবাসীরা।


এক রাতের মধ্যেই পুরো গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলো। প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন অনেকেই। রাতারাতি গ্রামের সব ঘর-বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলো। পরে জানা যায়, অস্ত্রভাণ্ডারে মজুত বিস্ফোরকের কারণেই আচমকা এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।


সরকারি হিসাব অনুযায়ী, সাত হাজার টন বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটেছিলো সেদিন। এর পরের বছর ১৯৪৮ সালে সুইস সরকার এই গ্রামকে নিরাপদ ঘোষণা করে। এরপর নতুনভাবে বসতি গড়ে তোলা হয়। একে একে বাসিন্দারা গ্রামে ফিরে আসেন।


আর কোনো বিপদ হবে না এই ভেবে গ্রামে পুনরায় বসবাস শুরু করেন তারা। অনেকেই সঞ্চয়ের অনেকটা খরচ করে স্বপ্নের বাড়ি বানিয়েছিলেন। তবে আবারো তাদের দুর্ভাগ্য নেমে আসে। ২০১৮ সালে সুইস সরকার এই গ্রামে ফের প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরকের হদিশ পায়।


সরকারি হিসাব মতে, এখনো সাড়ে তিন হাজার টন বিস্ফোরক আছে গোপন অস্ত্রভাণ্ডারে। এমনই জানিয়েছে সুইস সরকার। গ্রাম খালি করে বিস্ফোরক অন্যত্র সরিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করার কথাও ওই সময়ে ঘোষণা করে দেয় সরকার। তবে এবার ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ গ্রামবাসীদের একাংশ।


সুইস সরকারের হিসাব অনুযায়ী, ১০ বছর লাগবে ওই পরিমাণ বিস্ফোরক নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে। আর এই ১০ বছর গ্রামবাসীদের ভিটেছাড়া হয়েই কাটাতে হবে। এর জন্য ক্ষতিপূরণ দিতেও রাজি সুইস সরকার। তবে রাজি হননি গ্রামবাসীদের একাংশ। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তারা পড়ে আছেন এই গ্রামে।


বিবার্তা/বিদ্যুৎ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com